আমিরাতে ইয়েমেনিদের হামলায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: তুরস্কের অবস্থান বিস্ময়কর
ইয়েমেনের সেনাবাহিনী গত ১৭ জানুয়ারি আমিরাতের বিরুদ্ধে 'অপারেশন হারিকেন ইয়েমেন' নামের যে অভিযান চালিয়েছে সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
ইয়েমেন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির বিমান বন্দরের কাছে এবং একটি তেল কোম্পানিতে এবং দুবাইয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনি সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ব্যাপারে পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ইয়েমেনসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে আমিরাতের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও ষড়যন্ত্রের সমালোচনা করে ইয়েমেনি সেনাদের সাম্প্রতিক হামলাকে তাদের জন্য বড় বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইরাকের প্রতিরোধ সংগঠন ইসলামি নুজাবা'র রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান শেইখ আলী আল আসাদ এক টুইটবার্তায় বলেছেন, 'ইয়েমেনিদের এ সফল হামলা এ অঞ্চলে আমিরাতের ষড়যন্ত্র, ধ্বংসযজ্ঞ ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব হয়েছে। তাই আমরা ইয়েমেনের হুথি সমর্থক ন্যাশনাল সালভেশন সরকারকে শুভেচ্ছা জানাই'।
ইয়েমেনিদের হামলার ব্যাপারে আরব দেশগুলোর কেউ কেউ হয় নীরব রয়েছে অথবা ইয়েমেনিদের নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি এ ঘটনায় কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আবুধাবির যুবরাজের পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাত কর্মসূচিও বাতিল করতে হয়েছে। এ অবস্থায় আমিরাতের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন ইয়েমেনি সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সৌদি আরবও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের আগ্রাসনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দাবি করেছে, ইয়েমেনের হুথি মিলিশিয়া বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
সৌদি যুদ্ধবিমান গতরাতেও রাজধানী সানার একটি আবাসিক এলাকার ওপর ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে নারী ও শিশুসহ ১২ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং আহত হয়েছে আরো ১১ জন। এ ছাড়া অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে। পশ্চিম এশিয়ায় অনারব সরকারগুলোর মধ্যে তুরস্ক সরকারও আমিরাতের বিরুদ্ধে ইয়েমেনিদের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাভুস ওগলু আবুধাবির বিরুদ্ধে ইয়েমেনিদের হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করে আমিরাতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। বলা হচ্ছে, দীর্ঘ উত্তেজনার পর আঙ্কারা ও আবুধাবির মধ্যে সম্পর্কের যখন উন্নতি হচ্ছে তখন তুরস্ক সরকার ইয়েমেনিদের বিরুদ্ধে এ অবস্থান নিল। অনেক বিশ্লেষক ইয়েমেনিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের এ অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

এদিকে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবুধাবির বিরুদ্ধে ইয়েমেনিদের হামলার নিন্দা জানিয়ে দাবি করেছেন আমিরাতের বিমানবন্দরসহ বেসামরিক এলাকাকে টার্গেট করে ওই হামলা চালানো হয়েছে। এমন সময় তিনি বেসামরিক অবস্থানে হামলার অভিযোগ করলেন যখন সৌদি-আমিরাতের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট গত সাত বছর ধরে ইয়েমেনে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। গতরাতে সৌদি জঙ্গি বিমান সানার আবাসিক এলাকায় হামলা চালালেও সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে।
যাইহোক, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইয়েমেনিরা আমিরাতে যে হামলা চালিয়েছে কিংবা এর আগে সৌদি আরবেও যে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে তা সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।