প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা:
ইমাম মাহদি-আ. ও হযরত ঈসা-আ. একই খোদায়ি বাস্তবতার দুটি মুখ
-
ইমাম মাহদি-আ. ও হযরত ঈসা-আ. একই খোদায়ি বাস্তবতার দুটি মুখ
পার্স-টুডে: শেষ-জামানার ত্রাণকর্তার ধারণাটি মানুষের গভীরতম উদ্বেগগুলোর অন্যতম; এ এমন একটি উদ্বেগ যা কেবল সুদূর ভবিষ্যতের সাথেই নয়, আজকের মানব জীবনের মানের সাথেও জড়িত।
ধর্মীয় ও দার্শনিক ঐতিহ্যে,মানব ইতিহাস এমন এক বিন্দুর দিকে এগিয়ে যায় যেখানে সত্য ও ন্যায়বিচার পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশ হবে।
মূল প্রশ্ন হল: মহান আল্লাহ যিনি করুণাময় এবং মানুষের বিকাশের দাতা, কেন মানব বিবর্তনের পথে এমন একটি পরিকল্পনা স্থাপন করলেন? এর উত্তর মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের প্রকৃতিতে অনুসন্ধান করতে হবে।
আল্লাহ চান মানবজাতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাক যেখানে সে প্রকৃত মুক্তির পথ নিজেই বুঝতে পারবে। এই উপলব্ধি ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, ব্যর্থতা এবং বিজয় এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবজাতির মুখোমুখি হওয়া নৈতিক পরীক্ষার ফসল।
শেষ-যুগে মানবজাতির ত্রাণকর্তা কেবল একজন বাহ্যিক রক্ষাকারী ব্যক্তিত্ব নন, তিনি একইসঙ্গে মানব বোধগম্যতার পরিপক্কতারও প্রতীক; যে সময়ে মানুষ উপলব্ধি করবে যে ন্যায়বিচার, করুণা এবং সত্য কেবল খোদায়ি উৎসের সাথে সংযোগের ছায়াতেই অর্থবহ বা ফলপ্রসু হবে।
উল্লেখ্য ধর্মীয় ঐতিহ্যে দুজন মহান ব্যক্তিত্ব সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট: ইসলামী চিন্তাধারায় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র শেষ উত্তরসুরি হযরত ইমাম মাহদি (আ.) এবং খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে হযরত ঈসা (আ.)। উভয়ই খোদায়ি ন্যায়বিচার ও করুণার বাস্তবায়নের প্রতীক; তাঁরা এমন ব্যক্তিত্ব যাদের গুণাবলী ব্যক্তিত্বকে অতিক্রম করে খোদায়ি ও মানবিক আদর্শের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে।
ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে ইমাম মাহদি (আঃ) হলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি তাঁর আবির্ভাবের মাধ্যমে নিপীড়ন দূর করবেন, ন্যায়বিচার ছড়িয়ে দেবেন এবং মানুষকে ঐশ্বরিক সত্যের গভীর উপলব্ধির দিকে পরিচালিত করবেন। তিনি ইতিহাসের হৃদয়ে বেঁচে থাকা আশার প্রতীক এবং মানুষকে একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গঠনের কাজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান।
খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে, খ্রিস্টের প্রত্যাবর্তনকে নিপীড়নের অবসান এবং বিশ্ব শান্তির সূচনার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়। করুণা, দয়া এবং পথ-নির্দেশনার মতো গুণাবলীর মাধ্যমে তিনি আমাদের এই সত্যটি মনে করিয়ে দেন যে মানুষের মুক্তি কেবলমাত্র স্রস্টা এবং খোদায়ি মূল্যবোধের সাথে সংযোগের মাধ্যমেই সম্ভব।
ইসলামী বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় যীশু খ্রীষ্ট তথা হযরত ঈসা (আ.)ও অবতরণ করবেন তথা পৃথিবীতে নেমে আসবেন আকাশ হতে এবং তিনি ইমাম মাহদির সহযোগী হবেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:
“মাহদি আমার বংশধর; যখন তিনি আবির্ভূত হবেন, তখন মরিয়মের পুত্র ঈসা (আঃ) তাকে সাহায্য করার জন্য অবতরণ করবেন এবং তার পিছনে নামাজ পড়বেন।” এই বর্ণনা খোদায়ি তথা ঐশী ধর্মগুলোর ঐক্য এবং সারা বিশ্বে সব ক্ষেত্রে ও সব মানুষের কল্যাণে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য খোদাতায়ালার মহান প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণতার ইঙ্গিত দেয়।
ইমাম মাহদির সাথে ঈসা মসিহের সাহচর্য পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক এবং একটি চিহ্ন যে মুক্তির প্রতিশ্রুতি সমস্ত মহান ধর্মের দ্বারা ভাগ করা একটি প্রতিশ্রুতি। এই সাহচর্য হল সবচেয়ে মূল্যবান ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতি কারণ এটি দেখায় যে ঈশ্বর মানবতাকে একা ছেড়ে দেননি এবং দুই মহান ত্রাণকর্তার উপস্থিতির মাধ্যমে তাকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
ইমাম মাহদির সাথে হযরত ঈসা মসিহের সাহচর্য পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক এবং এটি এমন একটি নিদর্শন যার অর্থ হল মুক্তির প্রতিশ্রুতি সমস্ত মহান ধর্মের মধ্যে টিকে-থাকা একটি খোদায়ি প্রতিশ্রুতি। এই সাহচর্য হল সবচেয়ে মূল্যবান খোদায়ি প্রতিশ্রুতি। কারণ এ থেকে বোঝা যায় যে স্রস্টা মানবতাকে একা ছেড়ে দেননি এবং দুই মহান ত্রাণকর্তার উপস্থিতির মাধ্যমে তাঁদেরকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এই ধরনের প্রতিশ্রুতি কেবল সুদূর ভবিষ্যতেই নয়, একইসঙ্গে আমাদের আজকের জীবনের অর্থকেও আলোকিত করে।
এই প্রতিশ্রুতি বোঝার অর্থ হল ইতিহাসের সমাপ্তি হল নিপীড়নের সমাপ্তি এবং করুণার সূচনা; সেই গন্তব্য যেখানে মানব উন্নয়নের সমস্ত পথ প্রবাহিত হয়। অতএব, শেষ সময়ের ত্রাণকর্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হল এমন একটি সত্যের প্রতিফলন করা যা ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে এবং মানবতার সাধারণ আশা হিসাবে উপস্থাপিত হয়।
এই প্রতিশ্রুতি বোঝার অর্থ হল ইতিহাসের সমাপ্তি মানে অবিচার আর নিপীড়নের সমাপ্তি এবং করুণার সূচনা; এটা হল সেই গন্তব্য যেখানে মানব উন্নয়নের সমস্ত পথ ধাবিতয। অতএব, শেষ সময়ের ত্রাণকর্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হল এমন একটি সত্যের প্রতিফলন যা ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে এবং মানবতার সাধারণ আশা হিসাবে উপস্থাপিত।
এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে নিষ্ক্রিয় অপেক্ষার চেয়েও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং মুক্তির পথে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। এই ধরনের চিন্তা-চেতনা মুক্তির পথকে এখনই করতে পারে আলোকিত এবং নিয়ে যেতে পারে মানুষকে ন্যায়বিচার ও করুণায় পূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।