স্বাস্থ্যকথা: ভিটামিন ডি ঘাটতি-পর্ব ৫
'ভিটামিন ডি ঘাটতি পূরণে সামুদ্রিক মাছ খান ও নিয়মিত রোদ পোহান'
ভিটামিন ডি এর অভাবে বহুসংখ্যক রোগ হতে পারে। ভিটামিন যথাযথভাবে থাকলে বড় বড় রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
তবে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আছে কিনা তার লক্ষণ দেখা দিলে তবে পরীক্ষা করাবেন এবং ওষুধ সেবন বা ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেবেন এমনটি ভাবলে বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারেন। তাই অপেক্ষা না করে যখনই সুযোগ হবে আপনারা ভিটামিন ডি পরীক্ষাটি করে উদ্যোগ নেবেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম।
পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। ভিটামিন ডি এর ঘাটতির ফলে যেসব রোগ্যব্যাধী হয় তা এবং করণীয় নিয়ে কথা আমাদের আলোচনার আজ আমরা কথা বলব পঞ্চম পর্বের আলোচনায়। আর এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএসএমএমইউ এর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপাক ডা.শাহজাদা সেলিম। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক টেক্সিলা আমেরিকান ইউনিভার্সিটি এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক।
সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে ভিটামিন ডি সম্পর্কে দুটো কথা বলে রাখি। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন 'ডি'। ভিটামিন 'ডি' অস্থি ও দাঁতের কাঠামো গঠন করে। অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়, রক্ত প্রবাহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাবে নানাধরণের রোগ হতে পারে এবং তা কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তো চলুন ভিটামিন ডি ঘাটতি সম্পর্কিত পঞ্চম ও শেষ পর্বের আলোচনায় যাওয়া যাক।
অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম, রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, চতুর্থ পর্বের আলোচনার শেষ বিষয়টি-সময়ের অভাবে আমরা শেষ করতে পারিনি। ভিটামিন ডি এর অভাব আছে এ বিষয়ক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় কথা হচ্ছিলো। তো যদি আপনি শুরুতেই চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টি সম্পর্কিত আলোচনার বাকিটুকু বলেন..
অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম: দেখুন, ভিটামিন ডি এর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে আমরা তিনটা মেথড ব্যবহার করে থাকি। আর পরীক্ষার জন্য একটি পদ্ধিতিতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। অপর একটি মেথডে খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু যে পদ্ধতিকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে জানি সেটি করাতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লাগে। অনেক চিকিৎসক যেটি করেন- সেটি হচ্ছে শুধু টেস্ট করানোর জন্য পাঁচ হাজার টাকা খরচ না করে সরাসরি ভিটামিন ডি এর ওষুধ দিয়ে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সেটা গ্রহণ করি। যেমন ধরুন কভিডের সময় টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে গিয়ে রোগীটি আবার করোনায় আক্রান্ত না হয়ে পড়েন সেজন্য আমরা মেনে নিয়েছিলাম যে স্বল্পমাত্রার ভিটামিন ডি এর ডোজ পরীক্ষা ছাড়াই শুরু করতে পারা যায়। টেস্ট করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সবক্ষেত্রে যদি টেস্ট ছাড়াই ভিটামিন ডি দিতে থাকি তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনটক্সিকেশনের ঝুঁকিটা থেকে যাবে। এতে ভালোর চেয়ে খারাপও হতে পারে।
রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম- ইনটক্সিকেশন হলে কি ক্ষতি হতে পারে?
