জানুয়ারি ৩০, ২০২২ ১৭:৫৯ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, আসরের শুরুতেই তোমাদের একটা প্রশ্ন করি। আচ্ছা, তোমরা লেখাপড়া করছো কিসের জন্য? কী ব্যাপার! এ প্রশ্ন শুনে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছো কেন? ও হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি, তোমরা আসলে দ্বিধায় পড়ে গেছো- কী উত্তর দেবে তা ভেবে। আসলে প্রশ্নটি  সহজ হলেও উত্তরটি একেবারে সহজ নয়। কারণ, কেউ পড়াশোনা করে চাকরি করার জন্য, কেউবা করে জ্ঞানার্জনের জন্য। তবে ঠিকমত জ্ঞানার্জন করে নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করতে পারলে ভালো চাকরি-বাকরিও পাওয়া সম্ভব।

বন্ধুরা, জ্ঞানার্জনের কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কথা। তারপর আসে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এর কথা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'আমার পরে আমার উম্মতের মধ্যে সবচে বড় জ্ঞানী হলেন আলী ইবনে আবি তালিব'।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীও বর্ণনা করেন, একদিন নবীজী উচ্চস্বরে বললেন, আমি হলাম জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শহর আর আলী হলেন সেই শহরের দরোজা। তাই যে-ই জ্ঞান অর্জন করতে ইচ্ছুক সে যেন এই শহরের দরোজার কাছে যায়।'

সত্যি বলতে কী- হযরত আলী (আ.)-এর জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার তুলনা মেলা ভার। তিনি ছিলেন আরবি ব্যাকরণের জনক। তাঁর মেধা, তাঁর জ্ঞানের কথা প্রবাদতুল্য। হযরত আলী ছিলেন রাজস্ব প্রথার উদ্ভাবক। তিনিই সর্বপ্রথম ভূমিরাজস্ব প্রথা প্রবর্তন করে ভূমির ওপর চাষীদের অধিকার নিশ্চিত করেন।

বন্ধুরা, ইমাম আলী (আ.)-এর জ্ঞান ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে রংধনুর আজকের আসরে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এরপর থাকবে একটি গান। আর সবশেষে থাকভে বাংলাদেশের এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। তো প্রথমেই সত্য ঘটনাটি শোনা যাক।

একবার দুই পথিক পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তাদের ক্ষুধাও লেগেছিল ভীষণ। খাওয়া-দাওয়া করার জন্য দু’জন মিলে একটা সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল। এরপর পুটলি থেকে বের করে নিল যার যার খাবার। একজনের রয়েছে পাঁচটি রুটি। অন্য জনের তিনটি।

তারা যখন খাবার খাওয়ার জন্য তৈরি হলো তখন সেখানে এসে হাজির হলো এক মুসাফির। তার বেশভূষা একদম সাদাসিধে। সে বলল, "ভাই আমি অভুক্ত। খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমার কাছে কোনো খাবার নেই। তোমরা আমাকে কিছু খাবার দাও।"

পথিক দু’জন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। মনে মনে ভাবল, তারা দু’জন খাবে আর একজন মুসাফির না খেয়ে থাকবে, এ কেমন কথা? তারা মুসাফিরকে তাদের সঙ্গে খেতে বসার অনুরোধ করল।

তিনজন একসঙ্গে খেতে বসল। একজনের পাঁচ রুটি। অন্যজনের তিন রুটি। মুসাফিরের শূন্য হাত। তবু তারা রুটি বণ্টনে কোনো তারতম্য করলো না। তারা ভাবলো, কারো সঙ্গে খাবার না থাকতে পারে, কিন্তু ক্ষুধা তো আর কম লাগেনি। তাছাড়া এক সঙ্গে খেতে বসে একজন বেশি খাবে আর একজন কম খাবে, তাই বা কেমন করে হয়? তিনজন সমান সমান রুটি খেলো।

খাওয়া-দাওয়া শেষ- এবার বিদায়ের পালা। মুসাফির চলে যাবার সময় পথিক দু’জনকে আটটি দিরহাম বখশিস দিলো। বলল, ভাই, আমি শুধু তোমাদেরটাই খেলাম। তোমাদের কিছুই খাওয়াতে পারলাম না। এই নাও আটটি দিরহাম। তোমরা দু’জনে ভাগাভাগি করে নাও।

