মুক্ত হও: জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাণী
https://parstoday.ir/bn/news/religion-i151134
পার্স টুডে -"আবা আবদুল্লাহ"  বা 'আবদুল্লাহর পিতা তথা আল্লাহর বান্দাহদের পিতা' এবং "সাইয়্যিদ আশ-শুহাদা" তথা শহীদদের নেতা নামে পরিচিত হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন ইসলামের মহানবী (সা) র ছোট নাতি।
(last modified 2025-08-12T14:57:47+00:00 )
আগস্ট ১২, ২০২৫ ১৯:৩০ Asia/Dhaka
  • মুক্ত হও: জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাণী
    মুক্ত হও: জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাণী

পার্স টুডে -"আবা আবদুল্লাহ"  বা 'আবদুল্লাহর পিতা তথা আল্লাহর বান্দাহদের পিতা' এবং "সাইয়্যিদ আশ-শুহাদা" তথা শহীদদের নেতা নামে পরিচিত হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন ইসলামের মহানবী (সা) র ছোট নাতি।

হযরত ইমাম হুসাইন-আ. ৪ হিজরি সনে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের মহানবীর উত্তরসূরী আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ছিলেন তাঁর পিতা এবং ইসলামের মহানবীর কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ছিলেন তাঁর মাতা।

৫০ হিজরীতে তাঁর ভাই ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাতের পর তিনি ইমামত লাভ করেন এবং প্রায় এগারো বছর ধরে আহলে বাইতের অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন। ইমাম হুসাইনের ইমামত ও মুয়াবিয়ার রাজত্বের শেষ বছরগুলো ছিল একই সময়ে। ৬০ হিজরীতে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া খিলাফতের মসনদ দখল করে যদিও তা ছিল মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসানের স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির শর্তাবলীর লঙ্ঘন। ইয়াজিদ জনগণের ওপরও জুলুম করতে থাকে।

ইমাম হুসাইন-আ.ও প্রতিরোধ বা গণ-জাগরণী আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং ৬১ হিজরী সনের ১০ই মহররম তারিখে আশুরার ঘটনায় তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ও সাথীসহ শহীদ হন। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাহাবি ও সাহায্যকারীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ইয়াজিদ তাদের তাঁবুতে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, কিন্তু তৃষ্ণা ও ক্ষুধা সত্ত্বেও, তাঁরা প্রতিরোধের আদর্শ ত্যাগ করেননি। এখানে আমরা ইমাম হুসাইন-আ.র প্রতিরোধ ও বিপ্লবের দর্শন তুলে ধরছি সংক্ষেপে: 

ইমামের অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের দর্শন

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বিপ্লব ও আশুরার ঘটনা নিঃসন্দেহে আজকের বিশ্বে পবিত্র ইসলামের ধর্মের অস্তিত্ব টিকে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান কারণ।  এ জাগরণ বা বিপ্লব আজ বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, কারণ বিশ্বের নানা অঞ্চলের প্রতিরোধকামী ও স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো কারবালার ঘটনা এবং আশুরার প্রতিরোধকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।

আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে মহানবীর (সা) আহলে বাইতের অনুসারীরা আশুরার সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে বহু বিপ্লবী প্রতিরোধ গোষ্ঠী ও দল গড়ে তুলেছেন এবং স্বাধীনতাপ্রেমী ও নিপীড়ন বিরোধী শক্তি ও যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক বিশাল ও শক্তিশালী ফ্রন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এইসব দল ও আন্দোলনের দৃষ্টান্ত হিসেবে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন এবং লেবাননের ভূমিতে নানা প্রতিরোধকামী দল ও গোষ্ঠী গড়ে ওঠার কথা বলা যায় যারা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অভ্যুত্থানের দর্শনকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

আশুরার জাগরণের গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয় হল স্বৈরাচার ও স্বার্থান্ধ শক্তির আধিপত্য থেকে মুক্তির শিক্ষা গ্রহণ করা। এটি এমন একটি বিষয় যার প্রতি আমরা আজকের বিশ্বকে তৃষ্ণার্ত এবং এর  প্রতি তীব্র মুখাপেক্ষী দেখতে পাই।

ইমাম হুসাইনের সেই বিপ্লব বা অভ্যুত্থান ও আশুরার ঘটনার পর ১,৪০০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে।কিন্তু আমরা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে এই মহান ঐতিহাসিক ঘটনার বার্ষিকী উদযাপন করতে, শোক প্রকাশ করতে এবং ইমাম হুসেনের ঐতিহাসিক ও শত্রু-বিধ্বংসী বিপ্লবকে স্মরণ করার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখছি। 

ইমাম হুসাইনের (আ) কয়েকটি হাদিস বা বাণী:

১. মজলুমের প্রতি জুলুম এড়িয়ে চলা 

আশুরার দিন ইমাম হুসাইন তাঁর পুত্র ইমাম সাজ্জাদকে উপদেশ দিয়েছিলেন: "আমার পুত্র! এমন কাউকে অত্যাচার করো না যার মহিমান্বিত ও পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কোন সাহায্যকারী নেই।"

২. বীরত্বময় বা সম্মানজনক মৃত্যু 

অপমানজনক জীবনের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মৃত্যু শ্রেয়।

৩. ইমাম মাহদির (আ) আবির্ভাব

যদি এই পৃথিবীর আর মাত্র একদিনও বাকি থাকে, তাহলে আল্লাহ সেই দিনটিকে দীর্ঘায়িত করবেন যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন ব্যক্তি আবির্ভূত হন এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচার ও সাম্য দিয়ে পূর্ণ করে দেন, ঠিক যেমনটি তা জুলুম ও অত্যাচারে পূর্ণ ছিল।

৪.স্বাধীনচেতা হও 

যদি তোমাদের কোন ধর্ম নাও থাকে এবং বিচার দিবসকে ভয় নাও পাও, তাহলে অন্তত তোমার নিজের জগতে স্বাধীনচেতা থাকো।

৫. বিপ্লব বা প্রতিরোধের যুক্তি 

আমি স্বার্থপরতা, বিলাসিতা, দুর্নীতি বা নিপীড়নের জন্য অভ্যুত্থান করিনি। প্রকৃতপক্ষে আমি আমার নানা মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের সংস্কারের জন্য অভ্যুত্থান করেছি যাতে সৎকাজের আদেশ দেয়ার এবং অন্যায়কাজে নিষেধ করা যায় (তথা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যায়)। 

পার্স টুডে/এমএএইচ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।