আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যে কারণে চিন্তিত
(last modified Sat, 21 Aug 2021 12:49:20 GMT )
আগস্ট ২১, ২০২১ ১৮:৪৯ Asia/Dhaka
  • আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যে কারণে চিন্তিত

তালেবানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে সরকার গঠনের জন্য যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলছে তখন মধ্য এশিয়ার কোনো কোনো দেশের সরকার আফগানিস্তানের নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে এখনো সন্দেহের মধ্যে ডুবে আছে।

এসব দেশের সরকার প্রধানরা তালেবান গোষ্ঠীর অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছে। বিশেষ করে আফগান সরকারে তালেবানের উপস্থিতির কারণে মধ্য এশিয়া জুড়ে উগ্রপন্থার বিস্তার ঘটতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এমন সময় তদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে যখন তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগানিস্তানকে নিয়ে এ অঞ্চলের প্রতিবেশী কোনো দেশের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এদিকে, কাতারের রাজধানী দোহায় নিযুক্ত তালেবান প্রতিনিধি মোহাম্মদ নাঈম ভারদাক আল জাজিরা টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, তালেবান সরকার আফগানিস্তানে স্বাধীন ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে যাতে জনগণের সমস্যা ও চাহিদা মেটাতে পারে এবং তাদের সেবা করতে পারে।       

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবানদের এ বক্তব্য সত্ত্বেও আফগান জনগণ এবং মধ্যএশিয়ার সরকারগুলো মনে করে তালেবানরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা হাতে পাওয়ায় তারা এখন তাদের উগ্র চিন্তাভাবনাগুলো সমাজে বাস্তবায়ন করবে। এ উদ্বেগের কারণে মধ্যএশিয়ার সরকারগুলো সম্প্রতি রাশিয়ার এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। এসব আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আফগানিস্তান সংলগ্ন মধ্যএশিয়ার দেশগুলোর সীমান্ত এলাকায় যদি নিরাপত্তাহীনতা বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এ দেশগুলোর মধ্যেও যদি উগ্রপন্থীদের বিস্তার লাভ করে তাহলে যেন রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়া যায়।

এদিকে, তালেবানরা রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগেই উত্তরাঞ্চলে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সীমান্তে উত্তেজনার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তবে এই উদ্বেগ ও উত্তেজনা সত্বেও সম্প্রতি তালেবানরা উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠী যেমন দায়েশ বা আইএস, জাবহাতুন নুসরা, আল তাহরিরসহ অন্য উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অত্যন্ত বিপদজনক ও তাদেরকে তালেবান বিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছে।

আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ গনি যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন নিয়ে কাবুলে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি এমন সময় আফগানিস্তান ত্যাগ করেনে এবং জনগণকে যুদ্ধের ময়দানে একা ফেলে চলে  যান যখন বিভিন্ন সময় তার দেয়া আশাব্যঞ্জক বক্তব্যের ওপর মানুষ ভরসা করেছিল। গত ২০ বছরে তিনি আফগানিস্তানে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছিলেন তাতে পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এ ছাড়া জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গনি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার সরকারের প্রতি দেশের অন্য রাজনীতিবীদরা হতাশ হয়ে পড়েছিল।

এটাও অস্বীকার করলে চলবে না যে আশরাফ গনি সরকারের এই অবস্থার জন্য দায়ী ছিল মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এবং শেষ  পর্যন্ত তালেবানরা ক্ষমতা নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এ অবস্থায় মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর উদ্বেগ তালেবানরা কীভাবে দূর করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। #        

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৯