পাশ্চাত্যের মানুষ কেন আর গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না?
-
পাশ্চাত্যের মানুষ কেন আর গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না?
পার্সটুডে- গবেষণা সংস্থা ইপসোস জানিয়েছে, পাশ্চাত্যের ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনের রাজনীতি নিয়ে হতাশা এবং ভবিষ্যৎকে ঘিরে উদ্বেগ রয়েছে। এই দুই বিষয়ই পাশ্চাত্যের ৯টি দেশের ভোটারদের মধ্যে গণতন্ত্র ইস্যুতে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।
সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম পলিটিকো এক প্রতিবেদনে লিখেছে, পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটাররা গণতন্ত্রকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে। তাদের আশঙ্কা- চরমপন্থী দল, ভুয়া খবর এবং দুর্নীতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইপসোস ১২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, সুইডেন, ক্রোয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডের নয় হাজার ৮০০'র বেশি ভোটারের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এসব দেশের গড়ে ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে অসন্তুষ্ট।
যেসব ভোটার নিজেদের রাজনৈতিক বর্ণালির দুই প্রান্তের—অর্থাৎ চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী—হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি মনে করেন যে গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসে গত এক বছরে রাজনৈতিক সংকটের কারণে সন্তুষ্টি কমে গেছে। জাতীয় বাজেট সংকটের কারণে বারবার ফ্রান্সের সরকারের ভেঙে গেছে, আর নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারও এ বছরের শুরুতেই ভেঙে পড়ে, যার ফলে অক্টোবরে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অধিকাংশ ভোটার মনে করেন, জাতীয় সরকারে তাদের মতামত পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। ক্রোয়েশিয়া এবং ব্রিটেনে সন্তুষ্টি ছিল সবচেয়ে কম; উভয় দেশেই মাত্র ২৩ শতাংশ ভোটার বলেছেন, সরকার কার্যকরভাবে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ ভোটার মনে করেন, ২০২০ সালের পর থেকে গণতন্ত্রের অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেছে।
ফ্রান্স (৮৬ শতাংশ) এবং স্পেনে (৮০ শতাংশ) ভোটাররা আগামী পাঁচ বছরে নিজেদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন। উত্তরদাতারা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে ভুয়া তথ্যের বিস্তার, দুর্নীতি, রাজনীতিবিদদের জবাবদিহির অভাব এবং চরমপন্থার প্রসারকে উল্লেখ করেছেন।
ইপসোসের ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিভাগের সিনিয়র পরিচালক গিডিয়ন স্কিনার পলিটিকোকে বলেছেন, “গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তৃত উদ্বেগ রয়েছে; মানুষ মনে করে জাতীয় সরকারগুলো তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য, রাজনীতিবিদদের জবাবদিহির অভাব এবং চরমপন্থা নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ আছে। বেশিরভাগ দেশে মৌলিক পরিবর্তনের দাবি বাড়ছে।”
এই জরিপ এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন পশ্চিমা দেশে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জি-২০–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সম্পদ-বৈষম্য চরমপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করছে, রাজনৈতিক বিতর্ককে দুর্বল করছে এবং কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার পথ সুগম করছে।
এদিকে, ইউরোপীয় কমিশন এ সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে।#
পার্সটুডে/এসএ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।