এপ্রিল ২৮, ২০২২ ১৫:০৭ Asia/Dhaka

চিত্ত মোদের মত্ত থাকে মায়াবি মোহে/পাপ রাশিদের জয়-ধ্বনি বেজে চলে রূহে, অতৃপ্ত আত্মাগুলি হয় না কভু সুখী/বেলা শেষে হতাশ বেশে, বাসায় ফিরে পক্ষী। এসো সবে একসাথে শপথ করি এখনি/রমযানের মহিমা দিয়ে রাঙাব ধরণি।। (এ, কে, এম, শাহ আলম)

মহানবীর হাদিস অনুযায়ী পাপ-বর্জন রমজানের সেরা আমল। মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হলেও পাপ বর্জন জরুরি। মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন বা আল্লাহ তায়ালার  সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে মহান আল্লাহর নানা গুণ ও অনুগ্রহগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আর এ জন্য মহান আল্লাহর নামের পরিচিতিগুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখা বা এসব নামের নানা তাৎপর্য জানা জরুরি। মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর নিরানব্বই নাম বা আসমাউল হুসনাসহ তাঁর অনেক যৌগিক নামের সমন্বয়ে রচিত হয়েছে দোয়াই জৌশান কাবির। পবিত্র রমজানের শবে ক্বদরের রাতে অনেকেই এই দোয়া পড়ে থাকেন। এই দোয়ায় মহান আল্লাহকে এক হাজার যৌগিক ও একক নামে স্মরণ করা হয়।   দোয়া ইবাদাতের সারবস্তু। তাই যে কোনো দোয়াই খোদাপ্রেমের পথ সুগম করে এবং মহান আল্লাহর প্রতি হৃদয়ের গভীর আকুতি প্রকাশের পথ খুলে দেয়।

 “ জৌশান কাবির নামক দোয়াটি ইমাম আলী ইবনে হুসাইন জাইনুল আবেদিন (আ.) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর পিতা এবং তিনি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে এ দোয়াটি হযরত জিবরাঈল (আ.) কোন এক যুদ্ধে রাসূল (সা.) কে শিখিয়েছিলেন এমতাবস্থায় যে , তিনি অত্যন্ত ভারী একটি বর্ম পরেছিলেন যা মহানবীর পবিত্র শরীরকে কষ্ট দিচ্ছিল। হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললেন: হে মুহাম্মদ (সা.)! আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন এ বর্মটি খুলে ফেলতে ও দোয়াটি (জৌশান কাবির) পাঠ করতে যা আপনার এবং আপনার উম্মতের নিরাপত্তা বিধান করবে।

দোয়াই জৌশান কাবির-এর নানা ফযিলত রয়েছে যেমন- যদি কোন মৃত ব্যাক্তির কাফনে এ দোয়াটি লিখে দেয়া হয় তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবেন। যদি কেউ তা রমজান মাসে একনিষ্ঠচিত্তে পাঠ করে তাহলে সে শবে ক্বদরের রাত্রিটি পাবে এবং আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতাকে সৃষ্টি করবেন যারা আল্লাহর যিকর ও তসবিহ করবে আর উক্ত যিকরের সওয়াব সে পাবে। রমজান মাসে যে ব্যক্তি এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতকে তার জন্য ওয়াজিব করে দিবেন। আরো বলা হয়েছে মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিন দুইজন ফেরেশতাকে তার জন্য নিয়োগ করবেন যারা তাকে বিভিন্ন গুনাহ থেকে রক্ষা করবেন এবং সে সারা জীবন আল্লাহর রহমতের সুশীতল ছায়াতলে নিরাপদে থাকবে।

ইমাম হুসাইন (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে ,তিনি বলেছেনঃ আমার পিতা হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ওসিয়ত করেছেন যে , দোয়া-এ জৌশান কাবির লিখা কাফনে যেন তাকে দাফন করি ও আমাদের পরিবার পরিজনকে এ দোয়াটি শিক্ষা দিই এবং তা পাঠ করতে উৎসাহ প্রদান করি। এ দোয়াটিতে আল্লাহর তায়ালাকে এক হাজার গুণবাচক নাম এবং ইসমে আযম দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে। দোয়াটির প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বি ইসমিকা ইয়া আল্লাহু , ইয়া রাহমানু , ইয়া রাহিমু , ইয়া কারিমু , ইয়া মুকিমু , ইয়া আযিমু , ইয়া কাদিমু , ইয়া আলিমু , ইয়া হালিমু , ইয়া হাকিম। সুবহানাকা ইয়া লা ইলাহা ইল্লা আনত , আল-গাওউস , আল-গাওউস , খাল্লিসনা মিনান্নার ইয়া রাব্ব।

এর অর্থঃ- হে আল্লাহ , নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে বিনীত প্রার্থনা করি আপনার নামের মাধ্যমে হে আল্লাহ , হে সর্বদয়ালু , হে সর্বমমতাময় , হে সর্বউদার , হে স্থায়ী , হে সর্বশক্তিমান , হে চিরবিরাজমান , হে পরম সহনশীল , হে প্রজ্ঞাবান ;হে মহাজ্ঞানী আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি , হে ঐ সত্ত্বা যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই , আমি আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি , আমি আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি , আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিন হে প্রভু ।

রমজানের শেষ শুক্রবার হচ্ছে বিশ্ব কুদস্ দিবস। মুসলমানদের প্রথম কেবলা আলআকসা মসজিদ ও পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের জবরদখল ও পুরো ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্বব্যাপী গণ-সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনীর আহ্বানে চালু হয়েছে এই দিবস। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর প্রথম চালু হয় এই দিবস। সেই থেকে প্রতি বছর কুদস দিবসের শোভাযাত্রা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। ইমাম খোমেনী (র.) বলেছিলেন, কুদস‌্ দিবস হচ্ছে ইসলামের দিবস। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আরব দেশগুলোর মানুষ যদি এক বালতি করে পানি ঢালত তাহলে ইসরাইল ভেসে যেতো। ইসলামী ঐক্যের জন্য বিশ্ব কুদস্ দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দমন-পীড়ন জোরদারের আলোকে বিশ্ব কুদস্ দিবসের গুরুত্ব কয়েক গুণ বেড়ে গেছে বলে মনে করা যায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট একদল আরব সেবাদাস সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইহুদিবাদীদের দখল থেকে মুক্ত করার আন্দোলন ও সংগ্রামের ওপর পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করছে।  ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে গোত্রীয় ও ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে পারস্পরিক সংঘাতে জড়ানোর চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিন সংকটকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্যই এসব করা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

পবিত্র কুরআনে পথভ্রষ্ট ইহুদিদেরকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  ইহুদিবাদী ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী ও সন্ত্রাসী তৎপরতার প্রেক্ষাপটে মুসলিম সরকারগুলো ও বিশেষ করে আরব সরকারগুলোর উচিত ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দেশে দেশে মুসলিম জনগণ ও ন্যায়বিচারকামী সবারই উচিত ইহুদিবাদী ইসরাইলের ৭৫ বছরের দখলদারিত্ব ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া। বিশ্ব-কুদস্ দিবস আমাদের জন্য সে সুযোগই সৃষ্টি করে দিয়েছে।

এবারে শোনা যাক অর্থসহ ২৬ তম রমজানের দোয়া

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।