সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ ২২:১২ Asia/Dhaka

কথায় কথায় আমেরিকা এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি অগণতান্ত্রিক এবং গায়ের জোরের আইনি পদক্ষেপ। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।

বিশিষ্ট এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার আরও বলেন, পৃথিবীর দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়ে গোটা পৃথিবীতে একটা অরাজক এবং অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করবার জন্য আমেরিকা তার অস্ত্র হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা অস্ত্রটিকে ব্যবহার করছে।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, কাগুজে নিষেধাজ্ঞা কিংবা কাগুজে নোটের নিষেধাজ্ঞা কখনই একটা দেশের জনগণকে পরাজিত করতে পারে না। ইরান সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। 

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান:জনাব,রাজেকুজ্জামান রতন, আমেরিকা এবং পশ্চিমা মিত্ররা কথায় কথায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়। আসলে লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর?

রাজেকুজ্জামান রতন: আপনাকে ধন্যবাদ। প্রথমত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই নিষেধাজ্ঞাটা অগণতান্ত্রিক আচরণ। একটা গায়ের জোরের আইনি পদক্ষেপ। গায়ের জোরের সর্ব নিকৃষ্ট পদক্ষেপ হচ্ছে যুদ্ধ আর আইনি পদক্ষেপ হলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। একটা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শুকিয়ে মার, তার বাণিজ্যগুলোকে বন্ধ করে দাও এমনকি আমদানি ও রপ্তানীর বাইরেও যে একটা সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকে পৃথিবীর দেশে দেশে সেগুলোকেও বিনষ্ট করে দিয়ে গোটা পৃথিবীতে একটা অরাজক এবং অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করবার জন্য আমেরিকা তার অস্ত্র হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা অস্ত্রটিকে ব্যবহার করছে।

আমরা দেখেছি কোনো একটি রাষ্ট্রে জনগণের পক্ষে কোনো একটা ভূমিকা পালনের চেষ্টা করা হয় তখনই আমেরিকার শাসকগোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এটা যেমন একটা দিক অন্যদিকে তাদের পছন্দসই মিত্র না হলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তাছাড়া আমেরিকার বাণিজ্যকে অবাধ রাখার জন্য এবং অন্যের বাণিজ্যকে কঠিন করে তোলার জন্য তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সাম্প্রতিক সময় ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের সময় তারা এসব কাজ করেছে। একদিকে গোটা ইউরোপকে এক করে রাশিয়াকে একঘোরে কোরে তোলার চেষ্টা তাদের ছিল।  তারই অংশ হিসেবে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাণিজ্য  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করতে চায়। কিন্তু আমেরিকার দূরভিসন্ধিগুলো বিভিন্ন দেশের কাছে ধরা পড়ে যাবার কারণে আমেরিকার কথায় সবাই সাড়া দেয় নি। এটি তারা বুঝতে পারেনি। যে কারণে রাশিয়াকে একঘোরে করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকা নিজেই বিপদে পড়েছে।

এর আগে ইরানের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি কীভাবে ইরানের তেল রপ্তানীকে বাঁধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে যাতে তাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়া যায়। যেমন করে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের দোহাই দিয়ে ইরানকে একঘরে করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া হিসেবে ইসরাইলের হাতে যে পারমাণবিক অস্ত্র আছে সেকথা তারা বেমালুম ভুলে গেছে। ঠিক একইভাবে তাদের পছন্দের মানুষ হলে সবরকমের সহযোগিতা আর অপছন্দ হলে সবরকমের বিরোধীতা এই নীতি দিয়েই আমেরিকা চলছে। তাদের এ দৃষ্টিভঙ্গির অর্থনৈতিক তাৎপর্য কিছুটা থাকলেও রাজনৈতিক তাৎপর্য বেশি থাকে না। আর প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই বিভিন্ন দেশের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফলাফলটা বুমেরাং হয়েছে। যেসব দেশের জনগণের মধ্যে ঐক্য আছে সেখানে কিন্তু তাদের নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কার্যকর হয় নি।

রেডিও তেহরান: জনাব রতন, আপনি বললেন, এটি গণতন্ত্রের সাথে যায় না।  তার আগে প্রশ্ন আসে যে, এই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ার এখতিয়ার এবং অধিকার আমেরিকা ও তার মিত্রদের আছে কিনা? কোন দেশের ওপরে এভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপানো কতটা নৈতিক?

রাজেকুজ্জামান রতন: না কোনো দেশের ওপরে এভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ার  এখতিয়ার আমেরিকা ও তার মিত্রদের নেই। নৈতিকও না। পুরোটাই গোটা বিশ্বকে  ডিভিশন এবং রি ডিভিশন করার চেষ্টা। পৃথিবীর খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবার জন্য এবং ভৌগোলিক সীমারেখাগুলোকে নিজের মতো করে পাল্টে দেবার একটা অশুভ মানসিকতা থেকে তারা এইসব কাজ করে। এর পুরোটাই একটা মানসিকতা দিয়ে পরিচালিত। এটি গণতান্ত্রিক চেতনার দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য। মানবিকতার দিক থেকেও ভয়ঙ্কর একটা বিষয়। একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা কার্যকর করতে গিয়ে গোটা দুনিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর তারা নিষেধাজ্ঞার খড়গ চাপিয়ে দিয়েছে।

রেডিও তেহরান: জ্বি রাজেকুজ্জামান রতন, সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইছি,  অনেকে বলে থাকেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ভুক্তভোগী দেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নেয়। এইরকম উদাহরণ বিশেষভাবে ইরানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

রাজেকুজ্জামান রতন:  দেখুন, এটা নির্ভর করবে কোন দেশে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আছে। কোনো দেশে যদি নতজানু সরকার থাকে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তাদেরকে আরও নতজানু করে দেয়। আর যারা মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে চায় তারা এক , দিন, দুই দিন, এক বছর, দুই বছর কিংবা পাঁচ বছর কষ্ট করে কিন্তু একটা সময় সে সক্ষমতা দিয়ে দাঁড়ায়। ইরান তেমনই একটি দৃষ্টান্ত, উত্তর কোরিয়া একটি দৃষ্টান্ত। কিউবা এমনকি ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোও কিন্তু মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। ফলে কাগুজে নিষেধাজ্ঞা কিংবা কাগুজে নোটের নিষেধাজ্ঞা কখনই একটা দেশের জনগণকে পরাজিত করতে পারে না। ইরান সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে।  আরও কয়েকটি দেশের কথা বললাম। এরপরও সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে এই অস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র নেই। ফলে তারা তাদের অস্ত্র ব্যবহার করেই যাবে অন্যদিকে জনগণকে পাল্টা অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার চেষ্টাটা বারবার করে যেতে হবে।

তো রাজেকুজ্জামান রতন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা কথায় কথায় যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় সে সম্পর্কে মূল্যবান বিশ্লেষণের জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। # 

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭

ট্যাগ