মার্চ ২৭, ২০২২ ২১:২৩ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই এক নাম হল আল-ওয়াহিদ।

এর অর্থ অনন্য ও অতুলনীয় বা যার সমতুল্য দ্বিতীয় কিছু নেই। মহান আল্লাহ'র  সত্ত্বা, গুণ বা বৈশিষ্ট্য ও তৎপরতা –এসবই অনন্য ও অতুলনীয়। মহান আল্লাহ নানা অংশ ও উপাদানের মিশ্রণে গড়া কোনো সত্ত্বা নন। কারণ এসব দিক হল কোনো মুখাপেক্ষী, সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল অস্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টিজগতের গঠন, শৃঙ্খলা, বিস্ময়কর ও জটিল নানা ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত গতি বলে দেয় যে তিনি এক ও অদ্বিতীয়। যদি অস্তিত্বের জগতে কয়েকজন খোদার অস্তিত্ব থাকত তাহলে বিশ্ব জগতের ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটি, মতভেদ, দ্বন্দ্ব ও নৈরাজ্য দেখা দিত। 

আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, যদি এক আল্লাহ ছাড়াও অন্য কোনো আল্লাহ থাকত তাহলে সেই আল্লাহও নবী-রাসুল ও ধর্মগ্রন্থ পাঠাতেন এবং সেই আল্লাহর কথা তুলে ধরতেন। কিন্তু এক লাখ ২৪ হাজার নবীর কেউই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো খোদার কথা বলেননি। মহান আল্লাহর ওয়াহিদ নাম আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ ও প্রকাশ।

ওয়াহিদ শব্দ থেকে এসেছে তাওহীদ বা একত্ববাদ। মহান আল্লাহ কি 'এক' বা ওয়াহিদ?- এই ওয়াহিদ বলতে কি বোঝায়? –কোনো এক ব্যক্তি এ প্রশ্ন করেছিলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ)-কে এমন সময় যখন তিনি তাঁর খেলাফত চলাকালে শত্রুদের সঙ্গে এক যুদ্ধের ময়দানে ভয়াবহ সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন। হযরত আলীর সঙ্গীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তিকে বললেন: এমন তীব্র সংঘাতের মধ্যে কেউকি কাউকে প্রশ্ন করে? তুমি কি দেখছো না যে আমিরুল মু'মিনিন যুদ্ধে ব্যস্ত? কিন্তু হযরত আলী-আ. বললেন: তাঁকে প্রশ্ন করতে দাও, এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের এখন যে যুদ্ধ চলছে তা-তো তাওহীদকে নিয়েই! এরপর তিনি বললেন, মহান আল্লাহ এক   হলেও কোনো সংখ্যার বিপরীতে এক নন, বরং তিনি অনন্য, অসীম, অতুলনীয় ও বর্ণনাতীত এবং অবিশ্লেষ্য ও অযৌগিক।  

মহান আল্লাহর ওয়াহিদ নাম পবিত্র কুরআনে কয়েকবার এসেছে তাঁর কাহ্‌হার নামের সঙ্গে। যেমন সুরা রায়াদ-এর ১৬ নম্বর আয়াতের একাংশে মহান আল্লাহ নিজের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন: বলুন: আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী তথা সব কিছুর ওপর কর্তৃত্বশীল। -

কোনো সৃষ্টিই মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব ও নজরের আওতামুক্ত নয় এক মুহূর্তের জন্যও। এক মুহূর্তের জন্যও মহান আল্লাহর শরিক হতে পারে না কেউ। এক মুহূর্তের জন্যও কেউ হতে পারে না তাঁর সমকক্ষ বা সমগোত্রীয় কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী।  সব কিছুই সব সময় মহান আল্লাহর দাস ও তাঁর কাছে নতজানু। মহান আল্লাহর ওয়াহিদ নাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাহ্‌হার নামের সঙ্গে এসেছে যাতে এটা স্পষ্ট হয় যে মহান আল্লাহর একত্ব মানে তাঁর দুর্বলতা নয় বা ক্ষুদ্রতা নয়, বরং তুলনাহীনতা, অসীমতা ও চির-কর্তৃত্বশীলতা বোঝাতেই এই একত্ব বা ওয়াহিদ নাম ব্যবহার করা হয়।

