গাজায় গণহত্যার ন্যায্যতা প্রমাণ করতে জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর মিথ্যাচার
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i152388-গাজায়_গণহত্যার_ন্যায্যতা_প্রমাণ_করতে_জাতিসংঘে_নেতানিয়াহুর_মিথ্যাচার
পার্সটুডে-গাজা মিডিয়া অফিস জাতিসংঘে দেওয়া নেতানিয়াহুর বক্তব্যে আটটি বড় বড় মিথ্যাচার প্রকাশ করে তার বক্তৃতাকে গণহত্যার ন্যায্যতা প্রমাণ করা এবং আইনি দায় এড়ানোর একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫ ১৮:২৮ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
    ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

পার্সটুডে-গাজা মিডিয়া অফিস জাতিসংঘে দেওয়া নেতানিয়াহুর বক্তব্যে আটটি বড় বড় মিথ্যাচার প্রকাশ করে তার বক্তৃতাকে গণহত্যার ন্যায্যতা প্রমাণ করা এবং আইনি দায় এড়ানোর একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।

পার্সটুডে-গাজা মিডিয়া অফিস জাতিসংঘে দেওয়া নেতানিয়াহুর বক্তব্যে আটটি বড় বড় মিথ্যাচার প্রকাশ করে তার বক্তৃতাকে গণহত্যার ন্যায্যতা প্রমাণ করা এবং আইনি দায় এড়ানোর একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।

গাজায় ফিলিস্তিন সরকারের মিডিয়া অফিস এক প্রেস বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যাকে ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য আটটি বড় মিথ্যাচার এবং কয়েক ডজন ভ্রান্ত দাবি করেছেন।

এই বিবৃতি অনুসারে, নেতানিয়াহুর করা মিথ্যাচারগুলো নিম্নরূপ:

১. গাজার "বন্দীদের" ভুলে না যাওয়ার দাবি: এই দাবিটি করা হয়েছে এমন সময় যখন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি বন্দীদের ভাগ্য উপেক্ষা করে, তাদের মন্ত্রীদের হত্যা, সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি প্রকাশ্যে অনুসরণ করে যাচ্ছে।

২. ৭ অক্টোবরের পর বিশ্বব্যাপী সমর্থন সম্পর্কে মিথ্যাচার: নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন যে বিশ্ব নেতারা তাকে সমর্থন করেছিলেন, যদিও এই সমর্থন অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং আজ বেশিরভাগ দেশ ইসরাইলি অপরাধের নিন্দা জানাচ্ছে এবং ইহুদিবাদী আখ্যানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

৩. বিশ্বজনমত নিয়ে প্রশ্ন তোলা: তিনি দাবি করেছিলেন যে বিশ্ব নেতারা "উগ্র ইসলামপন্থীদের" চাপের মধ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে বাস্তবতা হল আন্তর্জাতিক জনমত ইসরাইলের অতীত অপরাধ পর্যালোচনা করছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের উপর জোর দিচ্ছে।

৪. "সাত ফ্রন্টে" যুদ্ধ সম্পর্কে মিথ্যাচার: নেতানিয়াহু এই যুদ্ধগুলোকে "সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই" হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু সত্য হল এই যুদ্ধগুলো বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে গাজার ৯৪ শতাংশ শহীদ বেসামরিক নাগরিক; যার মধ্যে ৩০,০০০ এরও বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অবকাঠামো খাতে ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও রেকর্ড করা হয়েছে।

৫. প্রতিরোধ আন্দোলন জনগণকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধা দিয়েছে বলে দাবি করা: নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন যে প্রতিরোধ আন্দোলন গাজার জনগণকে চলে যেতে বাধা দিয়েছে, অথচ তিনি নিজেই ৭০০,০০০ মানুষের বাস্তুচ্যুতির কথা বলেছেন। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার বলেছে যে প্রতিরোধ বাহিনী শরণার্থীদের সাহায্য করেছে এবং কাউকে সেখান থেকে যেতে বাধা দেয় নি।

৬. বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু না করার বিষয়ে মিথ্যাচার: নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে যেহেতু মানুষকে তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল, তাই গণহত্যা করার কোনও উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার আবাসিক এলাকায় ২০০,০০০ টনেরও বেশি বোমা ফেলেছিল এবং ২০,০০০ শিশু ও ১০,৫০০ মহিলাসহ ৬৪,০০০ এরও বেশি বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছিল।

৭. প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ত্রাণ-সাহায্য চুরি করার অভিযোগ: নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে প্রতিরোধ মানবিক সাহায্য চুরি করছে, যদিও বাস্তবতা হল দখলদার ইসরাইল সশস্ত্র দলগুলোকে সমর্থন করে অনাহারের নীতি বাস্তবায়ন করেছে এবং দুর্ভিক্ষের কারণে ১৪৭ শিশুসহ শত শত বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছে। ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী "মৃত্যুর ফাঁদ" তৈরি করে শত শত ক্ষুধার্ত মানুষকে হত্যা, আহত এবং বন্দী করেছে।

৮. ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ব্যাপারে বিকৃতি: নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে হলো ইহুদিদের হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করা। অথচ বাস্তবতা হলো, এটা ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক নিপীড়ন সংশোধন এবং ৭৭ বছরের দুর্ভোগ ও দখলদারিত্বের পর তাদের বৈধ অধিকার আদায়ের দিকে একটি বিলম্বিত পদক্ষেপ।

গাজায় ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস আরও বলেছে: মিথ্যা আসলে বাস্তব সত্যের কিছুই পরিবর্তন করে না। আজ, বিশ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি উপলব্ধি করছে যে ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতারণা, সহিংসতা এবং পদ্ধতিগত হত্যার ওপর ভিত্তি করে একটি ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

গাজার মিডিয়া অফিস চলমান মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দখলদার ইসরাইল এবং মার্কিন সরকারকে আরও দায়ী করেছে এবং অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করা, গাজা থেকে দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার করা, খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের জন্য ক্রসিং খুলে দেওয়া এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ দখলদারিত্বের সম্পূর্ণ অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।#

পার্সটুডে/এনএম/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।