'ইরান ইসরায়েলের যুদ্ধ-প্রযুক্তির কেন্দ্র ও সফট পাওয়ারের ঘাঁটি ধ্বংস করেছে'
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i150824
পার্সটুডে : ইসরায়েলি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট-এর প্রধান আলোন চেন স্বীকার করেছেন যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
(last modified 2025-08-02T10:19:02+00:00 )
জুলাই ৩১, ২০২৫ ১৮:০৭ Asia/Dhaka
  • ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট (ইরানের হামলার আগে ও পরে)
    ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট (ইরানের হামলার আগে ও পরে)

পার্সটুডে : ইসরায়েলি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট-এর প্রধান আলোন চেন স্বীকার করেছেন যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেছেন, “পোড়া বারুদের গন্ধ এখনো বাতাসে ভাসছে... বছরের পর বছর গবেষণার ফল এক রাতেই ছাই হয়ে গেছে। এটি কেবল একটি গবেষণাগার ছিল না, বরং ইসরায়েলের প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র ছিল।”

ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর একটি ডকুমেন্টারিতে তিনি বলেন, "ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে; এখানে এখনও পোড়া বারুদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে; ইসরাইলি বিজ্ঞানীদের সারা জীবনের গবেষণা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে; বছরের পর বছরের গবেষণা ধ্বংস হয়ে গেছে; আমাদের মধ্যে শোক, হতাশা এবং অশ্রু বিরাজ করছে!"

ধ্বংসস্তূপের পাশে ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউটের প্রধান আলোন চেনের বিমর্ষ চিত্র ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আঘাতের গভীরতা তুলে ধরে। তার এই উক্তি – “ইরান ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক বাতিঘর ভেঙে দিয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীদের সারা জীবনের পরিশ্রম জ্বলে-পুড়ে গেছে। বছর বছরের গবেষণা মুছে গেছে। আমরা শোকাহত, ভেঙে পড়েছি।

এটি শুধু একটি স্থানীয় বিপর্যয়ের স্বীকারোক্তি নয়, বরং ইসরাইলের কৌশলগত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাবের একটি স্তম্ভের পতনের ইঙ্গিতবাহী।

ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট: ইসরাইলের কৌশলগত শক্তির কেন্দ্র

ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট আসলে ইসরাইলের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক শক্তি উৎপাদনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। জৈবপ্রযুক্তি, সাইবার গবেষণা থেকে শুরু করে ডুয়াল-ইউজ প্রযুক্তি (যা সামরিক ও গোয়েন্দা কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ইউনিট ৮২০০) – সবকিছুতেই এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল। ইসরাইলি জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্র (INSS)-এর গবেষক ইয়োয়েল গুজানস্কি-এর মতে, এই প্রতিষ্ঠান ছিল "ভবিষ্যত যুদ্ধে ইসরাইলের গুণগত শ্রেষ্ঠত্বের কৌশলগত কেন্দ্র"।

ইরানের কৌশলগত জবাব: শুধু সামরিক নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক লক্ষ্য

ইরানের এই সুনির্দিষ্ট হামলা কোনও আবেগপ্রসূত বা প্রদর্শনীমূলক পদক্ষেপ ছিল না। এটি ছিল ইরানের 'জ্ঞানভিত্তিক প্রতিরোধ' নীতির একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। এই নীতির অধীনে, যেসব অবকাঠামো আপাতদৃষ্টিতে বেসামরিক মনে হলেও আসলে যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের সাথে জড়িত, সেগুলোকে বৈধ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউটে হামলা শুধু একটি ভবন ধ্বংসের ঘটনা নয়, এটি ইসরাইলের কৌশলগত মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ইসরাইলের সফট পাওয়ারের পতন

কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম এই পরিবর্তনকে স্বীকার করেছে।  ইউরোনিউজ ওয়াইজম্যানকে "ইসরাইলের ডুয়াল-ইউজ প্রযুক্তির মেরুদণ্ড" বলে বর্ণনা করেছে।

দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ইরানের এই হামলা "ইসরাইলের নরম অবকাঠামোর অলঙ্ঘনীয়তার মিথকে ধ্বংস করেছে।"

দ্য নিউ ইয়র্কার এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর বিশ্লেষকরা স্বীকার করেছেন যে, ইসরাইল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি কৌশলগত আঘাত পেয়েছে যা শুধু সামরিক নয়, বরং তার 'সফট পাওয়ার'-এর ভিত্তিকেও নড়বড়ে করে দিয়েছে।

থিংক ট্যাঙ্কগুলোর বিশ্লেষণ:

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, "ইরানের এই হামলা ইসরাইলের সফট পাওয়ার (soft power) কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে, যা পুনর্নির্মাণে বছরের পর বছর লাগবে।"

RAND কর্পোরেশন বলেছে, এটি ইরানের "বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিরোধ"-এর একটি উদাহরণ, যেখানে শত্রুর যেকোনো অবকাঠামো, তা বেসামরিক হলেও, যদি যুদ্ধের সাথে জড়িত থাকে তবে তা বৈধ লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারে।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি (WINEP) বলেছে, "ইরান পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা শুধু সামরিকভাবে জবাব দেবে না, বরং ইসরাইলের উপর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত ক্ষতিও চাপিয়ে দেবে।"

এই ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল আর তার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের উপর নিরাপদে থাকতে পারবে না। ইরানের জবাব এখন শুধু সামরিক নয়, বরং তা শত্রুর মনোবল ও কৌশলগত স্থিতিশীলতাকেও লক্ষ্য করে। এটি ইসরাইলের জন্য একটি বড় রকমের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩১