এপ্রিল ২৭, ২০২২ ১৯:১১ Asia/Dhaka

আজ আমরা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম সাজ্জাদ তথা হযরত ইমাম জাইনুল আবেদিনের (আ) একটি দোয়ার আলোকে পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে কিছু কথা বলব।

দোয়াটি সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার ৪৪তম দোয়া। পবিত্র কুরআন ও মহানবীর হাদিসের পর হযরত আলীর (আ) নাহজুল বালাগা ও ইমাম সাজ্জাদের সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া মুক্তির পথ-নির্দেশনা ও খোদা-প্রেমের গাইড হিসেবে অত্যন্ত বরকতময় ও জরুরি দুটি বই। তাই এ দুই বইয়ের সঙ্গেও মুসলমানদের উচিত প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলা।

ইমাম সাজ্জাদ (আ)'র আলোচ্য এ দোয়া তাঁর অন্য সব দোয়ার মতই মহান আল্লাহর সঙ্গে প্রেমময় সংলাপ ও বিনম্রতা এবং আকুলতায় পরিপূর্ণ। আসলে যুক্তি ও প্রেমময় কান্না-ভেজা আকুতিতে তাঁর সব দোয়াই অনন্য। ইমাম সাজ্জাদ তাঁর এ দোয়ার প্রথমেই বলছেন,                                                                        

মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি এ জন্য যে তিনি আমাদেরকে তাঁর প্রশংসাকারী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলো সম্পর্কে গাফেল নই। এসব নেয়ামতের জন্য আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ যদি নানা সুযোগ না দিতেন তাহলে আমরা তাঁর প্রশংসাকারী হতে পারতাম না। এরপর ইমাম সাজ্জাদ এ দোয়ায় বলছেন, আল্লাহর শোকর করছি এ জন্য যে তিনি আমাদেরকে তাঁর দিকে যাবার, পূর্ণতা পাবার এবং দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার মহা-খনিতে যাওয়ার অন্যতম পথ তথা রমজান যা কিনা তাঁরই মাস- তা দান করেছেন। -এখানে দেখার বিষয় হল সব মাস ও দিন মহান আল্লাহর হওয়া সত্ত্বেও এখানে রমজানকে আল্লাহর নিজের মাস বলার অর্থ হচ্ছে এ মাসের প্রতি রয়েছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও গুরুত্ব।

ইমাম সাজ্জাদের দৃষ্টিতে রমজান হচ্ছে সংযমের ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মাস।  এই মাস নাফসের উন্নয়ন বা আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য খুবই মোক্ষম সময়। কারণ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করাসহ নানা ধরনের প্রবৃত্তিকে দমনের চর্চা করা হয় এই মাসে। মুসলমানরা এ মাসে কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই নানা  কষ্ট সহ্য করেন। বছরের অন্য সময়ে তারা ঠিক এত ব্যাপক মাত্রায় নিজেদেরকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেন না। তাই রমজান হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্ম-সমর্পণের মাস।

ইমাম সাজ্জাদ তাঁর এই দোয়ায় রমজানকে পবিত্রকারী মাস বলে উল্লেখ করেছেন। এ মাসে এমন কিছু মাধ্যম আছে যা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে। যেমন, খোদ রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, নফল নামাজ ও মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ইত্যাদি।  আর এসবই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ বা খোদায়ি ভোজ-সভার কিছু নেয়ামত। এ মাসে মুসলমানরা আল্লাহরই খাস মেহমান।

কুরআনও এ মাসের আরেকটি বড় আধ্যাত্মিক খাবার যা রমজানের খোদায়ি দস্তরখানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। রমজানের এসব খোদায়ি নেয়ামত আমরা যত বেশি ব্যবহার করব ততই আমাদের আধ্যাত্মিক ভিত্তি মজবুত হবে। ফলে মহান আল্লাহ ও পূর্ণতার দিকে সফরের পথ হবে অনেক বেশি সহজ এবং সৌভাগ্যের সোপানও চলে আসবে হাতের মুঠোয়।

