কেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম স্থানীয় ও জাতীয় বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করছে?
(last modified Wed, 15 May 2024 08:58:14 GMT )
মে ১৫, ২০২৪ ১৪:৫৮ Asia/Dhaka
  • লাউস শোয়াব ১৯৭১ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন
    লাউস শোয়াব ১৯৭১ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম-এর যে বার্ষিক বৈঠক হয়েছে তাতে বিশ্বের সাধারণ জনগণের প্রতি এর অবস্থান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বা ডাবলিও ই এফ (WEF) একটি বেসরকারি, অনির্বাচিত ও জবাবদিহিতাবিহীন সংস্থা। ২০২০ ও ২০২১ সালের আগে এই সংস্থা তেমন একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু কোভিড-১৯ ও মহামারির ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই সংস্থা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করে নানা মিডিয়ার প্রচারণার সুবাদে। এর আগে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে এ সংস্থার বার্ষিক বৈঠক ছাড়া সংস্থাটির নাম তেমন একটা শোনা যেত না। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী সময়ে এখন মহামারি, লক-ডাউন বা কোয়ারেন্টাইন তথা রোগীদের পৃথক স্থানে রাখা, টিকা ইত্যাদি বিতর্কিত বিষয়গুলোর পর্দার আড়ালে বৈশ্বিক নানা বিষয়ে এই সংস্থাটির ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। আর এইসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কথিত টেকসই উন্নয়নের সনদ (যা ২০৩০ উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা  নামেও পরিচিত) থেকে শুরু করে মহামারি বিষয়ক বৈশ্বিক কনভেনশন। এসব বিষয় দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের জন্য উদ্বেগ বা হুমকি সৃষ্টি করেছে। ডাভোসের বার্ষিক সম্মেলন কেবল একদল সম্পদশালী ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতার চাকচিক্য ও আভিজাত্যপনা ও বক্তৃতা-বিলাস দেখানোর বৈঠক নয়। এ বৈঠকে এমন সব ব্যক্তিরা আসেন যারা আসলেই তাদের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখেন।

এক্স রোগ ও মহামারি সংক্রান্ত কনভেনশন 

ডাভোসে এ বছরের বৈঠকে এক্স রোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কল্পিত এ রোগ আবারও একটি মহামারিতে পরিণত হতে পারে। টেড্রোস ঘেব্রেইসাস (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক), ফিলিপস হেলথ কেয়ার-এর নির্বাহী ব্যবস্থাপক রুই জ্যাকবস ও অ্যাস্ট্রেজেনেকার বোর্ড অব ডিরেক্টরদের প্রধান মিশেল দিমারে এবারের বৈঠকের প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট এই অতিথিরা ছিলেন এমন সব ব্যক্তি যারা করোনার আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করেছেন।

অংশগ্রহণকারীরাই দাবি করেছেন যে এইসব ইস্যু বা বিষয়গুলো 'আকর্ষণীয়' এবং এসব বিষয় সামাজিক মিডিয়াগুলোর মনোযোগ আকৃষ্ট করবে।

এই প্যানেলের লক্ষ্য খুব স্পষ্ট: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে সরকারগুলোর ভূমিকা ম্লান করে নানা কোম্পানি ও এনজিও'র ভূমিকা জোরদার করা।

কোভিডের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার সময় হঠাৎ করেই মিলিয়ন মিলিয়ন নাগরিক হয়ে পড়েন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে ভ্রমণ করতে ও পাবলিক প্লেস বা জনসমাগমগুলোতে যেতে দেয়া হয়নি। 

ইইউ কমিশনার স্টেলা ক্রিয়াকিডস "স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল করার" বিষয়ে ডাভোসের একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, ভবিষ্যতে কি করা দরকার তার উদাহরণ হিসাবে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের ধারণার প্রশংসা করেছেন। 

সমালোচকদের সেন্সর করা

WEF প্রায়ই সমালোচনা বা প্রতিবাদগুলা নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আসছে। এ বছর ডাভোসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান Ursula von der Leyen  অসত্য তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু কোন্ তথ্যগুলো অসত্য তা ঠিক করে দেবে কে? নিজেদের পছন্দের ও কর্মসূচির বিরোধী যে কোনো কিছুকেই ভুল বা অসত্য তথ্য বলে উল্লেখ করার যে সংস্কৃতি তার উচ্ছেদ জরুরি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষকদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইউরোপে এই শ্রেণীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ দেখা গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে মৎস্য চাষ, কৃষিকাজ এবং স্থানীয় ও সাধারণ জনগণের পশু-পালনকেও সীমিত করতে চায়। বিল গেটস-এর কোম্পানির মত বড় বড় কোম্পানিগুলো এ লক্ষ্যেই বিশাল বিশাল জমি দখলের পদক্ষেপ নিচ্ছে। মানুষকে পোকা-মাকড় খাওয়ানো ও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য-সামগ্রী এবং পুরোপুরি ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা গোশত ও থ্রি ডি প্রিন্টারে ছাপানো গোশত ইত্যাদির প্রচলন করে সেসবের ওপর তাদেরকে নির্ভর করার ষড়যন্ত্র চলছে। 

কিছুকাল আগে এক ব্যক্তি কৌতুক করে লিখেছেন: আসল স্টিক বা মাংসের বিশেষ ধরনের টুকরা বা স্লাইস বা কাবাব ও হামবার্গার-এসব কেবল এলিট বা অভিজাত শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত থাকবে এবং সাধারণ জনগণের জন্য থাকবে যতসব ভেজাল খাদ্য ও পোকামাকড়। আর এসব খেয়েই তাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।  

মোটকথা এ বছরও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তার দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যগুলো প্রদর্শন করেছে। তারা বক্তৃতা দেয়ার সময় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, পরিবেশ সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি এইসব গালভরা শব্দগুলো তুলে ধরে সান্ত্বনা দিতে চান অথচ তাদের নীতি, লক্ষ্য ও কাজগুলো এসবেরই ঠিক চরম বিপরীত। #

পার্সটুডে

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।