তুরস্ক কি ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য? হারেৎজ-এর সতর্কবার্তা
-
ইসরায়েল–তুরস্ক সংঘাতের নতুন মাত্রা
পার্সটুডে: সম্প্রতি একটি হিব্রু ভাষার সংবাদপত্র অনুমান করে বলেছে, কাতারের পর তুরস্ক ইসরায়েলের পরবর্তী আগ্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এবং এ ধরনের ঘটনা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ এক বিশ্লেষণে লিখেছে, যদি ইসরায়েল তার পরবর্তী আগ্রাসী পদক্ষেপ হিসেবে তুরস্ককে টার্গেট করে এবং আঙ্কারা-তেলআবিবের মধ্যে চলমান উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়, তবে এর ফলাফল কেবল পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ তালিকায় একটি নতুন সংঘাত যোগ করা নয়; বরং এটি হবে এক ধরনের 'কৌশলগত ভূমিকম্প' যা বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দেবে।
হারেৎজ উল্লেখ করেছে, কয়েক দিন আগে ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত দাবি করেছিল- তুরস্কে অবস্থানরত হামাসের একটি সেল ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভিরকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল, যা তারা নস্যাৎ করেছে। তবে আঙ্কারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে হারেৎজ লিখেছে, এই প্রকাশ্য অভিযোগ একটি বিতর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন করেছে—তুরস্ক কি একজন ইসরাইলি মন্ত্রীকে হত্যার জন্য হামাসকে সাহায্য করতে পারে? যদি এ ষড়যন্ত্র সফল হতো, তবে ইসরায়েল তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারত।
এই হিব্রু দৈনিকটি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের বীজ এমন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অনেক কর্মকাণ্ডকেই যুদ্ধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ইসরায়েল-তুরস্ক বৈরিতা পারস্পরিক। কারণ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে আর্মেনিয় গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ ধরনের তীব্র বাকযুদ্ধ কেবল 'প্রদর্শনীমূলক নাটক' নয়, বরং তা বাস্তব উত্তেজনার প্রতিফলন।
পত্রিকার বিশ্লেষক মনে করেন, আঙ্কারার ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব এখন এক অটল নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রধান চালিকা শক্তি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের 'ব্যক্তিগত এজেন্ডা'।
হারেৎজ আরও লিখেছে, কাতারে সিনিয়র হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলা আঙ্কারার জন্য এক সতর্কবার্তা ছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে—যদি ইসরাইল দোহায় হামাসকে নির্মূল করার চেষ্টা করতে পারে, তাহলে কি তা তুরস্কে তাদের এজেন্টদের লক্ষ্য করতে পারে না? এই পত্রিকাটির মতে, বর্তমানে তুরস্ক-ইসরায়েল যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি লুকিয়ে আছে লুকোচুরি হত্যা বা বাকযুদ্ধে নয়, বরং সিরিয়ার ওপর তাদের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সিরিয়ায় তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান দেখা গেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে সিরিয়ার দ্রুজ ও সুন্নি বেদুইন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকলে, তুরস্ক আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা বলেছিল, ওই সময় ইসরায়েল দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হস্তক্ষেপ করেছিল। দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েল সিরিয়ায় তুরস্কের নজরদারি সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেয়।
হারেৎজ শেষদিকে সতর্ক করে বলেছে, যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তবে এর প্রভাব কেবল সিরিয়ার তাৎক্ষণিক ধ্বংসযজ্ঞেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং শত্রুতা ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সেক্ষেত্রে তুরস্কের নৌবাহিনী ইসরায়েলের সমুদ্রতীরবর্তী জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালাতে পারে। আর যুদ্ধ পূর্ণমাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে, তাতে সাইবার আক্রমণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং প্রক্সি ওয়ার বা প্রতিনিধিত্বমূলক যুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৭