অক্টোবর ০৯, ২০২২ ১৪:২৪ Asia/Dhaka

ইরানের কালজয়ী গল্পের পসরা "গল্প ও প্রবাদের গল্পের" আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি গল্প। গল্পটি এরকম:

কথিত আছে যে, পাহাড়ের ঢালে ছিল একটি সবুজ সুন্দর তৃণভূমি। ওই তৃণভূমিতে ছিল একটি বড় হ্রদ। সেই হ্রদে বাস করতো একটি কচ্ছপ এবং দুটি বালি হাঁস। নিরীহ কচ্ছপের সঙ্গে হাঁসগুলো বন্ধুত্ব করলো। যখনই তারা হ্রদে সাঁতার কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত তখনই তারা তীরে উঠে কচ্ছপের সাথে প্রাণখুলে কথাবার্তা বলতো। তাদের এই বন্ধুত্ব দীর্ঘদিন অটুট ছিল। এক বছর বৃষ্টি না হওয়ায় লেক শুকিয়ে যায়। হাঁসগুলো তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তারা তো পানি ছাড়া বাঁচতে বা বসবাস করতে অভ্যস্থ না। যদিও স্থলভাগেও তাদের বসবাস করতে দেখা যায়। তবে পানিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। সে কারণে তারা ভাবলো পাহাড়ের পেছনে অন্য একটি হ্রদে চলে যাবে। ওই হ্রদে পানি ছিল। অন্য হ্রদে চলে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা কচ্ছপের কাছে গেল। তারা তাকে বলল: এ বছর তো লেকের পানি শুকিয়ে যাবার উপক্রম। আমরা তো পানি ছাড়া বাস করতে পারবো না। খাবারের সংকটেও পড়ে যাবো। তাই পাহাড়ের ওপারের লেকে চলে যাবো বলে ভাবছি। কিন্তু তোমাকে রেখে যেতে আমাদের মোটেও ভালো লাগছে না। আমরা ভাবতেই পারছি না যে তোমার কাছে থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। কচ্ছপ হাসগুলোর চলে যাবার কথা শুনে মনে কষ্ট পেল। অশ্রুসিক্ত চোখে সে উত্তর দিল: তোমরা তো জানো আমারও পানি ছাড়া বসবাস করা কঠিন ব্যাপার। তাই তোমরা যেখানেই যাও আমাকেও নিয়ে যেও। আমাকে একা রেখে যেও না। হাঁস বলল: আমরাও তোমার সাথে থাকতে পছন্দ করি। তুমি আমাদের খুব ভালো বন্ধু। বন্ধুর কাছ থেকে আলাদা হওয়া খুব কঠিন। কিন্তু কী করা যেতে পারে? হ্রদ শীঘ্রই শুকিয়ে যাবে এবং আমাদের এখানে খাবার খুঁজে পেতে সমস্যা হবে। হাঁস আরও বললো: হে প্রিয় বন্ধু! আমাদের তো তোমাকে এখানে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না।  কিন্তু আমাদের সাথে ভ্রমণ করাও তো তোমার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার।

কচ্ছপ ও হাঁসের গল্প

কারণ এখান থেকে সেই হ্রদটি অনেক দূরে। পথের অবস্থাও ভালো না। পাথরের চূড়া, পর্বত অতিক্রম করে যেতে হবে। আমাদের পাও তো তোমার সঙ্গে পায়ে পায়ে চলার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। তাছাড়া তুমি তো আমাদের সাথে উড়তেও পারবে  না। কচ্ছপ পীড়াপীড়ি করে বললো: কোনো কাজই অসম্ভব নয়। তোমরা তো আমার চেয়েও বুদ্ধিমান। নিশ্চয়ই একটা সমাধান বের করতে পারবে। আমাকে একা রেখে চলে গেলে বন্ধুত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। একটি হাস বললো: হয়তো কোনো না কোনো একটা সমাধান আছে তবে কিছু জটিলতাও আছে। তোমার সম্পর্কে আমরা যদ্দুর জানি, তুমি তা ভালোভাবে করতে পারবে না।

