'খাদের আদনানের শাহাদাত ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে'
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i122734-'খাদের_আদনানের_শাহাদাত_ফিলিস্তিনিদের_স্বপ্নকে_যুগ_যুগ_ধরে_বাঁচিয়ে_রাখবে'
মহাশয়, ২ মে পার্স টুডেতে প্রকাশিত "৮৭ দিনের অনশনের পর শহীদ হলেন ফিলিস্তিনি বন্দী আদনান" এবং "ফিলিস্তিনের শহীদি কাফেলায় যুক্ত হলেন খাদের আদনান,  স্ত্রী বললেন- 'আমি গর্বিত'" শীর্ষক  দুটি সংবাদ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আমার এই পত্রের অবতারণা।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
মে ০৩, ২০২৩ ১৮:৫৬ Asia/Dhaka
  • 'খাদের আদনানের শাহাদাত ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে'

মহাশয়, ২ মে পার্স টুডেতে প্রকাশিত "৮৭ দিনের অনশনের পর শহীদ হলেন ফিলিস্তিনি বন্দী আদনান" এবং "ফিলিস্তিনের শহীদি কাফেলায় যুক্ত হলেন খাদের আদনান,  স্ত্রী বললেন- 'আমি গর্বিত'" শীর্ষক  দুটি সংবাদ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আমার এই পত্রের অবতারণা।

ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে টানা ৮৭ দিনের অনশনের পর মারা গেছেন ৪৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বন্দী খাদের আদনান। এরপরও তার স্ত্রী রান্ডা বলেছেন, আদনানের মৃত্যু ইস্যুতে আর কোনো রক্তপাত চাই না। তিনি আরও বলেন, তার স্বামী ন্যায়ের পথে শহীদ হয়েছেন, এ জন্য তিনি গর্বিত।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, আদনানের স্ত্রী রান্ডা বলেছেন যে, তিনি এবং তার পরিবার তার স্বামীর মৃত্যু ইস্যুতে রকেট হামলার মতো কোনো প্রতিক্রিয়া চান না।

তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার প্রয়াত স্বামী বলতেন এক ফোঁটা রক্তও ঝরাতে হবে না। এখন তার মৃত্যুর পরে এবং তার সমস্ত আত্মত্যাগের পরে, আমরা চাই না এক ফোঁটাও রক্ত ঝরুক।’

তিনি বলেন, আমরা তার মৃত্যুর ঘটনায় কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই না। আমরা চাই না যে এই মৃত্যুকে ইস্যু করে ইসরাইলে রকেট ছোড়া হোক। এরপর গাজায় আবারও ইসরাইলি বিমানগুলো বোমাবর্ষণ করুক।

খাদের আদনানের স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামী ন্যায়ের পথে শহীদ হয়েছেন, এ জন্য তিনি গর্বিত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বামীর লাশ ফেরত দিতে দখলদার ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই নারী।

বন্দীদের ওপর ইসরাইলি অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ফিলিস্তিনি বন্দী খাদের আদনান মঙ্গলবার মারা গেছেন। ক'দিন আগেই চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন। এ কারণে নানা মহল থেকে তার মুক্তির দাবি জোরদার হচ্ছিল। কিন্তু কারো কথায় কান দেয়নি জায়নবাদী ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত খাদের আদনানের মৃত্যুর খবর প্রচার করে তারা শান্ত হয়েছে।

ফিলিস্তিন বলতে কোনো একটা দল বা নেতা নয়, দৃশ্যপটে উঠে এসেছিল প্রতিটি নাগরিকের সমন্বয়ে এক সমগ্র জাতিসত্তা। আর এখানেই গো-হারা হেরে গিয়েছে ইসরাইলসহ পশ্চিমাবিশ্ব।

ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসন দেয়ার লক্ষ্য কেবল জমি দখলই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছাড়াও ফিলিস্তিন ইস্যুর ভেতর লুকিয়ে ছিল ইসলামি উম্মাহর বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নয়া ক্রুসেড যুদ্ধের অশুভ তৎপরতা। দ্বিতীয় সহস্রাব্দজুড়ে মুসলমানদের কাছে বারবার পরাজিত হওয়া এবং রাজ্য ও ক্ষমতা হারানোর অবমাননার প্রতিশোধ স্পৃহাও এতে শামিল রয়েছে। ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের এক নেতা বলেছিলেন, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন পোশাক ও আকারে ক্রুসেড যুদ্ধের অবতারণা করা ছাড়া এখানকার ইস্যু অন্য কিছু নয়। পশ্চিমাবিশ্ব ও ইউরোপীয় সরকারগুলো ইসলামের কাছে অতীত পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যু আসলে ইসলামের ইস্যু আর এ বিষয়টির সাথে দেশপ্রেম ও আরব জাতীয়তার কোনো বিরোধ নেই।

যেহেতু ফিলিস্তিন ইস্যুর মূল ভিত্তি ও সারবত্তাটা ইসলামি, সুতরাং এ ভিত্তি অনুসারেই ফিলিস্তিন সমস্যার চিকিৎসা করা উচিত এবং এর ভিত্তিতেই সমাধান পেতে হবে। যায়নবাদী গোষ্ঠী ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের যাবতীয় পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রীয় বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকৃত ফিলিস্তিন ইস্যু। আর তাই সকল ইসলামি দেশের ইসলামি স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিলিস্তিন ইস্যুকে স্থান না দেয়া পর্যন্ত উম্মাহর জাতীয় অভ্যুত্থান, স্বাধীনতা, একতা ও কালিমার পতাকা উত্তোলন নিঃসন্দেহে জটিলতর হয়ে দাঁড়াবে।

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)'র এক রচনা থেকে বলছি - "ফিলিস্তিন কেবল একটি দেশ নয়। আল আকসা কেবল একটি মসজিদ নয়। এ হলো প্রকৃত মুসলমানদের বিশ্বাসের শেকড়; তাদের আশ্রয়। ফিলিস্তিন, আল আকসার ভাগ্য এবং মুসলিম জাতির মুক্তি অভিন্ন সুতোয় গাঁথা ।"

সুতরাং ফিলিস্তিনি বন্দী আদনানের শাহাদাত বরণ ব্যর্থ হতে পারে না। বরং তাঁর এই শাহাদাত বরণ ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে এবং একদিন সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবেই।

 

ধন্যবাদান্তে

 

বিধান চন্দ্র সান্যাল

ঢাকা কলোনী, বালুরঘাট

দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