মহান আল্লাহ সুরা গ্বাফির-এর ১৬ নম্বর আয়াতে ওয়াহিদ ও কাহ্‌হার শব্দ পাশাপাশি এনে বলেছেন: যেদিন তথা ক্বিয়ামতের দিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর।– কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর অশেষ শক্তি, জ্ঞান ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বা চির-বিজয়ী হওয়ার বিষয়গুলো সবাই উপলব্ধি করবে এবং সবাই মহান আল্লাহর অনন্য একত্বকে স্বীকার করবে। ওয়াহিদ হচ্ছেন এমন এক সত্ত্বা যিনি যা-ই চান তা-ই সম্পন্ন করেন এবং রাজত্ব পরিচালনায় তিনি অনন্য এবং তাঁকে মোকাবেলা করার সাধ্য কারো নেই। আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই মহান আল্লাহর একত্ব তথা অনন্যতার নিদর্শন। আর এ জন্যই মুমিন ব্যক্তিরা রাব্বুল আলামিন তথা বিশ্ব জগতের প্রভুকে এক, অনন্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং শরিকহীন বলে মনে করেন। অস্তিত্ব জগতের পরিচালনায় ও সৃষ্টিতে এবং মালিকানায় কাউকেই তারা মহান আল্লাহর শরিক মনে করেন না। তারা কথায় কাজে ও চিন্তায় আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুকে এড়িয়ে চলেন। 

উল্লেখ্য আমরা মহান আল্লাহর কাহ্‌হার নামের অর্থ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম এ ধারাবাহিক আলোচনার ১৭ তম পর্বে। এখানে তার কিছু অংশ আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

ক্বাহ্‌হার হলেন তিনি যিনি মানুষসহ সব সৃষ্টি ও সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব, পরাক্রম ও আধিপত্য রাখেন। মহান আল্লাহ বিশ্বের সব কিছুর ওপর এবং বিশ্বের সব বলদর্পীদের ওপরও নিরঙ্কুশ আধিপত্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিজয়ের অধিকারী। মহান আল্লাহর ইচ্ছার মোকাবেলায় সবাইই অক্ষম এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সবাই নতজানু। এক্ষেত্রে কেউই বিন্দুমাত্র বাধাও সৃষ্টি করতে পারে না।

ক্বাহ্‌হার মহান আল্লাহর জ্বালালি তথা শক্তিমত্তা ও পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর নামগুলোর অন্যতম। অন্যদিকে মহান আল্লাহর জামালি বা দয়া, প্রেম ও করুণার মত প্রশান্ত-সৌন্দর্যজ্ঞাপক নামগুলো হল রাহমান, রাহিম ও গাফ্‌ফার বা সাত্তার ইত্যাদি।

 অবশ্য বাবার ক্রোধ বা রাগের মধ্যেও যেমন সন্তানের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ লুকিয়ে আছে তেমনি মহান আল্লাহর জ্বালালি নামগুলোর মধ্যেও দয়া ও করুণার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।

ক্বাহ্‌হার বলা হয় এমন এক মহাপরাক্রান্ত বিজয়ী কাউকে, যার মোকাবেলায় কেউ বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ করে না, বরং পরিপূর্ণ নতজানু হয়। মহান আল্লাহর কাহ্‌হারিয়াত এমনই যে তা যেন আগুনের ক্ষুদ্র বিন্দুর মধ্যে পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুনকে নিভিয়ে দেয়ার মতই খুব দ্রুত বিজয়ী।

অনেক আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞানী আরেফ মহান আল্লাহর কাহ্‌হার হওয়ার বিষয়টিকে আল্লাহর নুরের কর্তৃত্ব বা আধিপত্য বলে ব্যাখ্যা করেন। এই আলোর তীব্রতা এতই বেশি যে তা বিজয়ী বা কাহ্‌হার। ঠিক যেমনি সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে দিনের বেলায় অন্য তারকারাজি দেখা যায় না। ঠিক এ জন্যই মহান আল্লাহ তাঁর কাহ্‌হার নামটিকে প্রয়োগ করেছেন কিয়ামত বা পুনরুত্থান দিবসের ক্ষেত্রে।–

কিয়ামত বা পুনরুত্থানের দিন জীবনের সব বাস্তবতা ফুটে উঠবে। গোপন বা অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সব বাস্তবতা সেদিন সবার কাছেই স্পষ্ট হবে। সেদিন মহান আল্লাহ নিজেই প্রশ্ন করে নিজেই জবাবে বলবেন: আজ মালিকানা ও বাদশাহি কার? একমাত্র কাহ্‌হার আল্লাহরই। -আসলে বর্তমান দুনিয়ার মালিকানা ও কর্তৃত্বও খোদারই হাতে রয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন সবার ওপরই এই মালিকানা ও কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ হয়ে দেখা দেবে।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।