ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশের
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল পশ্চিমা ৪ দেশ, ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
-
ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে শিক্ষার্থীদের মিছিল
ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার পর এবার পর্তুগালও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫০টিরও বেশি।
গতকাল (রোববার) নিউইয়র্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো র্যাঞ্জেল। তিনি জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সোসা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই হলো “ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ।”

ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি
লিসবন সরকারের এই পদক্ষেপ আসে ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর। এই তিনটি কমনওয়েলথ দেশও রোববার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। অধিবেশন শুরু হবে মঙ্গলবার।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বক্তব্যের শুরুতে স্টারমার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান বীভৎসতার মুখে আমরা শান্তির সম্ভাবনা এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করছি। এর অর্থ হলো একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, এ মুহূর্তে যার কোনোটিই আমাদের কাছে নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় হয়েছে। শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার আশায় আজ আমি এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’

গতকাল সবার আগে কানাডার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতির প্রতি আমরা আমাদের অংশীদারত্ব প্রস্তাব করছি।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এতে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের বৈধ রাষ্ট্র প্রত্যাশা স্বীকার করছে। এই স্বীকৃতিতে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ।
এর আগে শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এক উপদেষ্টা বলেন, ফ্রান্সের পাশাপাশি অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও সান মারিনোও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই ঘোষণাগুলো আসবে আগামী সোমবার নিউইয়র্কে সৌদি আরবের সঙ্গে ফ্রান্সের সহ-আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে। কানাডা ও যুক্তরাজ্যও একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এভাবে এ দেশগুলো যোগ দেবে প্রায় ১৪৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে, যারা চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি জাতিসংঘ সদস্যদের প্রায় ৭৫ শতাংশ।

ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি ব্রিটেনের স্বীকৃতি অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তাঁর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক বৈধতার সঙ্গে ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘এই স্বীকৃতি আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি ও পবিত্র স্থানের অধিকার এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার নিশ্চিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলোকে তীব্র সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফ্রান্সের ঘোষণাকে 'উদ্বেগজনক সিদ্ধান্ত' বলে অভিহিত করে বলেছেন এটি “শুধু হামাসের প্রচারণাকেই সাহায্য করবে।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জর্ডানের পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে এর জবাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ গত বছর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে দখলকৃত পশ্চিম তীরে নতুন অবৈধ ইসরায়েলি বসতি গড়ে তোলা হবে।
লুক্সেমবার্গের নিষেধাজ্ঞার ভাবনা
সপ্তাহের শুরুর দিকে লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুস ফ্রিডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিয়ার বেটেল সংসদীয় কমিশনকে জানান, তারাও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বেটেল আরও বলেন, তিনি সংসদে একটি বিল প্রস্তাব করবেন যাতে লুক্সেমবার্গ অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। #
পার্সটুডে/এমএআর/২২