বিশ্ব বেতার দিবস প্রসঙ্গে কিছু কথা, কিছু স্মৃতি
(last modified Mon, 13 Feb 2023 10:05:34 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ ১৬:০৫ Asia/Dhaka
  • বিশ্ব বেতার দিবস প্রসঙ্গে কিছু কথা, কিছু স্মৃতি

তারবিহীন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো বেতার বা রেডিও। সবচেয়ে প্রাচীন, সহজলভ্য ও একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বেতার পৃথিবীব্যাপী বহুল ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। বেতারে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষলগ্নে অনেক দেশের একাধিক বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও ১৮৯৮ সালে ২৪ বছর বয়সে ইতালিয়ান তরুণ বিজ্ঞানী গুইলিইমো মার্কোনি বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কার এবং তার বাণিজ্যিক সার্ভিস চালু করেন।

১৯২০ সালে আমেরিকাতে সর্বপ্রথম বেতার সম্প্রচার হয়। বর্তমানে সর্বত্রই বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন, ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হলো বেতার। এমনকি বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ।

প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ, বিনোদন এবং তথ্য পাচ্ছি খুব সহজেই। কিন্তু একসময় বেতার ছাড়া এগুলো কল্পনা করা যেতো না। তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বেতারও নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে আধুনিক রুপ ধারণ করেছে। এখন আর ব্যাটারিচালিত রেডিও সেট নিয়ে বেতারের বিভিন্ন তথ্য পেতে হয় না। বেতার এখন হাতের মুঠোয় এবং ভ্রাম্যমান হয়েছে। মোবাইলে আজ সহজেই বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্রের সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান শোনা যাচ্ছে। মোবাইল অ্যাপস এবং ফেসবুক লাইভে এখন বেতার নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছে। মোবাইলের সাহায্যে সহজেই বেতার থেকে সহজেই যেকোন তথ্য পাচ্ছে শ্রোতারা। তাইতো এখন আর আয়োজন করে রাস্তার মোড়, চায়ের দোকান কিংবা বাড়ির উঠানে একসাথে বেতার শ্রোতারা ভিড় জমায় না।

তবে একটা দিন আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেতার শ্রোতারা ভিড় জমায়। সেটা ১৩ ফেব্রুয়ারির দিন। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস (ওয়ার্ল্ড রেডিও ডে)। ২০১০ সালে স্প্যানিশ রেডিও একাডেমির প্রস্তাব অনুসারে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো’র (ইউনাইটেডে নেশন্স এডুকেশন, সাইন্স এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন) ৩৬তম বার্ষিক সম্মেলনে এ দিবস ঘোষণা করা হয়।

১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের রেডিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাই এ দিনটিকেই বিশ্ব বেতার দিবস হিসাবে বেছে নেয়া হয়। ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে অনুমোদন করে। ফলে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত পৃথিবীর সব দেশের জন্য একটি বৈশ্বিক দিবস হিসাবে উদযাপন নিয়মের মধ্যে বর্তায়।

আমি একবার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় গিয়েছিলাম। বেতার দিবস পালনের লক্ষ্যে নয়; সেফ পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু কাকতলীয়ভাবেই তারই মাঝে পড়ে যায় বিশ্ব বেতার দিবস। নওগাঁর সে অনুষ্ঠানে আমার ও আমন্ত্রণ জোটে। বিশ্ব বেতার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের শ্রোতা বন্ধুদের সে উন্মাদনার ছবি আজও আমার চোখের সামনে ভাসে। উপহার আর ভালোবাসায় আমার মনকে গভীর উদ্বুদ্ধ ‍করেছিল। বাংলাদেশের বেতার কেন্দ্রগুলোও একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং তথ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা, সংবাদপত্রগুলোর বিশেষ লেখমালা আর শ্রোতাদের উন্মাদনায় বিশ্ব বেতার দিবস পালনের সার্থকতা  পরিলক্ষিত হয়।

বেতার একটি শক্তিশালী জনপ্রিয় গণমাধ্যম কেন্দ্রের নাম। বেতার শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, শিক্ষার মাধ্যমও বটে; আবার বেতার শুধু শিক্ষার মাধ্যম নয়, সচেতনতার ও উৎসাহের মাধ্যম। গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিওর প্রচলন অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া বেতারকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকার অনেকগুলো আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছে।

বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় বেতারের গুরুত্ব অনেক বেশি। আবহাওয়ার খবরের জন্য নদীমাতৃক এলাকার একমাত্র সম্বল বেতার। ছেলেবেলায় দেখেছি, গ্রামে যখন বিদ্যুৎ ছিল না, তখন সেখানে বেতারই মানুষের একমাত্র বিনোদন ছিল। টিভির অনুষ্ঠান দেখতে হলে সময় বের করে দেখতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু বেতার শুনতে সময় বের করতে হয় না। কাজের মধ্যে থেকেও বেতার শোনা সম্ভব।

অনলাইন ও টেলিভিশনের যুগে বেতারই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ের ব্যবহার করতে হয়, অন্য কিছুর দরকার হয় না। ফলে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে, যা মানুষের কল্পনাশক্তি বিকাশে সহায়ক হতে পারে।

শান্তি (ইংরেজি: Peace) কোন প্রকার সংঘাত কিংবা যুদ্ধবিহীন সময়কাল। বৃহৎ পরিসরে শান্তি বলতে রাষ্ট্রের ঐক্য, শান্ত অবস্থা বিরাজমান যা অন্য কোন কিছু বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী পরিবেশ দ্বারা আক্রান্ত না হওয়াকে বুঝায়। জনগণ ও সংগঠনের অভ্যন্তরে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করাই রাষ্ট্রের ইপ্সিত লক্ষ্য হওয়া উচিত।

বিশ্ব শান্তি বা বৈশ্বিক শান্তি বলতে সমগ্র বিশ্বের সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যকার শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে বোঝায়। এটি সমগ্র বিশ্বের মধ্যেও হতে পারে আবার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেও হতে পারে।

এটি স্বীকার করতেই হবে যে রিপোর্টিং এবং সাধারণ জনগণকে অবহিত করার ক্ষেত্রে, রেডিও স্টেশনগুলো জনমত গঠন করে এবং একটি বর্ণনা তৈরি করে যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

ইউনেস্কো বলেছে যে, রেডিও প্রকৃতপক্ষে দ্বন্দ্বকে জ্বালাতন করতে পারে কিন্তু বাস্তবে, পেশাদার রেডিও সংঘর্ষ এবং/অথবা উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের বৃদ্ধি রোধ করে বা পুনর্গঠন ও পুনর্গঠন আলোচনার দিকে নিয়ে আসে।

বিশ্ব বেতার দিবস ২০২৩-এ, UNESCO স্বাধীন রেডিওকে সংঘাত প্রতিরোধ এবং শান্তি বিনির্মাণের স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরবে এই বলে যে, স্বাধীন রেডিওকে সমর্থনকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখতে হবে।

আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস রেডিও বিশ্ব শান্তি স্থাপনে অতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। শুধু সহযোগিতা, উদ্যোগ আর প্রচেষ্টা কে কাজে লাগাতে হবে।

পরিশেষে বিশ্ব বেতার দিবসে সকল রেডিও প্রেমিক সংগঠনের কর্মকর্তা, বেতারের কলাকুশলী ও শ্রোতা বন্ধুদের  জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

 

বিধান চন্দ্র সান্যাল

ঢাকা কলোনী, পোঃ বালুরঘাট

জেলা: দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।