স্বাস্থ্যকথা
দূরারোগ্য ব্যাধি চিকিৎসায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেন?
সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশাকরি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।
হ্যাঁ শ্রোতাবন্ধুরা! ভালো থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ থাকা, রোগমুক্ত থাকা। যে কারণে বলা হয়ে থাকে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল বা স্বাস্থ্য অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সেই স্বাস্থ্য সবার ভালো থাকে না নানা কারণে। তার জন্য কখনও কখনও আমাদের জীবানাচারও দায়ী। তাই নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা উচিত আমাদের সবার।
তো যাই হোক আজ আমরা স্বাস্থ্যকথার আসরে বলা চলে নতুন এ সহজলভ্য নয় সবখানে অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলব আর আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন – আফ্রিকার দেশ লেসোথো প্রবাসী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোবাশশার হাসান মাসুম। তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদেরকে সময় দিয়েছেন এবং কয়েকটি পর্বে আমাদেরকে সময় দেবেন বলে কথা দিয়েছেন।
তো শ্রোতাবন্ধুরা! নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে- গুরুত্বপূর্ণ সেই চিকিৎসা সেবার বিষয়টি কি? বিষয়টি হচ্ছে' প্যালিয়েটিভ কেয়ার' সেটি আবার কি? সেটি হচ্ছে- খুব সহজ করে বললে' ভালোবাসায় রোগীর পাশে'। আর যদি আরও একটু স্পষ্ট করে বলি তাহলে দাঁড়ায় 'নিরাময় অযোগ্য রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাম প্যালিয়েটিভ কেয়ার। তো বিষয়টি নিয়ে আমরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোবাশ্বার হাসান মাসুমের কাছ থেকে বিস্তারিত জানব।
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক লেসোথো ক্যান্সার ক্লিনিকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
রেডিও তেহরান: জনাব, ডক্টর মোবাশশার হাসান মাসুম রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ড.মোবাশশার হাসান মাসুম: অনেক ধন্যবাদ জনাব গাজী আবদুর রশীদ ভাই আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য আপনারা আমাকে যুক্ত করেছেন। সেইসাথে রেডিও তেহরানের সারা বিশ্বজুড়ে দর্শক-শ্রোতাদেরকেও আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি জানি রেডিও তেহরান বহু বছর ধরে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছে।
রেডিও তেহরান: ড. হাসান আপনার কাছে প্রথমে জানতে চাইছি- প্যালিয়েটিভ কেয়ার আসলে কি? আপনি যদি একটু স্পষ্ট করে আমাদের শ্রোতাদেরকে বুঝিয়ে বলেন?
ড. মোবাশশার হাসান মাসুম: প্যালিয়েটিভ কেয়ারের যে বিষয়টি অর্থাৎ মৃত্যু পথযাত্রী যেসব রোগী থাকেন তাঁদের অনুভূতি আমাদের সাধারণ মানুষের মতো নয়। তাছাড়া মৃত্যু অনুভূতি একেকজন মানুষের একেক রকমের হয়ে থাকে। এটি সাধারণভাবে বলা যায় না, সম্ভবও না বলা।
আপনি আরেকটি যে প্রশ্ন করেছেন প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবাটি কিভাবে দূরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত মানুষের কাজে লাগতে পারে?
