আলমাহদি হবেন ফাতিমার সন্তান তথা বংশধর: হাদিস
মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি-আ. সম্পর্কে শিয়া-সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গির নানা মিল
পার্স-টুডে-ইমাম মাহদি-আ.'র আবির্ভাব সম্পর্কে সুন্নি মাজহাবের বইগুলোতে ১০০টি মুতাওয়াতির হাদিস তথা বহু সূত্রে বর্ণিত হাদিস দেখা যায়।
ইমাম মাহদির-আ. অস্তিত্ব ও আবির্ভাবে বিশ্বাস মুসলিম মাজহাবগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস। এ বিষয়ে শিয়া ও সুন্নি ধারার হাদিসগুলোতে ব্যাপক মিল দেখা গেছে। যেমন, উভয় ধারার হাদিসগুলোতেই বলা হয়েছে ইমাম মাহদির আবির্ভাব ঘটা অনিবার্য ও তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লব ঘটবেই। ইমাম মাহদির বংশ পরিচয়, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, আবির্ভাবের নানা পটভূমি, আবির্ভাবের নানা লক্ষণ, হযরত মাহদি সংক্রান্ত নানা বিষয়, মহানবী (সা.)'র নামের সঙ্গে তাঁর নামের মিল থাকা, ইমাম মাহদির রাষ্ট্র বা হুকুমাতের নানা বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানা বিষয় এইসব মিলের অন্তর্ভুক্ত।
তবে অনেক মতবিরোধ ও অমিলও রয়েছে। যেমন, ইমাম মাহদির জন্ম নিয়ে বিরোধ, ইমাম মাহদির অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে মতভেদ, ইমাম মাহদির নিষ্পাপ হওয়া নিয়ে মতভেদ ইত্যাদি।
সুন্নি সূত্রের ১০০টি মুতাওয়াতির বা বহুসূত্রে বর্ণিত হাদিসে ইমাম মাহদির আবির্ভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। সুন্নি নানা হাদিস গ্রন্থের এইসব হাদিস মহানবী- সা'র বিশ জন সাহবির সূত্রে বর্ণিত। এইসব হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে হযরত মাহদি-আ. হবেন হযরত ফাতিমা-সালামুল্লাহ আলাইহার বংশধর ও তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
ইমাম মাহদির আগমন সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ধারার আলেমরা বলে থাকেন: মহান সংস্কারক ইমাম মাহদির আবির্ভাব ঘটা সম্পর্কে সব সুন্নি আলেমগণ একমত। মহানবীর এ সংক্রান্ত সুসংবাদ বা ভবিষ্যদ্বাণীর হাদিস রয়েছে। সু্ন্নি মনীষী সিইউতি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সবাই এ বিষয়ে একমত যে মাহদি হলেন তিনি যিনি শেষ জামানায় অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ঘটাবেন। তিনি ন্যায়বিচারে ভরপুর করবেন বিশ্বকে।
সু্ন্নি মনীষী খাবিরউদ্দিন আলুসি বলেছেন, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাগুলো অনুযায়ী বেশিরভাগ চিন্তাবিদরা মনে করেন মাহদির আবির্ভাব কিয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন।
শেইখ মোহাম্মাদ ইরাভানি আলমাহদি নামক বইয়ে লিখেছেন, ইমাম মাহদিকে নিয়ে আহলে সুন্নাতের লেখকরা ত্রিশটিরও বেশি বই লিখেছেন।
ইবনে খালদুন ইমাম মাহদি প্রসঙ্গে লিখেছেন: মুসলমানদের মধ্যে এ বিশ্বাস প্রচলিত যে শেষ জামানায় মহানবীর আহলে বাইত থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে যিনি ধর্মকে সহায়তা করবেন ও ন্যায়বিচার জোরদার করবেন। মুসলমানরা তাঁর অনুসরণ করবেন। তিনি মুসলিম সাম্রাজ্যের ওপর কর্তৃত্ব করবেন। তার নাম হবে মাহদি। (তারিখই ইবনে খালদুন, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১১)
