প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় বানালেন ট্রাম্প; উদ্দেশ্য কী?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151730-প্রতিরক্ষা_মন্ত্রণালয়কে_যুদ্ধ_মন্ত্রণালয়_বানালেন_ট্রাম্প_উদ্দেশ্য_কী
পার্সটুডে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে “যুদ্ধ মন্ত্রণালয়” রেখেছেন।
(last modified 2025-09-08T11:35:34+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫ ১৮:০০ Asia/Dhaka
  • প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় বানালেন ট্রাম্প; উদ্দেশ্য কী?
    প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় বানালেন ট্রাম্প; উদ্দেশ্য কী?

পার্সটুডে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে “যুদ্ধ মন্ত্রণালয়” রেখেছেন।

এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০তম নির্বাহী আদেশ, যা বিশ্ব রাজনীতি ও সামরিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই নাম পরিবর্তন কেবল প্রতীকী পদক্ষেপ নয়; বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক কৌশলে পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের নাম ছিল “যুদ্ধ মন্ত্রণালয়”। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাসের মাধ্যমে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে নিয়ে একটি যৌথ কাঠামো গড়ে তোলা হয়,  এই কাঠামোকে জাতীয় সামরিক কাঠামো বলা যেতে পারে। আর ১৯৪৯ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়”। তখনকার যুক্তি ছিল—পরমাণু  যুগে যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণের নীতি থেকে সরে এসে প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক নীতি সামনে রাখতে হবে।

কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়” নামটি অতি প্রতিরক্ষামুখী শোনায়। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে তিনি বলেন,

আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলাম, আর তখন ‘যুদ্ধ মন্ত্রণালয়’ নামটির প্রভাব ছিল অনেক শক্তিশালী"। তার মতে, এই নাম শক্তি, আক্রমণ ও বিজয়ের প্রতীক।

ট্রাম্পের দাবি, “আক্রমণের দ্বিধাহীন প্রস্তুতি থেকেই প্রকৃত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়”। তার নিযুক্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি “যুদ্ধের মানসিকতা ও বিজয়ের স্পৃহা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ”। তার ভাষায়—“আমেরিকান সেনাবাহিনীকে কেবল প্রতিরক্ষার জন্য নয় বরং জয়লাভের জন্য লড়াই করতে হবে।

তবে সমালোচকদের মতে, গত ৭৫ বছরে এই মন্ত্রণালয় কখনোই কেবল প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং কোরিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন, লিবিয়া পর্যন্ত—অসংখ্য যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি কিউবা, গ্রেনাডা ও পানামাতেও যুদ্ধের আগুন ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রই। তাই ট্রাম্প যে নামটি ফিরিয়ে এনেছেন, সেটিই হয়তো এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চরিত্রকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সব সময় যুদ্ধকামীই ছিল।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে এক পরোক্ষ যুদ্ধে জড়িত। সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডে অবৈধ হামলা চালিয়েছে এবং ভেনিজুয়েলায় সামরিক অভিযান চালানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অপচয় করা হচ্ছে। তার মতে, সামরিক প্রতিষ্ঠানের নতুন ব্র্যান্ডিংসহ নানা ক্ষেত্রে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, তা সেনা পরিবারের সহায়তা বা কূটনীতি জোরদার করার মতো জরুরি খাতে ব্যবহার করা যেত।

কিছু বিশ্লেষক বলছেন, “যুদ্ধ” শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়ার প্রতি আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। 

কিন্তু বিশ্লেষকদেরই আবার অনেকে মনে করে, এটি কেবল প্রতীকী ঘোষণা; প্রকৃত নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। এছাড়া, আনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ শুধু “যুদ্ধ মন্ত্রণালয়” নামটিকে বিকল্প নাম হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন ট্রাম্পের সেই রাজনৈতিক প্রচেষ্টারই অংশ, যেখানে তিনি ভাঙা মর্যাদা পুনর্গঠন করে আমেরিকাকে আবার এক অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। তার নিজের ভাষায়—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো বড় যুদ্ধে জিততে পারেনি। তাই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে যেন সেই সামরিক ব্যর্থতার ইতিহাসকেই আড়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এসএ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।