মুসাফির চলে গেল। কিন্তু সমস্যা বাঁধ দিরহাম ভাগ করা নিয়ে। যার পাঁচটি রুটি সে বলল, আমার পাঁচটি রুটি ছিল। সুতরাং আমি পাব পাঁচ দিরহাম। আর তোমার তিনটি রুটির জন্য পাবে তিন দিরহাম।

কিন্তু তিন রুটিওয়ালা এ হিসাব মানতে রাজি হলো না। সে বলল: না, আমি তোমার হিসাবে রাজি নই। আমরা দু’জন খেয়েছি সমান সমান। সুতরাং তুমি পাবে চার দিরহাম।

প্রথমজন বলল: তা কি করে হয়? তুমি তিন রুটির জন্য চার দিরহাম পাবে। আর আমি পাঁচ রুটির জন্য চার দিরহাম পাব? এটা কি কোনো আইনের কথা হলো?

এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেঁধে গেল তর্ক। কারো কথায় কেউ রাজি নয়। কিছুতেই তারা মীমাংসায় আসতে পারছে না। অবশেষে একজন বলল, শোন এভাবে বিবাদ করে তো কোনো লাভ নেই। চলো, আমরা আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.)এর কাছে যাই। তিনি যে বিচার করেন, তাই আমরা মেনে নেবো।

এরপর দু'জন মিলে গেল হযরত আলীর কাছে। তারা সব কথা খুলে বলে ন্যায় বিচারের জন্য ফরিয়াদ জানালো। হযরত আলী মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনলেন। কিছুক্ষণ তিনি মনে মনে কি যেন ভাবলেন। পরে বললেন, তিনজনে সমান খেয়েছো তো?

উভয়ে ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ।

হযরত আলী বললেন, তা হলে এ নিয়ে এত বিবাদ কিসের? হিসাব তো একেবারে পানির মতো সোজা। যার পাঁচটি রুটি সে পাবে সাত দিরহাম। যার তিনটি রুটি সে পাবে এক দিরহাম।

এমন হিসাবের কথা শুনে দুজনেই অবাক হয়ে গেল! সাত দিরহাম আর এক দিরহাম ভাগ হলো কোন্‌ হিসাবে তারা কিছুতেই বুঝতে পারল না। আকতার জাহান: হিসাব বুঝতে না পেরে দু’জনই হা করে তাকিয়ে রইল হযরত আলীর দিকে। ইমাম আলী তাদের মনের কথা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, তোমরা ছিলে তিনজন। রুটি আটটি। খেয়েছো সমান সমান। একেকটি রুটিকে তিন টুকরো করলে আটটি রুটি চব্বিশ টুকরো হয়। সুতরাং তোমরা একেকজন খেয়েছ আটটি করে টুকরা। মুসাফির লোকটা আট টুকরোর জন্য আট দিরহাম দিয়েছে।

হযরত আলী এরপর বললেন, এবার আসা যাক, কে কতটুকু পাবে- সে হিসাবে। দ্বিতীয় জনের তিনটি রুটিতে নয় টুকরো হয়েছে। নয় টুকরোর আট টুকরো সে নিজে খেয়েছে। মাত্র এক টুকরো পড়েছে মুসাফিরের ভাগে। সুতরাং সে এক দিরহামের বেশি কিছুতেই পেতে পারে না। আর একজনের পাঁচ রুটিতে হয়েছে পনেরোটি টুকরো। তার মধ্যে সে নিজে খেয়েছে আট টুকরো। বাকি সাত টুকরো খেয়েছে মুসাফির। সুতরাং সে পাবে সাত দিরহাম।

হযরত আলীর হিসাবের কথা শুনে পথিক দু’জন বিস্মিত হলো। তাঁর বিচার বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে দারুণভাবে মুগ্ধ হলো। তারা আর কোনো ওজর আপত্তি না করে নীরবে মেনে নিল বিচারের রায়।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে ইমাম আলী (আ.)-কে নিবেদিত একটি বিখ্যাত উর্দু গান। এটি গেয়েছে পাকিস্তানি শিশু শিল্পী গোলাম মোস্তফা কাদরি। 

তো বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের এক ছোট্ট বন্ধুকে।

শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের আসর। কথা হবে আবারো আগামী সপ্তাহে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।