প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
‘বিশ্বের মুক্তি আন্দোলনগুলো গভীরভাবে প্রভাবিত হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে’
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর থেকেই ইরান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনপদের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরানের এ ভূমিকার সাথে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে পরিচিতি করার লক্ষ্যে ‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব, কিশোরগঞ্জ’ বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। ওই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পাশাপাশি মানসম্মত লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে পার্সটুডে ডটকমে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ প্রকাশিত হলো প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত নিজামুদ্দিন সেখের লেখা।
ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণে আইয়ামে জাহেলিয়াতের শত দেবতার নিষ্পেষণ থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছিল এক অকৃত্রিম শাশ্বত ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের সে অবিকৃত রূপ থেকে মানুষ দূরে সরে গিয়েছিল। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের পাশাপাশি নৈতিক চরিত্রের চরম অধঃপতন, সাম্রাজ্যবাদী শোষক শ্রেণির হিংস্র আগ্রাসন, দেশে দেশে মুক্তিকামী মজলুম জনতার করুণ আহাজারি যখন পৃথিবীকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল ঠিক তখনই পারস্যের শাহী লৌহপ্রাচীর ভেদ করে মহান নেতা ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লব মানব জাতির সামনে আবারও সেই চিরন্তন সত্যবাণী ঘোষণা করল ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই।’ (সুরা বনি ইসরাইল ৮১)।
ইরানের ইসলামি বিপ্লব মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস জোরদারের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। মুসলিম জাতিগুলোর সচেতন শিক্ষিত সমাজের অনেকেই এটা উপলব্ধি করতে থাকেন যে পাশ্চাত্যের ব্যর্থ মতবাদ ও সংস্কৃতির কাছে মাথা বিকিয়ে দেওয়ার মতো লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না। ইসলামকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই যে মুসলিম জাতিগুলো সম্মান অর্জন করতে পারে ইরানের ইসলামি বিপ্লব তাও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তি আন্দোলনগুলো গভীরভাবে প্রভাবিত হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, তথা পশ্চিম এশিয়ায় বিপ্লবের গভীর প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুরোনো সমীকরণকে বদলে দেয়।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী বিশ্ববাসীর কাছে এটা তুলে ধরেন যে মার্কিন সরকার হচ্ছে ইসলামের এবং জাতিগুলোর স্বাধীনতা ও উন্নতির প্রধান শত্রু। যাই হোক ইসলামি বিপ্লবের এই সব আপোষহীন সংগ্রামী বৈশিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী মহলে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। এ বিপ্লব যাতে দেশে দেশে মুক্তিকামীদের কাছে রফতানি হতে না পারে সে জন্য সাদ্দামের মাধ্যমে ইরানের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় ৮ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধ। সে যুদ্ধে রাজতান্ত্রিক আরব দেশগুলোসহ বিশ্বের ২৬টি দেশ ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের সাদ্দাম সরকারকে সহায়তা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয় ইরান।
অন্যদিকে ইসলামি বিপ্লবের পর পরই মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া হিসেবে খ্যাত ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ফিলিস্তিন জাতির ন্যায্য অধিকারের জন্য সোচ্চার হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী সরকার। এ সরকার তেহরানস্থ ইসরাইলি দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে তা ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের দান করে দেয় দূতাবাস হিসেবে ব্যবহার করতে। মোটকথা বিশ্ব মজলুম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে সাম্রাজ্যবাদের প্রধান মোড়ল মার্কিন সরকার, আগ্রাসী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী সরকার যে সব কঠোর ও প্রতিরোধমুলক পদক্ষেপ নিয়েছিল বিশ্বের অন্য কোনো সরকার তেমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেনি।
অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকার কারণে ইরানের ইসলামি বিপ্লব বিশ্বের জালিম ও তাগুতি শক্তিগুলোর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আর এ কথা কে না জানে যে, ফিলিস্তিনি ও লেবাননিরা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক, মানবিক, রাজনৈতিক ও বস্তুগত ব্যাপক সাহায্য লাভ করে থাকে। আর এটি ফিলিস্তিন ও লেবাননের নেতারা অকপটে স্বীকার করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অনুপ্রেরণায় ফিলিস্তিনিরা আপোসের পথ পরিত্যাগ করে গড়ে তোলে শক্তিশালী ইত্তিফাদা। গড়ে ওঠে বিপ্লবী সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিন ও আল কুদস দিবস মুক্তির জন্য ইমাম খোমেনী রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘বিশ্ব আল কুদস দিবস’ ঘোষণা করেছেন এবং কুদস দিবসের বিশেষ কর্মসূচি দিয়েছেন। ইরানের সাহায্য ও সহযোগিতার কারণে ২০০৬ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ৩৩ দিনের যুদ্ধে, হামাসের সাথে ২২ দিনের যুদ্ধে ও সর্বশেষ গাজায় হামলা চালিয়ে ৮ দিনের বেশি টিকে থাকতে পারেননি ইসরাইল। আর এটা দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সাফল্য এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সর্বাত্মক সাহায্যের জন্যই বিপ্লবের পর ইসরাইল তার সীমানা একটুও সম্প্রসারিত করতে পারেনি। অথচ ইসরাইলের নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত সম্প্রসারিত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল।
শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ও ইরাকে সাদ্দামের নির্যাতনে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ শরণার্থী বছরের পর বছর ধরে ইরানে অবস্থান করছে। ইসলামের মানবিক সাহায্যের শিক্ষা অনুসরণ করে ইরান তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এবং সেই সব শরণার্থীরা সর্বত্র বিচরণ, শিক্ষা, ব্যবসা ও কর্ম সংস্থানের ব্যাপক সুযোগ পেয়েছে। ফিলিস্তিনি ও লেবাননি বহু নেতা দীর্ঘদিন ইরানে আশ্রয় নিয়ে থাকার ফলে ইরানের ইসলামি বিপ্লব থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ইরানের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কুরআনের মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, লেবানন, আফগানিস্তান ও কাশ্মীরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মজলুম জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে তা ইতিহাসে বিরল। আগামীতে এই সহযোগিতার হাত আরও সুদুর প্রসারী হয়ে তা পৌঁছে যাবে বিশ্বের সমস্ত মজলুম জনগোষ্ঠীর কাছে। আর এই প্রত্যাশা আমার তথা বিশ্ব মজলুম জনগোষ্ঠীর।
শুভেচ্ছান্তে,
নিজামুদ্দিন সেখ
সভাপতি, ফেমিলি রেডিও লিসনার্স ক্লাব
গ্রাম: নওপাড়া,পোস্ট: নওপাড়া শিমুলিয়া
জেলা: মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।