আমি এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞাটি রয়েছে সেটির যদি বাংলায় অনুবাদ করে বলি তাহলে এমনটি দাঁড়াবে, কঠিন বা দূরারোগ্য ব্যাধী যেমন ক্যান্সার, স্নায়ুজনিত দূরারোগ্য ব্যাধী যেমন ডিমেনশিয়া, কিডনি ফেইলিওর, হার্টফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর হয় এছাড়া শরীরের গুরুত্বপূর্ণ আরও যেসব অঙ্গ আছে সেগুলো যখন ফেইলিওর হয়-এগুলোকে আমরা দূরারোগ্য ব্যাধী বলি। আর এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর মনো-দৈহিক অবস্থাকে বিবেচনায় এনে সেইসব রোগীদের রোগ নির্ণয়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে যতদিন রোগীটি বেঁচে থাকবেন ততদিন সেই রোগী এবং তাঁর যে আত্মীয়স্বজন-তারাও তো রোগীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদেরকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে- তাদের মনো-দৈহিক বিষয়গুলোকে সুনির্দিষ্টভারে চিহ্নিত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে সেইসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং রোগীর মনো দৈহিক কষ্টগুলোকে লাঘব করা। আর চিকিৎসাটিই হচ্ছে প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা। এই প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা একটি দলগত প্রচেষ্টা। একক কোনো মানুষের প্রচেষ্টায় প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।
রেডিও তেহরান: আচ্ছা ডা. হাসান আপনি দলগত বা সমন্বিত প্রচেষ্টার কথা বলছিলেন, সেটি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
ড. মোবাশশার হাসান মাসুম: দেখুন, আমরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার চিকিৎসাকে একটি দলগত বা সমন্বিত প্রচেষ্টা এই জন্যে বলছি যে, আমরা যারা প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে কাজ করি আমরা শুরুতে একটা বৃত্ত তৈরি করি। আর সেই বৃত্তের কেন্দ্রে থাকেন রোগী। আর কেন্দ্রে থাকা সেই রোগীকে আমরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলি। আমাদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মধ্যে থাকেন ডাক্তার, নার্স, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, কাউন্সিলর , সমাজকল্যান কর্মকর্তা, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং সেইসঙ্গে ধরে নেই রোগীর আত্মীয় স্বজনকে যারা বাড়িতে রোগীর সেবার জড়িত থাকেন। অর্থাৎ এই যাদের কথা বল্লাম, তাদের সবাইকে সম্পৃক্ত করে আমাদের বৃত্তের মূল জায়গা রোগীকে সেবা দেয়ার কাজটি করা হয়। এতে তার কষ্টকে দূর হতে পারে।
অনেক সময় আমরা রোগীকেও সম্পৃক্ত করি যদি রোগী সচেতন থাকেন। রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি কি হবে, রোগী কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে চাচ্ছে। আমি ডাক্তার বলে শুধু টিউমারটার বিষয়ে লিখে দিলাম। টিউমারটিকে শরীর থেকে অপসারণ করে ক্যান্সারের চিকিৎসা করলাম–তা কিন্তু নয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের যে দলটি থাকে তারা রোগী এবং তার আত্মীয় স্বজনকে চিকিৎসা সম্পৃক্ত করবে।
তো আশাকরি সংক্ষিপ্তভাবে আমি যা বললাম তাতে শ্রোতারা বুঝতে পারছেন প্যালিয়েটিভ কেয়ার আসলে কি?
শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনার প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-ডা.মোবাশশার হাসান মাসুমের আলোচনা শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর ফিরলাম, ডা. মাসুম আপনি প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বিষয়টি যদি একটু উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন- তাহলে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
ড. মোবাশশার হাসান মাসুম: জ্বি উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরুন কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি আগে ছিল তিনটি। যেমন সার্জারি বা শৈল্য চিকিৎসা, রেডিয়েশন বা বিকিরণ চিকিৎসা যেটাকে রেডিও থেরাপি বলা হয় এবং তিন নম্বর হচ্ছে কেমোথেরাপি। যেটি শিরায় ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসা। কিন্তু অধুনা সময়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিয়ে শুরু করা হয়। এতে বলা হয় রোগীর প্রথম দিন যেদিন ক্যান্সার রোগটি নিরুপণ করা হলো সেই দিন থেকে শুরু করে যতদিন রোগীকে ঐ উপর্যুক্ত চিকিৎসাগুলো দেয়া হবে এবং যতদিন রোগী বেঁচে থাকেবে ততদিন পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার। শুধু তাই না রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনকেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্যালিয়েটিভি কেয়ারের আওতায় রাখা হয়।
তো শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে এতক্ষণ এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোবাশ্বার হাসান মাসুমের গুরু ত্বপূর্ণ আলোচনা শুনলেন। আগামী আসরেও এ বিষয় নিয়ে কথা হবে- সে আসরেও আমাদের সাথে থাকতে ভুলবেন না।
তো আজকের স্বাস্থ্যকথার আসর এখানেই গুটিয়ে নেই। তবে বলে রাখছি- আপনারা নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং পরিমিত বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন।
স্বাস্থ্যকথা অনুষ্ঠানটির সাক্ষাৎকার গ্রহণ, উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ। #
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১১