ইউরোপ কেন অভিবাসীদের বিতাড়ন ও আটকের নীতির ওপর জোর দিচ্ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154930-ইউরোপ_কেন_অভিবাসীদের_বিতাড়ন_ও_আটকের_নীতির_ওপর_জোর_দিচ্ছে
পার্সটুডে- ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ'র সদস্য দেশগুলো 'বৈধ বসবাসের অনুমতি নেই এমন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি সাধারণ ব্যবস্থা তৈরির বিধিমালা'র খসড়া অনুমোদন করেছে।
(last modified 2025-12-09T13:42:47+00:00 )
ডিসেম্বর ০৯, ২০২৫ ২০:০০ Asia/Dhaka
  • অভিবাসন প্রত্যাশী ঠেকাতে পুলিশ
    অভিবাসন প্রত্যাশী ঠেকাতে পুলিশ

পার্সটুডে- ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ'র সদস্য দেশগুলো 'বৈধ বসবাসের অনুমতি নেই এমন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি সাধারণ ব্যবস্থা তৈরির বিধিমালা'র খসড়া অনুমোদন করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরা ব্রাসেলসে 'বৈধ বসবাসের অনুমতি নেই এমন তৃতীয় দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সাধারণ ব্যবস্থা তৈরির বিধিমালা'র খসড়া অনুমোদন করেছেন। ইউরোপীয় সংসদে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এই বিধিমালা ২০০৮ সালে গৃহীত তথাকথিত রিটার্ন ডাইরেক্টিভের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং এই ইউনিয়ন জুড়ে অভিবাসীদের বহিষ্কারের জন্য একটি একক কাঠামো তৈরি করবে।

এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন এক সময় যখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অভিবাসীদের অধিকার রক্ষাকারী কয়েক ডজন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন এর চূড়ান্ত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। নতুন ইইউ প্রস্তাবনায় অভিবাসীদের সুরক্ষা, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করার পরিবর্তে বহিষ্কারের হার বাড়ানো, অভিবাসীদের আটক ও ফেরত কেন্দ্রে রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে সিরিয়া, লিবিয়া ও  আফগানিস্তানে সংকট এবং গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শরণার্থীদের ঢলের মুখোমুখি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ আশ্রয় ও অভিবাসন আইন কঠোর করেছে এবং অবৈধ অভিবাসীদের সাথে কঠোর আচরণ বাড়িয়েছে। এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এমন এক সময় যখন পশ্চিমা সরকারগুলো নিজেরাই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি এবং যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। অন্য কথায়, অনেক আফ্রিকান ও এশীয় দেশ (বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া) যেগুলো থেকে আজ ইউরোপে ব্যাপক অভিবাসন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোর ঔপনিবেশিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউরোপ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপমূলক নীতির কারণে অনেক উদ্বাস্তুকে তাদের দেশ ও ভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারা এটাকে স্বীকার করছে না বরং সংকট সমাধানে সাহায্য করার পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও কঠোর ও সীমিত অভিবাসন নীতির ওপর ফোকাস করছে।

এই প্রসঙ্গে,লেখক ও বিশ্লেষক 'জঁ মার্ক জারো' বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই অভিবাসন ও আশ্রয়ের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে, কিন্তু তা সীমান্ত বন্ধ করে এবং বহিষ্কার বাড়িয়ে করা যায় না। ইউরোপকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংকট সৃষ্টির জন্য এর দায় স্বীকার করতে হবে, কারণ তাদের নীতির কারণেই অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

এই ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ইউরোপের নিরাপত্তামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের রক্ষা করার পরিবর্তে তাদের নীতি সীমান্ত নিরাপত্তা এবং উদ্বাস্তুদের উপস্থিতির ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তৃতীয় কোনো দেশে অস্থায়ী কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এসব কেন্দ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে এমন অঞ্চলে রাখা হবে যেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর কম তদারকি রয়েছে। এর ফলে অভিবাসী প্রত্যাশীদেরকে নির্যাতন, অত্যাচার বা তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়বে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নীতিগুলো আরও বেশি করে ইউরোপের ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়, যারা নিজেরা অনেক বৈশ্বিক সংকটে ভূমিকা রেখেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার হস্তক্ষেপমূলক নীতি বন্ধ করার পরিবর্তে কঠোরতা ও বহিষ্কার বৃদ্ধির মতো অমানবিক নীতি জোরদার করেছে।

 সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক সংকটের সময়ে মানবিক হওয়ার চেয়ে কঠোরতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।#

 

পার্সটুডে/এসএ/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন