দায়মুক্তিসহ অপরাধযজ্ঞ: ইসরায়েল কিভাবে যুদ্ধের আইন উপেক্ষা করে?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i152102-দায়মুক্তিসহ_অপরাধযজ্ঞ_ইসরায়েল_কিভাবে_যুদ্ধের_আইন_উপেক্ষা_করে
পার্স টুডে - ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন "হামাস" এক বিবৃতিতে পশ্চিম গাজার শিফা হাসপাতালের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের উপর দখলদার সরকারের সেনাবাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে।
(last modified 2025-09-19T12:13:46+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ ১৬:৪২ Asia/Dhaka
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই
    গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই

পার্স টুডে - ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন "হামাস" এক বিবৃতিতে পশ্চিম গাজার শিফা হাসপাতালের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের উপর দখলদার সরকারের সেনাবাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে।

হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে গাজা শহর ছেড়ে আসা শরণার্থীদের উপর ইসরায়েলি আক্রমণ-যার ফলে কমপক্ষে ১৫ জন শহীদ হয়েছেন,-এই শাসনব্যবস্থার নৃশংস প্রকৃতির প্রতিফলন, সন্ত্রাসী ইহুদিবাদীরা ঘরবাড়ি হারা হওয়ার মুহূর্তেও বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালায়। হামাস এই পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর গণহত্যা নীতির ধারাবাহিকতা বলে মনে করে, যা গত দুই বছর ধরে বিশ্বের চোখের সামনে বাস্তবায়িত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের গণহত্যা সম্পর্কে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে হামাস জোর দিয়ে বলেছে যে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে এই অপরাধ ও অন্যান্য দৈনন্দিন অপরাধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি বিপজ্জনক অবজ্ঞার স্পষ্ট বার্তা।

ইহুদিবাদী ইসরায়েল যে গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে তা মানবাধিকার সংস্থার, জাতিসংঘের এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আইন বিশেষজ্ঞরা বারবার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন ও এই দুঃখজনক বাস্তবাতা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন।

গাজার স্কুল, হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা হামলাসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহার মানবিক আইনে সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্যের নীতি লঙ্ঘন করে। গাজায় খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি প্রবেশের উপর কঠোর বিধিনিষেধ, যা মানবিক সংকটের দিকেও পরিচালিত করেছে, সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে বিবেচিত এবং চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের অধীনে নিষিদ্ধ।

ইহুদিবাদী সরকার বারবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে, যার মধ্যে বসতি নির্মাণ বন্ধ বা গাজার অবরোধের অবসানের আহ্বান জানানোর প্রস্তাবও রয়েছে। অসংখ্য ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বা স্বাধীন সাংবাদিকদের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, যার ফলে ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনীর হাতে সংঘটিত অপরাধের সঠিক নথিভুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এইসব অপরাধী কর্মকাণ্ড গাজার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার প্রতিবেদনে বারবার বলেছে যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা আক্রমণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিস্তৃত ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। প্রতিবেদনগুলোতে মানবিক সাহায্য প্রদানে বাধা দেয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘনের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা সম্মিলিত শাস্তি নামে পরিচিত।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা এবং পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসের দিকেও ইঙ্গিত করেছে। অসম শক্তি প্রয়োগ এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণকে যুদ্ধ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সরকারগুলির সমর্থন সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে গাজায় ইসরায়েলি সরকারকে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে অনাহারকে ব্যবহারের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজায় হামলার সময়, ইসরায়েলি সরকার বারবার আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের উপর আক্রমণ এবং অবরোধ আরোপ করা যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সুসংগঠিত তথা পরিকল্পিত অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ব এবং ফিলিস্তিনের সমর্থকদের মধ্যে সংহতি সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। এই সংহতির কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবই নয়, মনস্তাত্ত্বিক, মিডিয়া এবং এমনকি সামরিক প্রভাবও রয়েছে। 

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক, নৈতিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে, মুসলিম দেশগুলো ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে এবং গাজায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দখলদারিত্বের ধারাবাহিকতা রোধ করতে পারে। এই সমর্থন ফিলিস্তিনি জনগণের মনোবলকেও শক্তিশালী করবে এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অমানবিক আক্রমণের ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে তাদের আরও প্রবল প্রতিরোধকামী করে তুলবে। #

 

পার্স টুডে/এমএএইচ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।