রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন ব্যর্থ?
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষষ্ঠদফা নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি ঐক্যমতে পৌঁছানোর ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ'র প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। হাঙ্গেরির বিরোধীতায় নিষেধাজ্ঞার এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন হতে পারে নি বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ প্রস্তাবে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সোভিয়েত যুগের দ্রোজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল আমাদানি করার অনুমোদন ছিল। এই পাইপলাইনটি ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে চলে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থেকে পাইপলাইনগুলোকে অব্যাহতি দিলে ইউরোপে রাশিয়ার তেল রপ্তানির এক তৃতীয়াংশ রোধ হবে এবং তারপরও মস্কোর জন্য এটি গুরত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস সরবরাহ করবে।
গত কয়েক সপ্তাহ আগে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এই বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার তেল আমদানির উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে ইইউ এ বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া এ পরিকল্পনার প্রধান প্রতিপক্ষ হাঙ্গেরি বলেছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাপক নির্ভরতার কারণে তার শোধনাগারগুলোকে আধুনিকায়ন করতে পাঁচ বছর সময় লাগবে এবং এরজন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরোর ঋণের প্রয়োজন হবে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবান এখন এ পরিকল্পনার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন। এটি মধ্য ইউরোপে হাঙ্গেরি এবং তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের মধ্যে ব্যবধান বা মতবিরোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। হাঙ্গেরির বিরোধিতার অর্থ হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের অন্যান্য পদক্ষেপগুলো বন্ধ করা যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার ব্যাংকের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরেপ করা, দেশটির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং কয়েক ডজন উচ্চ-পদস্থ রাশিয়ান কর্মকর্তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।
রবিবারের বৈঠকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে, এই ইস্যুটি সোমবার ও মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার একটি প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে যার মধ্যে তেল নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার গ্যাসসহ সব জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এটা এখন স্পষ্ট যে রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা এবং এর পরিণতি নিয়ে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে কোনো চুক্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়ান তেলের উপর নির্ভরশীল দেশগুলোর পক্ষে এটি পরিত্যাগ করা এবং বিকল্প তেলের উৎসের অনুসন্ধান করা সহজ হবে না। বিশেষত স্বল্প এবং এমনকি মধ্যমেয়াদে এটি তাদের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করবে। এই বিষয়ে বর্তমানে হাঙ্গেরি এবং পূর্বে স্লোভাকিয়ার নেতিবাচক অবস্থান দ্বারা এটা স্পষ্ট যে রাশিয়ার তেল নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় অর্থনীতিকে ধ্বংসের নিয়ে যাবে।
পার্সটুডে/এমবিএ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।