ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেবে: বাহরাইনের দাবি
বাহরাইনের রাজধানী মানামায় তিন দিনের ১৬তম মানামা সম্মেলন শেষ হল। নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধি এবং কয়েকটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
কিছু শ্লোগানের মধ্যদিয়ে এ সম্মেলন শেষ হয়। সৌদি আরব ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদেরই আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের কারণে সৃষ্ট ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এমন সময় তারা এ আহ্বান জানালেন যখন সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিতে সৌদি আরব মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের ৬ বছর ধরে চলা আগ্রাসন, সিরিয়ায় উগ্র আইএস সন্ত্রাসীদের প্রতি রিয়াদের অব্যাহত সমর্থন, কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা ও এ দেশটির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উল্লেখ করা যায়।
বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের আরেকটি লক্ষ্য ছিল দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আপোশ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরব দেশগুলোর উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানানো। বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল যিয়ানি আবারো আগ্রাসী ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য কল্যাণকর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এও দাবি করেন, মানামা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে। এমন সময় তিনি এসব দাবি করলেন যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক কম্পর্ক স্থাপনের পর ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিদের বর্বর আগ্রাসন ও সহিংসতার মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। ইসরাইলি অত্যাচারের ফল হিসেবে গত সপ্তাহে এক ফিলিস্তিনি শিশু শহীদ হয়েছে এবং যন্ত্রাংশের অভাবে গাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
মানামা সম্মেলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এ সম্মেলনে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি’র অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ নিরসনের জন্য মূলত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ওই মতবিরোধ এখনো অব্যাহত রয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামদ বিন হামুদ আল বু সাঈদি কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীদের চরম বিদ্বেষের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবেন বলে আমরা আশা করি। কারণ ওই সমঝোতা ছিল এ অঞ্চলে শান্তির জন্য অনেক বড় সাফল্য। তার এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সৌদি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান তুর্কি ফয়সাল। তিনি এ অঞ্চলের দেশগুলোতে হস্তক্ষেপের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্য থেকে বোঝা যায় বিভিন্ন ইস্যুতে আরব দেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং মানামা সম্মেলনেও সৌদি আরব একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। মোটকথা মানামা সম্মেলনে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য আসেনি। বরং অন্য সব কিছুর চাইতে এখানে আরব রাজা বাদশাহদের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার বিষয়টিই অগ্রাধিকার পেয়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৮