অভিবাসী ও মুসলিম বিরোধী ব্রিটেনের চারটি কট্টর সহিংস গোষ্ঠী
(last modified Mon, 12 Aug 2024 11:46:36 GMT )
আগস্ট ১২, ২০২৪ ১৭:৪৬ Asia/Dhaka
  • অভিবাসী ও মুসলিম বিরোধী ব্রিটেনের চারটি কট্টর সহিংস গোষ্ঠী

পার্সটুডে-ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দেশে সংঘটিত সাম্প্রতিক বিক্ষোভের নিন্দা করে দাবি করেছেন যে তার সরকার গুণ্ডাদের বিচার করবে এবং বিচারের জন্য যা যা করা দরকার সব করবে।

ইউরোপে চরম ডানপন্থীদের উত্থানের সর্বশেষ প্রতীকগুলোর একটি হল চরম সহিংসতার প্রকাশ। একটি কিশোর ছুরি দিয়ে একটি নাচের ক্লাসে আক্রমণ চালিয়ে তিন ছাত্রীকে হত্যা করার পর ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি শহরে গণবিক্ষোভ শুরু হয়ে গেছে। পার্সটুডে'র মতে, অপ্রমাণিত অভিযোগে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর উগ্র ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় লক্ষাধিক অভিবাসীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এই পরিস্থিতিকে "চরম ডানপন্থীদের সহিংসতাকামী এবং গুন্ডামিসহ মস্তিষ্কহীন ছোট্ট একটি সংখ্যালঘু'র আচরণের ফল বলে উল্লেখ করেছেন। ওই সহিংসতা ও অস্থিরতা মোকাবেলা করা হবে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইংল্যান্ডে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়াসহ জনমত সৃষ্টির আন্দোলন সম্প্রতি একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। ইংল্যান্ডের উগ্র ও জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠিগুলো একদিকে সাইবার স্পেস এবং রাজনৈতিক অঙ্গন-উভয় ক্ষেত্রেই অভিবাসীদেরকে একটি জাতীয় হুমকি বলে মনে করে।

এরইমধ্যে, মেহর সংবাদ সংস্থার তদন্ত অনুযায়ী চারটি ভয়ংকর গোষ্ঠি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তীব্র সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। গ্রুপগুলো হল:

১- চরমপন্থী 'ব্রিটেন ফার্স্ট' নামক গোষ্ঠি

'ব্রিটেন ফার্স্ট' যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসী বিরোধী এবং মুসলিম বিদ্বেষী আন্দোলনগুলোর একটি। উগ্র ডানপন্থি এই গোষ্ঠিটি একটি নব্য-ফ্যাসিবাদী দল এবং ঘৃণ্য গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত। ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) এর প্রাক্তন সদস্যদের মাধ্যমে ২০১১ সালে এই গোষ্ঠিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ব্রিটেনের এই উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠির এক প্রচারক জিম ডভসন। সে সুস্পষ্ট ভাষায় খোলামেলাভাবে মুসলমান, তাদের মসজিদ এবং অভিবাসীদের ওপর হামলা চালানোর কথা বলে। সে ব্রিটেনের ইসলামিকরণ এবং বহুসংস্কৃতিবাদ সম্পর্কে ধ্বংসাত্মক কন্টেন্টও তৈরি করে। মৌলবাদী এই গোষ্ঠিটির অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক কার্যকলাপ হলো ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী র‍্যাডিকাল প্রোপাগান্ডা চালানো। এদের রাজনৈতিক দলের নেপথ্যে একটি সামরিক শাখাও রয়েছে যা খুবই বিপজ্জনক।

২-'ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা লীগ' গ্রুপ (English Defence League)

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা লীগ আরেকটি উগ্র গোষ্ঠি যারা ব্রিটেনে ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। টমি রবিনসন, যার আসল নাম স্টিভেন ক্রিস্টোফার ইয়াক্সলে-লেনন, এই বিতর্কিত দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার আগের অপরাধের কারণে ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে গেছে, কিন্তু সে তার ভক্ত এবং অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিম ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আচরণ করতে উস্কানি দিচ্ছে।

৩-ব্রিটিশ ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি (UKIP)

গত কয়েক বছরে, ব্রিটিশ ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি অভিবাসী বিরোধী উস্কানী দিয়েছে এবং চরমপন্থীদের প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।

৪-নি:সঙ্গ নেকড়ে

'লোন উলভস' বা নি:সঙ্গ নেকড়ে আরেকটি চরমপন্থী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠির সদস্যরাও ইংল্যান্ডের সহিংসতাকামী চরম ডানপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য "হেলেন জোয়ান কক্স" এর হত্যাকাণ্ড চরমপন্থী এই 'লোন উলভস'-এর কাজ। হেলেন জোয়ান কক্স ছিলেন লেবার পার্টির সদস্য। তিনি প্রকাশ্যে ইহুদিবাদী ইসরাইলি অপশাসনের বিরোধিতা করতেন এবং ফিলিস্তিনি ও সিরিয়ার জনগণকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁকে তিনটি গুলি ও সাতটি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিল। হত্যা করার সময় তার হত্যাকারী চিৎকার করে বলছিল: 'ব্রিটেন আগে, ব্রিটেন আগে'।

অবশেষে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ইংল্যান্ডে অভিবাসী এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ডানপন্থী আন্দোলনের লড়াই বরফ পাহাড়ের একটি প্রান্ত মাত্র। স্পষ্টভাবেই দেখা যায় বর্ণবাদ এবং অভিবাসন বিরোধী মনোভাব ব্রিটেনে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।#

পার্সটুডে/এনএম/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