গুগলের ইসরাইল-প্রেমের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কর্মীরা
গুগলের ইসরাইল-প্রেম ও ফিলিস্তিন-বিদ্বেষ বাড়ছে! প্রতিবাদ জানাচ্ছেন খোদ কর্মীরাই!
ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গুগল ইহুদিবাদী ইসরাইলের পক্ষে তৎপর হয়ে ওঠায় খোদ এই কোম্পানির অনেক কর্মী প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবে প্রতিবাদের কারণে তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং এ কারণে তাদের কেউ কেউ গুগল ত্যাগ করার কথা ভাবছেন।
সম্প্রতি গুগল কোম্পানির একজন কর্মকর্তা ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে এই কোম্পানির শত কোটি ডলারের একটি চুক্তির নিন্দা জানানোর পর এখন এই কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন!
অ্যারিয়েল কোরেন নামের এই নারী (ইহুদি) কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার বলেছেন, এই বৃহত্তম কোম্পানি তার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছে ওই প্রতিবাদী তৎপরতার কারণে! গুগল-এর শিক্ষামূলক পণ্যের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন অ্যারিয়েল। তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে আমার প্রতি প্রতিশোধমূলক তৎপরতা, শত্রুতামূলক পরিবেশ ও অবৈধ নানা তৎপরতার ফলে গুগলে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এবং চলতি সপ্তা'হান্তে কোম্পানি ত্যাগ করা ছাড়া আমার অন্য কোনো উপায় নেই।
কোরেন আরও লিখেছেন, গুগল-এর যে কর্মীরা চান যে এ প্রতিষ্ঠান যেন তার নৈতিক নীতিমালা মেনে চলে- তাদের পরামর্শে কান না দিয়ে গুগল আগ্রাসীভাবে নানা সামরিক কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি পাওয়ার কাজে মেতে রয়েছে এবং তার প্রতিবাদী কর্মীদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে ও প্রতিশোধমূলক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি ছাড়াও আরও অনেক গুগল কর্মী এই প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন বলে অ্যারিয়েল কোরেন জানান।
কোরেন ইসরাইল ও তার সামরিক বাহিনীকে কম্পিউটার ও অন্য একটি প্রযুক্তিগত সেবা দেয়ার বিষয়ে গুগল ও আমাজন-এর সঙ্গে প্রজেক্ট নিম্বাস নামের ১২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তির বিরুদ্ধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবাদ তৎপরতায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
গত মার্চ মাসে লস এঞ্জেলস টাইমস এক খবরে জানিয়েছিল, গুগল ও আমাজন কর্মীদের কাছে কোরেন এ প্রচারপত্র বিলি করেন যে নিম্বাস নামের ওই প্রকল্প ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি জোরদার করবে এবং তা ইসরাইলি অভিবাসীদের অবৈধ আবাসনের সম্প্রসারণও ঘটাবে। তার বস তাকে জবাবে বলেছেন, তার উচিত ব্রাজিলে চলে যাওয়া অথবা চাকরির ওই পদ তাকে হারাতে হবে।
তবে গুগলের এক মুখপাত্র বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক তৎপরতাকে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। আমরা এই কর্মীর দাবিগুলো সম্পর্কে তদন্ত করছি। ইসরাইলের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ায় কোম্পানি গর্বিত বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
গুগলের আরও ১৫ জন কর্মী ফিলিস্তিনিদের প্রতি গুগলের আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং গুগলের যেসব কর্মী ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে তাদের ওপর গুগলের সেন্সরশিপ আরোপের বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই ১৫ জন ইউটিউবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছেও তারা এইসব বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এদের মধ্যে দুই কর্মী সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।
কোরেন তার প্রচারপত্রে আরও লিখেছেন, গুগল ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে এই কোম্পানির সহযোগিতার বিষয়ে ফিলিস্তিনি, ইহুদি, আরব ও মুসলমানদের উদ্বেগের কথাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে স্তব্ধ করে দিচ্ছে, এমনকি এ বিষয়ে তার যেসব কর্মী কথা বলছে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
গুগলের একজন কর্মী লিখেছেন, নিম্বাস প্রকল্প আমাকে এ অনুভূতি দিচ্ছে যে আমি আমার পরিবারের ওপর জুলুম চালিয়ে আমার জীবিকা অর্জন করছি! 'ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করুন'- এমন আহ্বান জানানোর কারণে গুগলের এইসব কর্মীকে তাদের অনেক সহকর্মী সেমিটিক-বিরোধী বলে অভিযুক্ত করেছেন (অথচ ফিলিস্তিনি ও আরব জাতিগুলোও মূলত সেমিটিক!)!
অন্য একজন গুগল কর্মী লিখেছেন, একজন ফিলিস্তিনিকে 'ফিলিস্তিনি-আমেরিকান' বলে উল্লেখ করার কারণে আমার এক সহকর্মী আমাকে 'সেমিটিক-বিরোধী' বলে অভিযুক্ত করেছেন! #
পার্সটুডে/২