ডা. শাহজাদা সেলিম: ইনটক্সিকেশন যদি হয়- যেহেতু ভিটামিন ডি খুব ধীরে ধীরে কাজ করে সেহেতু এই সংকট দূর করতে দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে। এবং উল্টোটাও হতে পারে। এমনও হতে পারে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজনও হতে পারে। আর সেজন্য আমরা সবসময় রক্ষণাত্মক ভূমিকায় থাকি। যদি কোনো সন্দেহ থাকে এবং পরীক্ষা না করতে পারেন তাহলে ওষুধ দেয়ার দরকার নেই। আর পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে ভিটামিন ডি এর ওষুধ ব্যবহার শুরু করবেন।
শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! ভিটামিন ডি এর ঘাটতি ও করণীয় সম্পর্কে এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিমের পঞ্চম ও শেষ পর্বের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর আবারও ফিরে এলাম স্বাস্থ্যকথার আলোচনায়। অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, আপনি চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরলেন। অতি সাধারণ মানুষের পক্ষেও মোটামুটিভাবে এর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব এবং ওষুধের দামও কম। সবশেষে রেডিও তেহরানের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ভিটামিন ডি ঘাটতি নিয়ে আর যদি কোনো পরামর্শ দেন বা আর কোনো কথা বলেন?
অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম: আপনাকেও ধন্যবাদ ভিটামিন ডি ঘাটতি সম্পর্কিত আলোচনায় রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আমাকে সংযুক্ত করার জন্য। বিশ্বজুড়ে যারা রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরটি শুনছেন তাঁদের সবাইকে একটি অনুরোধ করতে চাই। সেটি হচ্ছে- আপনাদের মধ্যে যদি এই ধারণা হয় এবং অপেক্ষা করতে থাকেন এই মনে করে যে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে তবে পরীক্ষা করাবেন। কিছু লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করাবেন এবং তারপর চিকিৎসা নেবেন। যদি এমনটি ভাবেন তাহলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারেন।
ফলে যাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির ঝুঁকি বেশি তারা নিজেদের উদ্যোগে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। অথবা অন্য কোনো রোগের জন্য গেছেন তখন চিকিৎসক তো তার চাহিদা মতো পরীক্ষা দেবেন আপনিও কিন্তু সে সময় ভিটামিন ডি পরীক্ষার বিষয়টি সামনে আনতে পারেন নিজ উদ্যোগে।
তবে আমাদের সবচেয়ে বড় যেসব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে-সেটি হচ্ছে-
প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাওয়ার সুযোগটি নিতে হবে। রোদে যেতে হবে। পর্যাপ্ত রোদ পোহাবার চেষ্টা করতে হবে। কাজের জন্য না হলেও অন্যকারণে হলেও রোদে যেতে হবে। অথবা একটা পরিকল্পনা মাফিক রোদ পোহাবেন এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। সবচেয়ে ভালো হবে- টোনা ফিস অথবা স্যামন্ড ফিস। সামুদ্রিক যেকোনো মাছের চর্বিতে ভিটামিন ডি আছে। ফলে সামুদ্রিক মাছ নিয়মিত খাবার অভ্যাস করতে হবে। ভিটামিন ডি আপনার হাড়কে শক্ত ও মজবুত করবে এবং অসংখ্য রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে। ভিটামিন ডি এর অভাবে অসংখ্য বড় বড় রোগ হতে পারে। যদি ভিটামিন ডি থাকে তাহলে সেসব রোগ হবে না।
তো অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, ভিটামিন ডি নিয়ে সৃষ্ট রোগ সম্পর্কিত আলোচনার পঞ্চম ও শেষ পর্বেও রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিশ্চয়ই আপনার মূল্যবান আলোচনা থেকে আমাদের শ্রোতা/ পাঠকবন্ধুরা উপকৃ ত হবেন।
আর শ্রোতাবন্ধুরা! ভিটামিন ডি এর ঘাটতি নিয়ে ৫ টি পর্বে এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিমের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও পরামর্শ শুনেছেন। আপনারা সবাই ভিটামিন ডি নিয়ে অবহেলা করবেন না। রোদে যাবেন, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ খাবার চেষ্টা করবেন। মাঝে মাঝে পরীক্ষা করাবেন যে ভিটামিন এর ঘাটতি আছে কি না? আগামী সপ্তায় স্বাস্থ্যকথার আসরে নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। সেসব আসরে সবাই আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলেই আশা করছি। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন একামনা করে স্বাস্থ্যকথার আসর থেকে এখানেই বিদায় চাইছি।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