হিজরত পাপ-বর্জনের অন্যতম উপায়
রমজান: আত্মশুদ্ধির মহোৎসব (পর্ব-২১)
পবিত্র রমজান অফুরন্ত রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস। এই মাস আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস। রোজা পালন করলে মানুষ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। ধনীরা গরিবের অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপনের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে।
ফলে তারা দানখয়রাতে উৎসাহিত হয়। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি বদভ্যাস ত্যাগ করতে পারে।
রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বমানবের মুক্তি সনদ সর্বাঙ্গীণ জীবন-ব্যবস্থা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। এর দ্বারা রমজান মাসের বিশেষ ফজিলতের কথাই প্রমাণিত হয়। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সব প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য বিশেষ ইবাদত রোজা ফরজ করে অশেষ নেকি হাসিল করার এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও দোজখের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন।
এ মাসের অপর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল ইবাদত আদায় করে সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করে, সে অন্যান্য মাসের ৭০টি ফরজ কাজ আদায় করার সওয়াব লাভ করবে।
রমজান মাসে এমন একটি রাত আছে যাকে বলা হয় ‘কদরের রাত’। এ রাতে যারা ইবাদত-বন্দেগি করবে তারা এক হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি করার সওয়াবের তুল্য সওয়াব পাবে।কদরের রাত কোনটি সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কুরআন মাজিদে কিছু বলা হয়নি। নবী মুহাম্মদ সা:কে সাহাবিরা শবেকদর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় তারিখে শবেকদরের তালাশ করো। শবেকদর যেন কোনোভাবে ছুটে না যায় সে জন্য অনেক মুমিন মুসলমান রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ পালন করেন।
মহান প্রতিপালক তাঁর সন্তুষ্টিকে সকল প্রকার আনুগত্যের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন যাতে বান্দারা সমস্ত প্রকারের ঐশী নির্দেশ পালনের প্রতি মনোযোগী হয় ঠিক যেভাবে তিনি সকল গোনাহের মধ্যে তাঁর ক্রোধ বা গজবকে গোপন রেখেছেন যাতে সকল প্রকারের পাপকাজ থেকে বান্দারা বিরত থাকে। তিনি যেভাবে তাঁর প্রিয় ও বিশুদ্ধ বান্দাদেরকে সমাজের সাধারণ লোকদের মাঝে অপরিচিত অবস্থায় রেখেছেন যাতে সমাজের সকল ব্যক্তিই প্রতিটি মানুষকে সম্মান করে ঠিক সেভাবে তিনি শবে ক্বদরকেও গোপন রেখেছেন । তিনি যেভাবে সমস্ত মুনাজাতের মাঝে তাঁর মঞ্জুর করা প্রার্থনাটি গুপ্ত অবস্থায় রেখেছেন যাতে বান্দারা প্রভুর দরবারে আরো অধিক প্রার্থনা করে সেভাবে তিনি শবে ক্বদরকেও গোপন রেখেছেন। মহান আল্লাহ যেভাবে তাঁর ‘ইসমে আজম’ বা রহস্যময় মহান নামকে সমস্ত নামের মাঝে গোপন রেখেছেন যাতে বান্দারা সমস্ত নামকেই প্রাধান্য দেয় ঠিক সেভাবে তিনি শবে ক্বদরকেও গোপন রেখেছেন। তিনি প্রতিটি মানুষের মৃত্যুকেও গোপন রেখেছেন যাতে তাঁর বান্দারা প্রতিটি মুহূর্তে পরকালে যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকে।
আসলে শবে ক্বদর তথা মহিমান্বিত রজনীটিও গোপন অবস্থায় রাখা হয়েছে যাতে বান্দারা পবিত্র রমজান মাসের প্রত্যেকটি দিনকেই গুরুত্ব-সহকারে গ্রহণ করে। অবশ্য একথার অর্থ এমনটি নয় যে মহান প্রতিপালকের বিশিষ্ট বান্দাগণ ও নিষ্পাপ মাসুম ইমামগণ জানতেন না যে, লাইলাতুল ক্বদরের রজনী কোন রাতটি? তাঁরা ঐরাতকে নিশ্চিতভাবে জানতেন তবে তাঁরা তা ইচ্ছাকৃতভাবেই বান্দাদের সার্বিক কল্যাণ, আত্মিক ও নৈতিক উন্নয়ন এবং পরকালীন রসদ সঞ্চয়ের স্বার্থ বিবেচনা করে তা ফাঁস করেন নি। জনৈক ব্যক্তি ইমাম বাকির (আ:) কে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি কি জানেন কোন রাতটি ক্বদরের রাত? তিনি বললেন,"কিভাবে সম্ভব আমরা লাইলাতুল ক্বদর জানবো না যখন ঐরাতে ফেরেশতারা আমাদেরকে ঘিরে চারপাশে ঘোরাফেরা করেন?”। ” তাফসিরুল বুরহান ৪র্থ খণ্ড ৪৮৮ নম্বর পৃষ্ঠা
হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, তার বরকতে সে ব্যক্তি সব পাপ থেকে নাজাত লাভ করে এবং দোজখ থেকেও তার মুক্তি লাভ ঘটবে। আর ওই রোজাদার ব্যক্তি রোজার বদলে যে সওয়াব লাভ করবে, সেও তার সমপরিমাণ সওয়াবের ভাগীদার হবে। এর দ্বারা রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ মুহাম্মদ স:-এর কাছ থেকে এ কথা শ্রবণ করার পর উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের এমন খানাপিনা নেই, যার দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারি।’ তখন তিনি বললেন- ‘একটি খুরমা বা একটু দুধ কিংবা একটু পানি দিয়ে যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তি এ সওয়াব হাসিল করবে।’ এ মাসটি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়ালার খাস রহমতের মাস।
বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: বলেছেন- ‘আমার উম্মতকে রমজান মাসে এমন পাঁচটি নেয়ামত দান করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো নবীর উম্মতকে দান করা হয়নি।’ এ নেয়ামতগুলো হলো- (ক) রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশক বা কস্তুরির চেয়েও বেশি সুগন্ধি বলে বিবেচিত; (খ) এ মাসে রোজাদারের পক্ষ হয়ে পানির মাছ আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে; (গ) রোজার মাসে প্রতিদিন বেহেস্তকে নতুন নতুন সাজে সাজানো হয় এবং আল্লাহ পাক বেহেস্তকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমার নেক বান্দারা পৃথিবীর দুঃখপূর্ণ জীবন শেষ করে তোমাদের বুকে স্থান নেয়ার জন্য শিগগিরই আসছে; (ঘ) রমজান মাসে শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়। আর এ জন্য শয়তান অন্য মাসের মতো এ মাসে রোজাদারকে ধোঁকা ও বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না এবং (ঙ) এ মাসের শেষরাতে রোজাদার বান্দাদের সমুদয় গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হলো রোজা। রোজা পালনের মাধ্যমে পানাহারে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে অনেক রোগ দূর হয় ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
এবারে শোনা যাক অর্থসহ ২১ তম রমজানের দোয়া:
পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।