সিরিয়ার নতুন সংসদ: জোলানিকে বৈধতা দিতেই কি এই আয়োজন?
-
জোলানি
পার্সটুডে- রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার নির্বাচন ছিল "নাটকীয় ও প্রতীকী"। সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরোক্ষ সংসদীয় নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট- নির্বাচনে মাত্র তিনজন নারী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন এবং খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিও খুব সীমিত সংখ্যায় পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে পেরেছেন।
আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, সিরিয়ার সংসদ নির্বাচন বিষয়ক উচ্চতর কমিটির মুখপাত্র নাওয়ার নাজমা বলেছেন- সংসদে নারীর সংখ্যা সিরিয়ার সমাজে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূমিকার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"
তার মতে, পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ১১৯ জন সদস্যের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র চার শতাংশ যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুখপাত্র আরও বলেন, সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার তুলনায় খ্রিস্টান প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত দুর্বল। মাত্র দুই জন নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত করার বদলে ক্ষমতাকে নতুন শাসকদের হাতে কেন্দ্রীভূত রাখার পথ সুগম করেছে।
পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক জালাল চেরাগি বলেছেন, আসলে এই নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো সিরিয়ার অস্থায়ী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ আল-জোলানিকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
তার মতে, জোলানি এই ধরনের নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নিজেকে ও তার শাসনব্যবস্থাকে একটি জনসমর্থিত রাজনৈতিক কাঠামো হিসেবে তুলে ধরতে চান। কিন্তু মূল সমস্যা হলো, জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম ছিল। নির্বাচনটি না ছিল স্বাধীন, না ছিল প্রতিযোগিতামূলক বরং এটি ছিল পূর্বনির্ধারিত ও প্রতীকী একটি প্রক্রিয়া।”
কৌশল বিষয়ক বিশ্লেষক আমের আল সাবাইলা ফ্রান্স-টুয়েন্টি ফোর চ্যানেলকে বলেন, সিরিয়ার সংসদ নির্বাচন শুধুই একটি প্রতীকী পদক্ষেপ, যা সারা দেশের সকল জনগোষ্ঠী ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ মাহদি তালেবি জোলানির অতীত কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন- জুলানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা ও দায়েশ (আইএস)-এর সদস্য ছিলেন। তিনি আরও বলেন, "সিরিয়ায় রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, কিন্তু একটি ‘আমিরাত’ গঠন করে তা পরিবারিকভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে হস্তান্তর করা সম্ভব। জুলানি সেই দিকেই এগোচ্ছে।” তার মতে, জুলানি জনগণকে পাশ কাটিয়ে নিজে মনোনীত ব্যক্তিদের ভোটদাতা কমিটিতে বসিয়েছেন, ফলে জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিরা আসলে আনুগত্যশীল ও সুবিধাভোগী।
অন্যদিকে, সিরিয়ায় জাতিসংঘের দূত গিয়ার পেডারসন স্বীকার করেছেন, জোলানি নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্কারের জন্য প্রস্তুত নয় এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণে তার ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। সিরিয়ায় ‘পদ্ধতিগত সংস্কার’ জরুরি।#
পার্সটুডে/এসএ/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।