এরপর ইমাম সাজ্জাদ (আ) এই দোয়ায় রমজানকে খালেস করার বা আন্তরিক হওয়ার মাস বলে অভিহিত করেছেন। আমাদের সবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে স্বর্ণের মত মহামূল্যবান রত্ন। কিন্তু নানা উদাসীনতার কারণে এর মধ্যে মিশে গেছে নানা আবর্জনা, ভেজাল ধাতু ও ধুলো-বালিসহ নানা পঙ্কিলতা। সব নবী-রাসুল এসেছেন আমাদের ভেতরের এই অমূল্য রত্ন তথা সোনার আত্মাকে পবিত্র ও খাঁটি করতে। সব ধরনের কঠিন খোদায়ি পরীক্ষা, সাধনা, জিহাদ ও শাহাদাত- এসবের উদ্দেশ্যও হচ্ছে এই পবিত্রকরণ। অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে এ মাসে আমাদের আত্মাকে পবিত্র করা অনেক বেশি সহজ। 

একবার এক ব্যক্তি হজযাত্রা বা কোনো সফরের আগে তার শহরের প্রধান কাজির কাছে এক ব্যাগ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বললেন, আমি সফরে যাচ্ছি দয়া করে এটি আপনার কাছে আমানত হিসেবে রাখুন। সফর থেকে ফিরে এসে আমি এটি ফেরত নেব। কাজি বললেন, ওই সিন্দুকের ভেতর আপনার এই ব্যাগ রাখুন। ওই ব্যক্তি সফর থেকে ফিরে কাজির কাছে গিয়ে তার ওই ব্যাগ ফেরত চান। কাজি বললেন, কিসের ব্যাগ? আপনাকে তো আমি চিনিই না, কোনোদিন আপনাকে দেখেছি কি?! ওই ব্যক্তি বেশ দুঃখ পেয়ে এই ঘটনার কথা তার দেশের বাদশাহকে জানালেন। বাদশাহ তাকে একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে তার দরবারে আসার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ইশারা দিলে দরবারে প্রবেশ করে তুমি কাজির কাছে তোমার সেই ব্যাগের দাবি তুলে ধরবে। ওই নির্দিষ্ট দিনে বাদশাহ ওই কাজিকে দরবারে ডেকে বললেন, আপনার বিশ্বস্ততা ও আমানতদারির বেশ সুনাম রয়েছে! তাই আমি কিছুকাল আপনার কাছে আমার বাদশাহি অর্পণ করতে চাই। কাজী সানন্দে রাজি হলেন।

এমন সময় ওই ব্যাগের মালিক দরবারে ঢুকে তার সেই ব্যাগ দাবি করেন। কাজি বললেন, ওই সিন্দুকটির ভেতর থেকে তা নিয়ে নিন। ওই ব্যক্তি তা নেয়ার সময় বাদশাহ কাজিকে বললেন, এক ব্যাগ স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধারের জন্য যদি গোটা একটি দেশ বা রাজ্য দিতে হয় তাহলে রাজ্যটিকে ফিরে পেতে আরও কত বড় সম্পদ দিতে হবে?! এ কথা বলে তিনি কাজিকে পদচ্যুত করেন কাজির পদ থেকে।

-মহানবী (সা) বলেছেন, কোনো মানুষ ভালো বা সৎ কিনা তা তার বেশি বেশি নামাজ-রোজা, দীর্ঘ সিজদা, ইবাদত বা হজ্ব-যাকাত- এসব থেকে বোঝা যাবে না। বরং দেখ ওই ব্যক্তি সত্য কথা বলেন কিনা ও আমানতদার কিনা।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্যবাদী ও আমানতদার হওয়ার তৌফিক দিন। এবারে শোনা যাক অর্থসহ ২৫ তম রমজানের দোয়া:

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