প্রেসটিভির নারী সাংবাদিক মার্জিয়া কেন সাম্রাজ্যবাদের আতঙ্ক?
(last modified Sun, 20 Jan 2019 13:53:30 GMT )
জানুয়ারি ২০, ২০১৯ ১৯:৫৩ Asia/Dhaka
  • প্রেসটিভির নারী সাংবাদিক মার্জিয়া কেন সাম্রাজ্যবাদের আতঙ্ক?

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইংরেজিভাষী টেলিভিশন চ্যানেল প্রেসটিভির নারী সাংবাদিক মারজিয়া হাশেমি এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বিনা অপরাধে আটক রয়েছেন।

এখন থেকে ৮ দিন আগে (রোববার) তাকে সেখানে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আদালতে এখনও কোনো অপরাধের অভিযোগ উত্থাপনই সম্ভব হয়নি। 

মার্কিন আদালত এরই মধ্যে দুইবার জানিয়েছে যে, হাশেমি কোনো অপরাধ করেননি। অথচ হিজাবধারী বা পর্দানশীন মুসলিম এই নারীর মাথার রুমাল বা স্কার্ফ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে খোলা হয়েছিল এবং তাকে ফুলহাতা জামাও পরতে দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়াও তাকে হালাল খাবারও দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি কেবলই রুটি বা বিস্কুট খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তার সন্তানরা তার জন্য অর্থ পাঠানো সত্ত্বেও তা তাকে জানানো হয়নি।  হাত-কড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে তাকে অপরাধীর মত এখনও আটক করে রেখেছে বাক-স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিদার মার্কিন  কর্তৃপক্ষ।   

৫৯ বছর বয়স্ক নওমুসলিম মারজিয়া হাশেমি একজন মার্কিন ও ইরানি নাগরিক। তিনি প্রায় ত্রিশ বছর আগে ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও এর রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনীর ব্যক্তিত্বে প্রভাবিত হন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চ-শিক্ষার অধিকারী এই নারী একজন ইরানি নাগরিকের সঙ্গে বিয়ের সুবাদে ইরানে আসেন এবং সাংবাদিকতার মাধ্যমেই ইসলাম ও  ইসলামী বিপ্লবের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। প্রায় এক যুগ আগে প্রেসটিভির প্রতিষ্ঠা-লগ্ন থেকেই তিনি এই টেলিভিশনের অন্যতম প্রধান সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এর আগে তিনি ছিলেন মাহজুবা নামক নারী বিষয়ক ইংরেজি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

হাশেমি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান ও কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতন এবং বৈষম্যের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন ও প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছিলেন। একজন দক্ষ উপস্থাপক, সংবাদ-পাঠক ও বিতর্ক অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মজলুম জাতিগুলোর পক্ষে জনমত জোরদারে কার্যকর ভূমিকা রাখছিলেন। বিশেষ করে বিতর্ক অনুষ্ঠানগুলোতে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দ্বিমুখী চরিত্র আর নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইসলামী ইরানের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার দক্ষ উপস্থাপনা প্রেস-টিভিকে পরিণত করেছে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অন্যতম প্রধান বা জনপ্রিয় বড় প্রচার-মাধ্যমে। তাই এমন একজন বিপ্লবী সাংবাদিক যে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের দাম্ভিক ও যুদ্ধবাজ কর্মকর্তাদের ক্রোধের শিকার হবেন তা বিস্ময়ের কোন ব্যাপার নয়। 

এর আগে আমরা দেখেছি প্রেসটিভিতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সত্যের সাহসী উচ্চারণ ও ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় ব্রিটেনের বিশিষ্ট সাংসদ ও রেসপেক্ট দলের নেতা জর্জ গ্যালাওয়েকে কিভাবে স্টুডিওর  অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথেই গুন্ডার হাতে মার খেতে হয়েছে! 

