লন্ডন কেন পুলিশের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152754-লন্ডন_কেন_পুলিশের_ক্ষমতা_আরও_বাড়িয়ে_দিচ্ছে
পার্সটুডে- ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছে- বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য পুলিশকে নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সম্প্রতি “অ্যাকশন ফর প্যালেস্টাইন” নামের সংগঠনের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
(last modified 2025-10-08T10:29:14+00:00 )
অক্টোবর ০৮, ২০২৫ ১৬:২১ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনি সমর্থকদের সাথে ব্রিটিশ পুলিশের সহিংস সংঘর্ষ
    ফিলিস্তিনি সমর্থকদের সাথে ব্রিটিশ পুলিশের সহিংস সংঘর্ষ

পার্সটুডে- ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছে- বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য পুলিশকে নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সম্প্রতি “অ্যাকশন ফর প্যালেস্টাইন” নামের সংগঠনের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপটি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন এবং এর সাথে লন্ডনের দমনমূলক অভ্যন্তরীণ নীতি ও ইসরায়েলপন্থী পররাষ্ট্রনীতির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

ব্রিটেনে প্রতিবাদ দমনে পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি

নূর নিউজের বরাতে পার্স টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানোর এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন স্টারমার সরকার নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে জর্জরিত। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে ব্যর্থ হয়েছে এবং ব্রেক্সিট বাতিল করাও দেশের দুর্বল অর্থনীতির ক্ষত সারাতে পারেনি।

বর্ধিত করের চাপ, সামাজিক খাতে বাজেট কাটছাঁট এবং স্টারমারের নিজের মুখে শোনা “বাজেট বিষয়ক বেদনাদায়ক সিদ্ধান্তের” স্বীকারোক্তি—এসবই এই ইঙ্গিত দেয় যে, ব্রিটেন এখন মিতব্যয়ী অর্থনীতি ও জনঅসন্তোষের পথে এগোচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকৃত অর্থে একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ অর্থাৎ শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিবাদ দমনকে বৈধতা প্রদান করা।

স্টারমার সরকার আন্তর্জাতিক সংকট উসকে দিয়ে—যেমন ইউক্রেন যুদ্ধে অব্যাহত সমর্থন ও পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে—দেশের ভেতরের চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আসলে এটি লন্ডনের অভ্যন্তরীণ সংকটকে বৈশ্বিক অঙ্গনে স্থানান্তরিত করার প্রচেষ্টা মাত্র।

স্টারমার ও ট্রাম্পের উদ্বেগজনক সাদৃশ্য

লেবার পার্টির সরকার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে দ্রুত ডানপন্থী চরমপন্থার দিকে এগোচ্ছে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো স্টারমারও উগ্র জাতীয়তাবাদী ভোটব্যাংক ধরে রাখতে অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিতে স্থায়ী আবাসনের শর্ত কঠিন করা হয়েছে, যদিও অভিবাসীরাই দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক সেবাখাতের একটি বড় অংশের মূল কাঠামো। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ সরকার ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ও ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা জোরদারের মাধ্যমে কার্যত আমেরিকার বৈরী নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামনের সারিতে রয়েছে। ওয়াশিংটনকে এভাবে এই অন্ধ অনুসরণ করা থেকেই এটা প্রমাণিত হয় যে, স্টারমার সরকার সেই একই রাজনৈতিক কাদায় পা দিচ্ছে, যেখানে একসময় ট্রাম্প প্রশাসন আটকে পড়েছিল।

ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন এবং গণবিক্ষোভ

পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধির ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ব্যাপক রূপ নিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের রাস্তায় লাখো মানুষ নেমেছে।

তবুও লন্ডন সরকার ইসরায়েলকে নানা উপায়ে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা গাজা “পরিচালনার” জন্য টনি ব্লেয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে রাফায় চলমান গণহত্যাকে উপেক্ষা করার মতো বিষয়গুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ ব্রিটিশ রাজনীতির গভীরে প্রোথিত জায়োনিস্ট লবির প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ।

সরকার যে “ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা”র কথা বলছে, সেটি আসলে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবাদ দমন করার এক ছদ্মাবরণ মাত্র। পুলিশের অতিরিক্ত ক্ষমতা এখন লন্ডনের যুদ্ধবাজ ও অবৈধ নীতির রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে।

যে ব্রিটিশ সরকার অন্য দেশগুলোতে জনগণের বিক্ষোভকে “স্বাধীনতা আন্দোলন” বলে সমর্থন করে, সেই সরকারই এখন নিজ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করছে।#

পার্সটুডে/এসএ/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।