জনাব জাতিসংঘ! শুনুন!
-
জনাব জাতিসংঘ! শুনুন!
পার্সটুডে-আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, একটি দেশের সরকারী দলের নেতাকে অন্য কোনো দেশে সরকারী সফরের সময় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হত্যা করা বা হত্যা করার চেষ্টা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।
পার্সটুডে'কে পাঠানো নিম্নলিখিত নোটটি ইরানে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ এবং তার দেহরক্ষীকে ইহুদিবাদী শাসকের মাধ্যমে হত্যার পর লেখা একটি খোলা এবং সমালোচনামূলক চিঠি। এই খোলা চিঠিতে জাতিসংঘের আচরণগত দুর্বলতা ও অবহেলার সমালোচনা করা হয়েছে:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার যে পরিকল্পনা ২০০১ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল, সেই আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আপনার কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রস্তাব ও চুক্তি পাস করে নি? এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল 'সন্ত্রাসী বোমা হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশন' যা ১৬৪ টি দেশ স্বাক্ষর করেছিল।
এই কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী, যে কেউ কোনো পাবলিক প্লেস, সরকারি ভবন এবং পাবলিক স্থাপনা কিংবা ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম স্টেশনে বিস্ফোরক আমদানি, স্থাপন অথবা বিস্ফোরণের চেষ্টা করবে যার ফলে ধ্বংস, আঘাত বা কারও মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তা একটি সন্ত্রাসী কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
জনাব জাতিসংঘ!
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮ অনুসারে একটি দেশের সরকারী দলের নেতাকে অন্য কোনো দেশে সরকারী সফরের সময় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হত্যা করা বা হত্যা করার চেষ্টা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।
একজন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক কর্মকর্তার হত্যা ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন ৩৩১৪ অনুযায়ী অপরাধ ও আগ্রাসন।
জনাব জাতিসংঘ!
ইহুদিবাদী ইসরাইলের পদক্ষেপ জাতিসংঘ সনদের অনেক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২-এ দেশগুলির আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। দখলকার ইসরাইল অন্য দেশে একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তা অর্থাৎ হামাসের পদস্থ নেতাকে হত্যা করেছে। এটা অতিথিকে আমন্ত্রণকারী দেশ ইরানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়। এটা মনে রাখা উচিত যে সামরিক, বেসামরিক উভয় কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রনায়কদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণকে সে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
জনাব জাতিসংঘ!
ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের একজন রাজনীতিবিদ এবং ফিলিস্তিনের একটি বৈধ পার্টির নেতা হিসেবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে ইরানে প্রবেশ করেছিলেন। আমরা সবাই জানি যে কোনো একটি সরকারের কর্মকর্তা এবং সম্পত্তি অন্যান্য সরকারের ভূখণ্ডে নিরাপত্তা পাবার অধিকার রাখে। অতএব, এই সন্ত্রাসী অভিযান নিরাপত্তা পাবার নীতি লঙ্ঘন করার পাশাপাশি, অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত। এই নিবন্ধের সপ্তম অনুচ্ছেদে, দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দখলদার ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে এবং এই পদক্ষেপটি ইরান সরকারের সম্মতি ও অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছিল।
জনাব জাতিসংঘ!
দখলদার ইসরাইলের অপরাধী চক্রের এইসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সুস্পষ্ট উদাহরণ। এই অপরাধী সরকার অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। ইসমাইল হানিয়া এবং তার দেহরক্ষীকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মৌলিক একটি উপাদান।
নিস:ন্দেহে এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবেও ইসরাইলকে দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।
জনাব জাতিসংঘ!
ইহুদিবাদী ইসরাইলের আন্তর্জাতিক অপরাধের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। খুন, ধর্ষণ, আগ্রাসন ও গুপ্তহত্যা ইত্যাদি। দখলকৃত অঞ্চলে প্রতিদিনই সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে তারা। এখনও এই ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা বিশ্বের এমন একটি সরকারের পক্ষে রয়েছি যে সরকার আন্তর্জাতিক আইনের কোনোটিই মানে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নিজেকে দায়ী বলে মনে করে, তারাও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মোকাবেলা করতে অক্ষম। এটা সুস্পষ্টভাবে বলা উচিত যে ইহুদিবাদী ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের একটি অংশ।
জনাব জাতিসংঘ!
ইরানের জন্য এবং এ অঞ্চলের জনগণ ও বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য কঠোর প্রতিশোধের অধিকার সংরক্ষিত আছে।#
পার্সটুডে/এনএম/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।