ইরানের বহির্বিশ্ব সম্প্রচার সংস্থার প্রধান ও প্রেসটিভির প্রধান নির্বাহী পেইমান জেবেল্লি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,  তার দেশের ইসলামি বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকীর আগ মুহূর্তে তেহরানের ওপর রাজনৈতিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমেরিকা ইরানের প্রেস টিভির সাংবাদিক মার্জিয়া হাশেমিকে গ্রেফতার করেছে। মার্কিন সরকার যেন তার সব নীতির বিষয়ে দুর্বিনীত প্রতিরোধকামী তথা মহা-বিদ্রোহী ও মাথা-উঁচু-করা ইসলামী ইরানের সঙ্গে তার চল্লিশ বছরের ব্যর্থ শত্রুতার ঝাল বা প্রতিহিংসার আগুন কিছুটা হলেও ঝাড়তে চাচ্ছে হাশেমিকে আটকে রেখে!  ইরানের প্রেসটিভি, হিসপানিক টিভি, আল আলম টিভি ও আলকাওসারের মত স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলো মার্কিন সরকার, দখলদার বর্ণবাদী ইসরাইল ও সৌদি সরকারের নানা অপরাধ তুলে ধরায় সাম্রাজ্যবাদী প্রচার মাধ্যমগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছে। 

মার্কিন সরকার অতীতেও দেশটিতে ইসলামী ইরানের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিষিদ্ধ ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে এসব চ্যানেলের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল মিথ্যা কিছু অভিযোগ তুলে। এভাবে অবাধ তথ্য-প্রবাহ ও স্বাধীনচেতা সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতাকে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। হাশেমিকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে মার্কিন সরকার তার মানবাধিকার-বিরোধী চরিত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে আবারও স্পষ্ট করল।

মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা অঞ্চলের রাজনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ মার্কিন সরকার সংবাদ ও তথ্যের জগতেও পরাজিত হতে বাধ্য। কারণ মিথ্যা প্রচার করে জাতিগুলোকে খুব বেশি দিন বোকা রাখা যায় না এবং সত্যবাদী ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ-মাধ্যমগুলোর বিষয়ে অপবাদ দিয়ে সেসবের প্রতি জনগণের আস্থাকেও নষ্ট করা যায় না। 

মার্জিয়া হাশিমির মুক্তির দাবি জানিয়ে এরই মধ্যে ইরানের জনগণ, নেতৃবৃন্দ ও নানা সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের অনেক সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও মার্কিন নীতির নিন্দাবাদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সচেতন পাঠক, শ্রোতা ও সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহানুভূতিমূলক বার্তা প্রকাশ হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে মিছিল হয়েছে কাশ্মির ও সুদূর নাইজেরিয়ায়। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন বা আইএফজি হাশেমির আটকের ব্যাপারে মার্কিন সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তবে এ বিষয়ে কথিত বড় বড় বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারের মত সংস্থাগুলোর এখন পর্যন্ত নীরব থাকার বিষয়টি রহস্যজনক ও দুঃখজনক! 

ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি’র বিশ্ব কার্যক্রমের প্রধান ড. পেইমান জেবেল্লি বলেছেন, তার দেশের ইসলামি বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকীর আগ মুহূর্তে তেহরানের ওপর রাজনৈতিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমেরিকা ইরানের প্রেস টিভির সাংবাদিক মার্জিয়া হাশেমিকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি শনিবার তেহরানে ‘মানবাধিকার: আমেরিকা স্টাইল’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে  বলেন, গত ৪০ বছর ধরে নানা ক্ষেত্রে ইরানের কাছে আমেরিকার পরাজয় এবং ইরানি জনগণের মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ ভুলতে না পেরে প্রেস টিভির সাংবাদিককে আটক করেছে ওয়াশিংটন।

মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার একের পর এক পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে বিশ্ব কার্যক্রমের প্রধান বলেন, ইরানের গণমাধ্যম থেকে একটি কথা বাইরের গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে যায় কিনা সেই ভয়ে আমেরিকা ভীত। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে যেসব গণমাধ্যম আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না কিংবা ইহুদিবাদী ইসরাইল ও সৌদি আরবের মতো আমেরিকার ধ্বজাধারী সরকারগুলোর অপরাধযজ্ঞ প্রকাশ করে দেয় সেসব গণমাধ্যমের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।

আইআরআইবি’র বিশ্ব কার্যক্রমের প্রধান বলেন, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সাংবাদিক মার্জিয়া হাশেমি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর নবজন্ম লাভ করেন।তিনি তার দেশ, ধর্ম, নাম, পোশাক ও কর্মস্থল পরিবর্তন করে ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে একাকার হয়ে যান।এরকম একজন মানুষ সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার রোষাণলে পড়বে এটাই স্বাভাবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  #   

পার্সটুডে/এমএএইচ/২০

#freemarziyehhashemi 

#pray4marziehhashmei