বিশ্লেষণ:
গাজার তিনটি বিশেষ স্থান স্থায়ীভাবে দখল করার ইসরায়েলি ইচ্ছার রহস্য
-
গাজার বেশ কয়েকটি বিশেষ স্থান স্থায়ীভাবে দখল করার ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র
পার্স টুডে - ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর কান চ্যানেল একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যে পরিকল্পনাটি হল, যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পরেও তেল আবিব গাজার তিনটি কৌশলগত এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে সেনা মোতায়েন রাখতে চায়।
ইসরায়েল মার্কিন সরকারের কাছেে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পরেও কৌশলগত এই এলাকাগুলোয় সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখতে চায় ইসরায়েল।
জায়োনিস্ট কান নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবগত কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তেল আবিব ওয়াশিংটনকে দেয়া এক সরকারি বার্তায় ঘোষণা করেছে যে, তাদের বাহিনী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে "গাজা স্ট্রিপের ভেতরে বাফার জোন", "গাজা-মিশর সীমান্তে ফিলাডেলফিয়া অক্ষ" এবং "পূর্ব গাজার হিল ৭০ (তাল্লেহ আল-মান্তার)।"
ইসরায়েলি কান নেটওয়ার্ক দাবি করেছে যে এই এলাকাগুলি ইসরায়েলের জন্য "অত্যাবশ্যক" কারণ এগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ উত্তর গাজা, গাজা সিটি এবং জাবালিয়া ক্যাম্পের ওপর সামরিক নজরদারির ও জোরালো নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার সুযোগ এনে দেয়। যুদ্ধের ময়দানে ও নজরদারির ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এই তিনটি স্থান ইসরায়েলের দরকার এবং মার্কিন সরকারও ইসরায়েলের এই প্রয়োজনের কথা উপলব্ধি করে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি ধাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: প্রথম ধাপে, বন্দীদের ফিরিয়ে দেয়ার পর সামরিক বাহিনী সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু তারা সাময়িকভাবে গাজার অভ্যন্তরে "হলুদ রেখার" মধ্যে থাকবে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিচালনার জন্য একটি আমেরিকান মিশনের অধীনে বিদেশী বাহিনী পৌঁছালে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী "লাল রেখায়" পিছু হটবে।
তেল আবিবের বক্তব্য অনুযায়ী, "ভবিষ্যতের হুমকি" রোধ করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে দখলদার বাহিনীকে গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা হবে এবং ফিলাডেলফিয়া অক্ষ ও পূর্ব গাজার কৌশলগত পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। আমিরাতের সংবাদপত্র আল-আইনসহ আরব সূত্রগুলি জানিয়েছে যে তেল আবিব, হামাসের সাথে পরোক্ষ আলোচনায়, ফিলাডেলফিয়া অক্ষ এবং মুরাজ অক্ষের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তার উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু হামাস এটা জোর দিয়ে বলে আসছে যে গাজার সব অঞ্চল থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেয়ার শর্ত পূরণ না হলে কোনো সমঝোতায় যাবে না এই আন্দোলন। অর্থাৎ যে কোনো সমঝোতায় এই শর্তটি থাকতেই হবে।
আলআইনের রিপোর্ট অনুযায়ী ইসরায়েল গাজার ভেতরে কয়েকশ মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত একটি বাফার জোন তৈরি করতে চায়, কিন্তু হামাস স্পষ্টভাবে এই ধরনের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়াও, দখলদার ইসরায়েল গাজার তিনটি অঞ্চলের ওপর দীর্ঘমেয়াদী দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার দাবি তুললেও ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরায়েল কেবল একটি "নিরাপদ অঞ্চলে" দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি রাখতে পারে।
কিন্তু হামাস এখনও গাজা থেকে ইসরায়েলের আংশিক সেনা প্রত্যাহার মেনে নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত বা মনোভাব দেখায়নি। সব আলোচনায় হামাস আন্দোলনের স্থায়ী শর্ত হলো গাজার শাসন-ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ফিলিস্তিনি হতে হবে এবং এই বিষয়ে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর কোনো হস্তক্ষেপ থাকতে পারবে না। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/০৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।