তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলার হৃদপিণ্ড ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন  
https://parstoday.ir/bn/news/iran_book-i137708-তেহরানের_আন্তর্জাতিক_বইমেলার_হৃদপিণ্ড_ফিলিস্তিন_প্যাভিলিয়ন
তেহরানে চলছে ৩৫ তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। একজন ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্র বলেছেন: তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলার হৃদপিণ্ডে রয়েছে ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন। আর এ থেকেই বোঝা যায় ইরানের হৃদয়ে অবস্থান করছে ফিলিস্তিন ইস্যু। 
(last modified 2025-08-14T12:02:56+00:00 )
মে ১৬, ২০২৪ ২১:০৪ Asia/Dhaka
  • তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলার হৃদপিণ্ড ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন
    তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলার হৃদপিণ্ড ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন

তেহরানে চলছে ৩৫ তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। একজন ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্র বলেছেন: তেহরানের আন্তর্জাতিক বইমেলার হৃদপিণ্ডে রয়েছে ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন। আর এ থেকেই বোঝা যায় ইরানের হৃদয়ে অবস্থান করছে ফিলিস্তিন ইস্যু। 

মায়াজ দাখিল নামের এই ফিলিস্তিনি ইরানের ইস্ফাহান আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তেহরানের বইমেলার ফিলিস্তিনি প্যাভিলিয়নে তিনি ইরানের মেহের বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন: এই প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে ফিলিস্তিনি ছাত্রদের সম্মিলিত এক কমিটির সহায়তায়। ফিলিস্তিন ইস্যু সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া এবং ইন্টারনেটে ফিলিস্তিন সম্পর্কে ইহুদিবাদী ইসরাইলের তৈরি করা নানা সন্দেহ ও গুজবের জবাব দেয়ার লক্ষ্যে এটি বসানো হয়েছে। 

তিনি আরও বলেছেন, ইরানিরা অত্যন্ত উন্নত সংস্কৃতির অধিকারী এবং পড়ুয়া জাতি। যারা এই মেলায় আসছেন তারা এই ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়নেও আসছেন। তাদের বিপুল সাড়া লক্ষণীয়।  ছাত্ররা ম্যাপ দেখিয়ে বুঝিয়ে দেন যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলো কিভাবে ইসরাইলের জবর-দখলের শিকার হয়েছে। মানচিত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ওপর অবরোধগুলো দেখানো হয়েছে। অনেক দর্শক আফসোস করে বলেছেন, হায় ফিলিস্তিন যদি অবরুদ্ধ না হত তাহলে আমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতাম! এই মেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়ন থেকে বোঝা যায় ইরানের হৃদয়ের কত গভীরে অবস্থান করছে ফিলিস্তিন ইস্যু! 

বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আন্দোলন ও এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ফিলিস্তিনের পক্ষে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে মায়াজ বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি কেবল একটি ইসলামী ইস্যু নয় একটি মানবীয় ইস্যুও বটে। নারী-পুরুষ বৃদ্ধ ও যুব বয়সী ও এমনকি শিশুরাও জানতে পারছে যে ফিলিস্তিনের জনগণ কত বেশি জুলুমের শিকার এবং ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। 

সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি ছাত্র মায়াজ: গাজার তাবুগুলোর মধ্যেই জীবনযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন ফিলিস্তিনিরা 

জনাব হযরত ইমাম খামেনেয়ি এই বই মেলা পরিদর্শনের সময় এখানেও এসেছেন। আমি তাঁকে বলেছি: আপনি ইরানের বিপ্লব ও মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর জবাব দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা একটি দায়িত্ব। ফিলিস্তিন ইস্যু ইরানি জাতির অন্যতম মৌলিক বিশ্বাসের অংশ। 

এই বিপ্লবী ফিলিস্তিনি ছাত্র আরও বলছিলেন, ফিলিস্তিন ১৯৪৮ সাল থেকেই যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফানের মাধ্যমে এ যুদ্ধ শুরু হয়নি! বরং সেদিন থেকে এ যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। ইসরাইল সব সময় ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করত। কিন্তু এইবার ফিলিস্তিনিরাই আল-আকসা তুফান নামক অভিযানের মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে। তারা সফলও হয়েছিল। গাজার চেয়ে দ্বিগুণ বড় ভূখণ্ড তারা মুক্ত করেছিল। এরপর ইসরাইল হামলা শুরু করে। তারা এক লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হতাহত করেছে যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি নারীরা ফিলিস্তিনের ভবিষ্যতের জন্য সন্তানদের সংগ্রামী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ফিলিস্তিনি মায়েরা জানেন যে তাদের সন্তান ফিলিস্তিনের জন্য শহীদ হবেন। ফিলিস্তিনি নারীরা জানে তাদের স্বামী ফিলিস্তিনের জন্য শহীদ হবেন।  
এই ফিলিস্তিনি ছাত্র আরও বলেছেন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বিশ লাখ ও গাজার উত্তরাঞ্চলে ৭ লাখ ফিলিস্তিনির জীবনযাত্রা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা তাবুতে বসবাস করছেন। এইসব তাবুতেই বাবা ও মায়েরা বিয়ে দিচ্ছেন তাদের কন্যা ও পুত্রদের এবং অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিয়ের উৎসব। নবজাতক শিশুদের আগমনের কান্না শোনা যাচ্ছে এইসব তাবুতেই। এইসব তাঁবুর ভেতরেই শিশুদের জন্য বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন ফিলিস্তিনি নারীরা, বিশেষ করে পবিত্র কুরআন হিফয করার ও কুরআনের আয়াত উপলব্ধির ক্লাস চালু করেছেন তারা। এমনকি একজন ছাত্র তাবুতে থেকেই মাস্টার্স ডিগ্রির সনদ পেয়েছেন। তার গাইড ও বিচারক অধ্যাপকরা তাবুতে এসেছেন এবং ওই ছাত্র থিসিস উপস্থাপন করে নম্বর ও সার্টিফিকেট পেয়েছেন। 

ফিলিস্তিনি জনগণ তাঁবুর মধ্যে ন্যূনতম  জীবন-উপকরণ নিয়ে জীবন যাপন করছেন এবং সমগ্র শক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে সংগ্রাম করছেন। আমি বিশ্বাস করি যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন এক ঐশী প্রতিশ্রুতি। আর এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমি আশাবাদী যে ফিলিস্তিন আমার ও আমার সমবয়সী প্রজন্মের যুগেই স্বাধীন ও মুক্ত হবে। আমরা যুদ্ধ পছন্দ করি না, কিন্তু আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতেই হবে।

ইরানি শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ফিলিস্তিন প্যাভিলিয়নে সম্মিলিত সঙ্গীত পরিবেশন

মায়াজ  জানান তিনি ২০১৫ সালে ইরানে আসেন পড়াশুনা করতে। ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি স্থাপত্য কলা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়ন করছেন। ইরানি জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেছেন ইরানি জাতিকে আমি চিনেছি, তারা কেবল ফিলিস্তিনি জাতিই নয় বিশ্বের সব মজলুম জাতিকেই সহায়তা দেয় ও তাদের পক্ষে সংগ্রাম করে। ফিলিস্তিন ইস্যু ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর অন্যতম। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।