ডিজিটাল অর্থনীতি কীভাবে বিশ্ব বাণিজ্যকে বদলে দিচ্ছে
পার্সটুডে: আধুনিক বিশ্বে 'ডিজিটাল অর্থনীতি' অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শ্রমবাজারে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ডিজিটাল অর্থনীতি' বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)-নির্ভর বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রক্রিয়াগুলোকে বোঝায়। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর থেকে বিপণন, বিতরণ ও পণ্য-সেবার বিক্রি মৌলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে।
ডিজিটাল অর্থনীতির বিভিন্ন দিক এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাবে
ডিজিটাল অর্থনীতি সেই সকল কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে যা ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এর বিভিন্ন উপাদান হলো তথ্য, সেবা, পণ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তি। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD)-এর মতে, ডিজিটাল অর্থনীতি দুটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত: উৎপাদন খাত এবং সেবা খাত।
- উৎপাদন খাত: এতে ডিজিটাল পণ্য এবং শারীরিক উভয় ধরনের পণ্য অন্তর্ভুক্ত।
- সেবা খাত: এতে অনলাইনে সরবরাহ করা সব ধরনের সেবা অন্তর্ভুক্ত।
ডিজিটাল অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল অর্থনীতির বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসি-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ১২ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে এবং আগামী বছরগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে অনুমান করা হয়। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণসমূহ হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তার এবং ভোক্তা আচরণের পরিবর্তন।
ডিজিটাল অর্থনীতি ও ই-কমার্স
ইলেকট্রনিক বাণিজ্য (ই-কমার্স) ডিজিটাল অর্থনীতির একটি মূল স্তম্ভ। এই ধরনের বাণিজ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়কে বোঝায়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অনলাইন বিক্রি ৪.২৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং ভবিষ্যতেও এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
ই-কমার্স কেবল কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক নয়, বরং ভোক্তাদেরও সহজে মূল্য তুলনা করে পণ্য কেনার সুযোগ প্রদান করে।
আধুনিক প্রযুক্তির বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস ও ব্লকচেইনসহ আধুনিক প্রযুক্তি বৈশ্বিক বাণিজ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিগতকৃত সেবা প্রদান করতে পারে।
- ইন্টারনেট অব থিংস: পণ্যের মান ও উৎপাদন দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে, ফলে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত হয়।
ডিজিটাল অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ
যদিও ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতির সুযোগ এনে দিয়েছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সাইবার নিরাপত্তা সমস্যা। তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার হামলার ঝুঁকিও বাড়ছে।
সাইবার সিকিউরিটি ভেঞ্চার্স-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সাইবার হামলার কারণে বৈশ্বিক ক্ষতির পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, কোম্পানিগুলোর জন্য সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এখন অপরিহার্য।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৭