কচ্ছপ কৌতূহলের সঙ্গে বললো: কেন? কী জানো তোমরা? আমি কী দোষ করেছি? হাঁস বললো: তুমি অধৈর্য এবং বেশি কথা বলো। তোমার আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে। হুট করেই রেগে যাও। তোমার মতের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে অবিলম্বে তুমি তার সাথে ঝগড়া শুরু করে দাও। তাছাড়া তুমি বেশি ছিদ্রান্বেষি। এক মুহূর্তও তুমি নির্বাক প্রশান্ত থাকতে পারো না। যদি তুমি আমাদের সঙ্গে যেতেই চাও তাহলে কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কচ্ছপ বললো: আমার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপন ত্রুটিগুলি না জেনে কেউ নিজেকে সংশোধন করতে পারে না। তোমরা দেখে নিও আমি কীভাবে নিজেকে সংশোধন করি। কথা দিচ্ছি, তোমরা যা যেভাবে করতে বলবে আমি তাই করবো।

হাঁসগুলো বললো: কিন্তু আমরা অনেকবার তোমাকে পরীক্ষা করে দেখেছি এবং বুঝতে পেরেছি যে তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে না। তবু আমরা যেহেতু চাই তুমি আমাদের সাথে থাকো, তাই তোমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে পুরো সফরে একটা কথাও বলবে না যতক্ষণ না আমরা পৌঁছাই। কচ্ছপ বললো: খুবই সহজ ব্যাপার। আমি এমনকি প্রয়োজনে শ্বাস না নিতেও প্রস্তুত আছি। হাঁস বললঃ তাহলে মনযোগ দিয়ে শোনো। এটা একটি কাঠের টুকরো। তুমি এই টুকরোটিকে তোমার মুখ দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরবে। আমরা টুকরোটির দুই প্রান্ত নিয়ে উড়াল দেবো। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবো। হাসগুলো কচ্ছপকে আরও বললো: মনে রাখবে লোকেরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি বা উপহাস করতে পারে। তুমি মাথা ঠাণ্ডা রেখে চুপচাপ থাকবে। একটি শব্দও করবে না। কচ্ছপ রাজি হলো। কথা অনুযায়ী এবার কাজ শুরু হলো। হাস দুটো কাঠের টুকরোর দুই পাশ নিয়ে উড়াল দিলো। কাঠের টুকরোর মাঝখানে দাঁত কামড়ে ঝুলে থাকলো কচ্ছপ। হাসগুলো জনবহুল একটি গ্রামের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো। গ্রামের এক লোক ওই দৃশ্য দেখে সবাইকে দেখার জন্য ডেকে আনলো। দৃশ্য দেখে লোকেরা গুঞ্জন শুরু করলো। কচ্ছপের খারাপ লাগলো ওই গুঞ্জন। কিন্তু সে তো কথা দিয়েছে কথা বলবে না, তাই চুপ করে থাকলো। মনে মনে ভাবল, কী বে-ইনসাফ মানুষরে বাবা! কচ্ছপ উড়ছে দেখে তারা ঈর্ষান্বিত। হাঁসেরা তখনও উড়ছিল, কচ্ছপ তখনও ভাবছিল আর মানুষ চিৎকার করছিল।

কচ্ছপের কানে এলো: দেখো,কী ভালো বন্ধু ওরা,একসাথে তারা আকাশে উড়ছে।"আরেকজন বলেছেন, কচ্ছপ ভাবছে সে নিজেও উড়তে পারে। কচ্ছপের খারাপ লাগলো। সহ্য করতে পারলো না। চিৎকার করে বলে উঠলো: তোদের চোখ অন্ধ হয়ে যাক হিংসুকের দল। মুখ খুলতেই সে মাটিতে পড়ে গেল এবং মারা গেল। হাসেরা উপর থেকে এই দৃশ্য দেখে লাঠি ফেলে দিয়ে উড়ে গেল। তারা বললো: উপদেশ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব ছিল এবং আমরা তা করেছি। কিন্তু উপদেশ শোনা এবং তার উপর আমল করার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও অধ্যবসায়।# 

ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/৯