কিউবার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নীতি: মার্কিন বলদর্পিতার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত
-
কিউবার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নীতি: মার্কিন বলদর্পিতার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত
পার্সটুডে- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক আলেনা দুহান ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কিউবার মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। তিনি এসব নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, কিউবার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনের বহু মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, এসব আর্থিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কিউবার স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাই তিনি এসব সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার দাবি জানান।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বহু দশক ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষকরে ওয়াশিংটনের নীতির বিরোধী দেশগুলোতে এসব নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার আরও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিগত কয়েক দশকে বিভিন্ন আর্থিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে স্বাধীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পথ অনুসরণকারী দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন—এটি এমন একটি নীতি যা বাস্তবে কোটি মানুষের জীবনে সংকট তৈরি করেছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশগুলোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়, বৈদেশিক বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক উৎসে প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, ওষুধ আমদানিতে জটিলতা তৈরি হয়, চিকিৎসা সরঞ্জাম দুর্লভ হয়ে ওঠে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হন রোগী, শিশু এবং সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠী।
কিউবা আজ এ বাস্তবতার সবচেয়ে সুস্পষ্ট উদাহরণ। ১৯৬২ সাল থেকে দেশটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ বহন করছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক হাভানা সফরকালে বলেন, এসব নিষেধাজ্ঞা গুরুতরভাবে কিউবার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে এবং জনগণের খাদ্য ও ওষুধ পাওয়ার পথ রুদ্ধ করেছে। এরিমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৬৫ ভোটে আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে; এটি একটি বৈশ্বিক ঐকমত্য যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই নীতি শুধু আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়ে নয় বরং নৈতিকতার বিচারেও গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
কেবল কিউবাই নয়, ইরানসহ আরও দেশ এ ধরনের নীতির শিকার। ২০১৯ সালে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সতর্ক করে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ইরানিদের স্বাস্থ্য অধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের প্রাপ্যতা সীমিত করেছে।
তবে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে নিষেধাজ্ঞা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি; বরং বহু ক্ষেত্রে উল্টো ফল দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশগুলো মার্কিন প্রত্যাশা অনুযায়ী নতি স্বীকার করেনি; বরং অনেকেই অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়িয়েছে, নতুন অংশীদার খুঁজে পেয়েছে এবং আরও স্বাধীন কৌশল গ্রহণ করেছে।
পাঁচ বাক্যে এই প্রতিবেদনের মূল তথ্য:
জাতিসংঘের কর্মকর্তা বলেছেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা কিউবার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে এবং এগুলো আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুতর সংকট তৈরি হয়েছে, যার প্রধান ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
কিউবা ছাড়াও ইরানসহ বহু দেশ এসব মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বাস্থ্য ও মৌলিক প্রয়োজন পূরণে বড় বাধার মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞাকে রাজনৈতিক চাপ ও বৈশ্বিক প্রভাব বজায় রাখার মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, এসব নিষেধাজ্ঞা লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বরং দেশগুলোকে স্বাধীন নীতি গ্রহণ ও নতুন অংশীদার খুঁজতে আরও উৎসাহিত করছে।
পার্সটুডে/এসএ/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন