কূটনীতি নাকি অবাধ্যতা? মার্কিনীরা মানবিক আচরণের মৌলিক শিষ্টাচারও পালন করে না।
-
কূটনীতি নাকি অবাধ্যতা?
পার্সটুডে-লেবাননের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের অপমানের ন্যায্যতা প্রমাণ করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির রাষ্ট্রদূত টম বারাক, গত মঙ্গলবার বৈরুত সফর করেন। ওই সফরে লেবানন সরকারের কাছে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য ইসরাইলিদের দাবির ওপর চাপ প্রয়োগ এবং নির্দেশ প্রদান অব্যাহত রাখেন। সেইসঙ্গে তারা লেবাননের তিন রাষ্ট্রপতির সাথে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে এই সফরটি ছিল এমন এক অপমানের অংশ যা পশ্চিমা কূটনীতির কলঙ্কিত ভাবমূর্তি থেকে উদ্ভূত। লেবাননে নিযুক্ত মার্কিন বিশেষ দূত টম বারাক এই সফরে বাআবদা প্রাসাদে এসেছিলেন অপমান করতে এবং "প্রাণী" শব্দটি ব্যবহার করে চলে যেতে। বারাক তার সাক্ষাৎকার নিতে ইচ্ছুক সাংবাদিকদের বলেছিলেন: "পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলে এবং আচরণ পশুসুলভ হয়ে উঠলে, আমরা এখান থেকে চলে যাব।"
লেবাননের হিজবুল্লাহ দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে লেবাননের সাংবাদিকদের অপমান করার জন্য আমেরিকার প্রতিনিধিদল, বিশেষ করে টম বারাকের সমালোচনা করেছে। হিজবুল্লাহ বলেছে: আমেরিকার হুমকি এবং লেবানিজ সাংবাদিকদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব চাওয়ার যুক্তি অবাক করার মতো নয়। দেশটির কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তাকে তিরস্কার করা। মেহের নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক তার হাস্যকর আচরণের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে একটি ভার্চুয়াল কথোপকথনে দাবি করেছেন: আমি খারাপ এবং অপমানজনক উপায়ে প্রাণী শব্দটি ব্যবহার করি নি। আমি যা বোঝাতে চেয়েছিলাম তা হল: আমরা কি শান্ত থাকতে পারি এবং একটু অপেক্ষা করতে পারি? হ্যাঁ, আমাদের সভ্য হওয়া উচিত!
তিনি আরও বলেন: মিডিয়া যখন তাদের কাজ করছিল তখন আমার পদক্ষেপ অনুপযুক্ত ছিল। আমি যে কারও চেয়ে ভালো জানি যে এই পরিস্থিতি জটিল এবং কঠিন। সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাথে কথা বলার সুযোগ দেওয়া বিরল। তারা ভেবেছিল সেই ব্যক্তিটি আমি। আমার আরও ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে, লেবাননের গণমাধ্যম সদস্যরা মার্কিন প্রতিনিধির অভদ্র এবং অশিষ্ট আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা জানতে চেয়েছেন: আমেরিকার একজন কর্মকর্তা কি ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সাথে সেভাবে কথা বলতে পারেন যেভাবে টম বারাক বৈরুতে লেবানিজ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলেন?
লেবাননের সাংবাদিক ইয়োলা ইয়াকুবিয়ান বারাকের অপমানের জবাবে বলেন: এই অপমান লেবাননের সংবাদমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের সদস্যদের মর্যাদা হ্রাস করার পরিবর্তে বরং পশ্চিমা কূটনীতির ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন করে।
লেবাননের আরেক সাংবাদিক ইনাস কারিমা বলেন: মার্কিন প্রতিনিধি টম বারাক লেবাননের সর্বোচ্চ সরকারি মঞ্চ থেকে লেবাননের সাংবাদিকদের সভ্যতা ও নগরায়নের শিক্ষা দিয়েছেন এবং হুমকি দিয়েছেন যে যদি পরিবেশ পাশবিক বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয় তবে তিনি চলে যাবেন। দেখুন লেবাননের কর্মকর্তাদের অপমানজনক নীরবতার মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কীভাবে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের অপমান করেছেন।
লেবাননের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন: "আপনারা কি আত্মসমর্পণের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখানে আপনার এবং আপনার স্বদেশবাসীর প্রতি আমেরিকার অপমানজনক ও অবমাননাকর আচরণের মুখে আপনি নীরব থাকবেন? আপনাকে হয় "টম বারাক" কে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে হবে, নতুবা এই পরিস্থিতি আপনার স্লোগানের পতন এবং আপনার অপমান ও পরাধীনতা প্রকাশের প্রমাণ হতে থাকবে।#
পার্সটুডে/এনএম/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।