ইমাম মাহদির আবির্ভাব সম্পর্কে বর্ণনাকারী প্রখ্যাত সুন্নি মনীষী ও ব্যক্তিত্বরা হলেন, ইবনে সা'দ (ওফাত-২৩০ হিজরি), ইবনে আবিশাইবা (মৃত-২৩৫ হিজরি), আহমদ ইবনে হাম্বল (ওফাত-২৪১ হিজরি), বুখারি (ওফাত-২৭৩ হিজরি), মুসলিম (২৬১ হিজরি), ইবনে মাজাহ(ওফাত-২৭৩ হিজরি) তিরমিজি (ওফাত-২৭৯), আবুবকর ইসকাফি (ওফাত-২৭৩), ত্বাবারি(ওফাত-৩৮০), ইবনে কুতাইবা দিনুরি (ওফাত-২৭৬), হাকিম নিশাবুরি(ওফাত-৪০৫), খতিব বাগদাদি(ওফাত-৪৬৩), বায়হাকি(ওফাত-৪৫৮), ইবনে আসির যাজারি(ওফাত-৬০৬),... প্রমুখ।
আলবিদায়া ও আননিহায়া গ্রন্থে ইবনে কাসির লিখেছেন, মাহদি আসবেন শেষ জামানায় এবং তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচার ও সাম্যে ভরে দিবেন যেমনটি এটি বলদর্পিতা ও জুলুমে ভরপুর হয়েছে। আমরা মাহদি সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে একটি পৃথক খণ্ডে তুলে ধরেছি যেমনটি আবু দাউদ তার সুনান নামক বইয়ে আলাদাভাবে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন। (ইবনে কাসির, ইসমাইল বিন আমরু, আলবিদায়া ও আননিহায়া, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৪৮)
ইমাম মাহদি-আ. সম্পর্কে শিয়া ও সুন্নি ধারায় কিছু অভিন্নতা:
-ইমাম মাহদির আবির্ভাব ও তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব-রাষ্ট্র গঠন একটি অনিবার্য বিষয়। সব ইসলামী মাজহাব ও ফের্কা এ বিষয়ে একমত।
- ইমাম মাহদি-আ. ন্যায়বিচার ও সত্যকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিশ্ব-বিপ্লব ঘটাবেন।
-তিনি জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
-মহানবী-সা. হযরত মাহদি সম্পর্কে উম্মতকে জোরালো উপদেশ দিয়েছেন।
- হযরত মাহদি-আ. মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের বংশধর।
-ইবনে মাজাহ তাঁর সুনান গ্রন্থে হাদিস উদ্ধৃত করেছেন যে, আলমাহদি আমার আহলে বাইত থেকে তথা আমার আহলে বাইতের বংশধর...। (ইবনে মাজাহ, মুহাম্মাদ বিন ইয়াজিদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, খণ্ড-২, পৃ-১৩৬৭)
- ইমাম মাহদি-আ. হবেন হযরত ফাতিমা ও মহানবীর ওয়াসি হযরত আলীর বংশধর। সিইউতি ওরফুলওয়ার্দি বইয়ে উদ্ধৃত করেছেন যে মহানবী-সা. আলীর হাত ধরলেন ও বললেন, এই ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক যুবকের আবির্ভাব ঘটবে যে বিশ্বকে ভরে দিবে ন্যায়বিচার ও সাম্যে। (জালালউদ্দিন সিইউতি, ওরফুলওয়ার্দি, পৃ-১০০)
-ইবনে মাজাহ উম্মে সালমাহ'র উদ্ধৃতি থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি রাসুলে খোদা-সা. থেকে শুনেছেন যে, আলমাহদি হবেন ফাতিমার সন্তান।
ইমাম মাহদির বাহ্যিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিয়া ও সুন্নি হাদিসের বর্ণনায় দেখা যায় আবির্ভাবের সময় ইমাম মাহদি-আ. হবেন শক্তিশালী, তাঁর চেহারা হবে উজ্জ্বল, চওড়া কপাল, লম্বা নাক, গালে থাকবে তিল, তাঁকে দেখে মনে হবে ৪০ বছর বয়স্ক, তাঁর নাম ও মহানবীর নাম হবে একই। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।