বিশ্ব কুদস দিবস ও ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষায় ইরান
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i121958-বিশ্ব_কুদস_দিবস_ও_ফিলিস্তিনের_অধিকার_রক্ষায়_ইরান
১৯৭৯ সালে ইরানের ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সেখানে প্রথমবারের মতো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন ইমাম খোমেনী (রহ.)। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, ইরানের জনগণ বিপ্লব বিজয়ের আগে থেকেই ফিলিস্তিনের মজলুম জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।
(last modified 2025-10-08T09:10:00+00:00 )
এপ্রিল ১৫, ২০২৩ ১৪:২১ Asia/Dhaka
  • বিশ্ব কুদস দিবস ও ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষায় ইরান

১৯৭৯ সালে ইরানের ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সেখানে প্রথমবারের মতো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন ইমাম খোমেনী (রহ.)। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, ইরানের জনগণ বিপ্লব বিজয়ের আগে থেকেই ফিলিস্তিনের মজলুম জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয় ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য একটা চপেটাঘাত। কেননা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রহ.) কেবল ইরানের জনগণকেই নয় বরং বিশ্বের সকল মুসলমান ও স্বাধীনচেতা মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য। ইমামের ওই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার বিশ্ব কুদস দিবস পালিত হয়। ইমাম খোমেনী ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে বিষাক্ত টিউমার বা ক্যান্সার বলে অভিহিত করেছেন।

বিশ্ববাসী বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব ইমামের এই আহ্বানে ব্যাপক সাড়া দেয় এবং এই দিনকে কুদস দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। এই দিনে বিশ্বজুড়ে জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল যে, ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত রাখা। বর্তমানে এই দিনটি ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি বিশ্ব মুসলমানের ঘৃণা প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দখলদার ইসরাইল পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইসরাইল গাজার নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তা তারা গত সাত দশক ধরে চালিয়ে আসছে। অথচ জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আগ্রাসীদের মোকাবেলায় অস্ত্র ধারণ করার অধিকার ফিলিস্তিনিদের রয়েছে। অথচ পাশ্চাত্যের তাঁবেদারী ও ইসরাইল-এর পৃষ্ঠপোষক বিশ্ব মিডিয়া, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনকে সন্ত্রাসী তকমা লাগাতেও কসুর করে না। অন্যদিকে ইসরাইলি বর্বরতাকে আত্মরক্ষার অধিকার শিরোনামে ফলাও করে প্রচার চালায় এই সকল নির্লজ্য মিডিয়াগোষ্ঠী।

সম্প্রতি পবিত্র রমজান মাসের মধ্যে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে নিরপরাধ মুসল্লিদের উপর দমন পীড়নের ঘটনা ইসরাইলের কাপুরুষোচিত মনোভাবের পরিচয় দেয়। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের আম জনতার মনে পীড়া দিয়েছে।

বর্তমানে আমেরিকা 'ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি' নামে ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আসল পরিচয় অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিচিতি ধ্বংসের চেষ্টা করছে যাতে ফিলিস্তিনিদের আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনি (রহ.) দখলদার ইসরাইলের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবেই অবহিত ছিলেন। বিশ্ব কুদস দিবস পালন সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, "কুদস দিবস কেবল ফিলিস্তিনিদের দিবস নয়। এটি এমন এক দিবস যে, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে এটা বুঝিয়ে দেয়া, তারা আর কোনো মুসলিম ভূখণ্ডকে গ্রাস করতে পারবে না।"

ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ বিষয়ে বলেছেন,  "ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা সব মুসলমানের দায়িত্ব।"

তিনি আরও বলেন, "ইয়েমেন, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকায় চলমান রক্তাক্ত সংঘাতের মূল কারণ হচ্ছে, অভিন্ন শত্রুর মোকাবেলায় নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য এবং নিজেরা ঝড়গা বিবাদে লিপ্ত থাকা। ফিলিস্তিন আজ মুসলমানদের প্রধান সমস্যা, যাদেরকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।"

প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব কুদস দিবস পালন ঘোষণার পেছনে ইরানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, মজলুম ফিলিস্তিনিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখা। এছাড়াও পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং এ অঞ্চলে আমেরিকা ও ইসরাইলের আধিপত্যের অবসান ঘটানো।

ইরান মনে করে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটলে, তাঁদের অধিকার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে এবং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থীদেরকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মনে করে, বায়তুল মোকাদ্দসকে রাজধানী করে এবং মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের নিয়ে মূল ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন সরকার গঠন করা ছাড়া পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি আসবে না।

এই নীতির আলোকে ইরান দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার করেছে। ইরানের সংবিধানেও এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

ফিলিস্তিনের হামাস আন্দোলনের বর্তমান নেতৃত্ব ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে লেখা চিঠিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয়া অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, "অধিকার হারা ও নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিন ইস্যু কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেগবান হয়েছে। আমরা কখনোই ইসরাইলকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে দেব না।"

 

লেখা:
এস এম নাজিম উদ্দিন 

পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৫