ইসরাইলের ধারাবাহিক অপরাধযজ্ঞে আমেরিকার ভূমিকা কী?
(last modified Mon, 28 Oct 2024 13:06:23 GMT )
অক্টোবর ২৮, ২০২৪ ১৯:০৬ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলের ধারাবাহিক অপরাধযজ্ঞে আমেরিকার ভূমিকা কী?

প্রকাশিত সরকারি হিসাব অনুযায়ী আমেরিকা মাত্র এক বছরে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে ওয়াটসন ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এক প্রতিবেদনে লিখেছে,  ইহুদিবাদীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। পার্সটুডের মতে,আমেরিকা সবসময়ই যে কোনো পরিস্থিতিতে কৌশলগত মিত্র হিসেবে ইসরাইলের প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করেছে এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক,সামরিক ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ইসরাইলকে আমেরিকান সাহায্যের পরিমাণ এই ভুয়া সরকারের জীবদ্দশায় ৩১০ বিলিয়ান ডলারের বেশি পৌঁছেছে।

বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংকটের সময় এই সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন গত বছর এবং গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বিভিন্ন অস্ত্র ও সামরিক সাহায্য পাঠিয়ে সাহায্য করেছে।

প্রকৃতপক্ষে গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। আমেরিকার "ওয়াটসন" ইনস্টিটিউটের একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অবৈধ সরকারকে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যা অস্ত্র ও সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী  মোতায়েন রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গাইডেড বোমা ও রক-ব্রেকার পাঠানোর কথা উল্লেখ করা যায়। গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এই সরকারের অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত থাকার সময় ইসরাইলকে আমেরিকার সাহায্য অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে যার বিরুদ্ধে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে এবং বিশেষ করে ইসরাইলকে আমেরিকান সাহায্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক "ফ্রান্সিসকা আলবানিজ" এ প্রসঙ্গে বলেছেন: গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলা পশ্চিমাদের সমর্থন এবং তাদের দান করা অস্ত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ইসরাইলকে সর্বাত্মক আমেরিকান সাহায্যের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণ এমনকি কিছু মার্কিন কর্মকর্তা পর্যন্ত এই সাহায্য বন্ধ করার দাবি জানাতে বাধ্য হয়েছেন।  

আমেরিকার স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন যে আমেরিকার মিডিয়ার বেশিরভাগই এই দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং বলেছেন: "গাজায় যা ঘটছে তা আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়; যেখানে দিন দিন মানবিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে।

স্যান্ডার্স যোগ করেছেন, এসব ব্যাপক সন্ত্রাস এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মধ্যেও  আমেরিকা গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারকে সমর্থন করার জন্য সামরিক সহায়তার আকারে বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং হাজার হাজার বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র প্রেরণ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরাইলকে সাহায্যের বিষয়টি এখন আমেরিকার সমাজে এবং ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান দলের মধ্যে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে এই উভয় দলই বিভিন্ন ফরম্যাটে ইসরাইরকে সমর্থন অব্যাহত রাখার উপর জোর দিচ্ছে।

একই সময়ে অনেক আমেরিকান নাগরিক এই দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির অবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং এই ধরনের সাহায্যকে আমেরিকার অর্থনৈতিক সমস্যার ক্রমবর্ধমান কারণ হিসাবে বিবেচনা করছেন।

প্রকাশিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সিবিএস জরিপে অংশগ্রহণকারী আমেরিকান জনগণের দুই তৃতীয়াংশ;তারা ইসরাইলকে ওয়াশিংটনের সাহায্যের বিরোধিতা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট এই সরকারের জীবদ্দশায় তেল আবিবকে কয়েকশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার কথা উল্লেখ করে স্বীকার করেছে: যদি এই অর্থটি দারিদ্র্যসীমার নীচের ৩০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় তা হলে প্রত্যেক ব্যক্তি দশ হাজার ইউ এস ডলার পেতেন।

সমস্ত আমেরিকান সাহায্য এবং গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের এসব ধারাবাহিক অপরাধযজ্ঞের পরও ইসরাইলিদের জন্য কোন সুস্পষ্ট সম্ভাবনা নেই। ইসরাইলের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সাবেক প্রধান "ইউজিন ক্যান্ডেল" এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আট দশক ধরে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সহায়তা সত্ত্বেও এটি খুব সম্ভবত যে আগামী দশকে ইসরাইল একটি স্বাধীন ইহুদি সত্তা হিসাবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হবে না।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন মিরশায়ারও এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, ইসরাইলের  বিরুদ্ধে আমেরিকার সুরক্ষাবাদী নীতিগুলো কেবল আমেরিকার জাতীয় স্বার্থকেই বিপন্ন করছে না পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রতি ইন্ধনয যোগাচ্ছে। মার্কিন নীতির এই  ধারাবাহিকতা বিশ্বে আমেরিকাকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