ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩ ১৯:৪১ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের কালজয়ী গল্পের পসরা গল্প ও প্রবাদের গল্পের আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি গল্প। গল্পটি এরকম:

পার্বত্য অঞ্চলের একটি গূহায় চোর-ডাকাতের একটি দল বসবাস করতো। এই ডাকাতের দল দিনের পর দিন বিভিন্ন কাফেলার পথ রোধ করে লুটতরাজ করতো। কাফেলার কাছ থেকে যা কিছুই পেতো সব নিয়ে গিয়ে সেই গূহায় উঠতো। এরপর নিজেদের মধ্যে প্রাপ্ত মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতো তারা। পার্বত্য এই গূহাবাসীদের অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলো না কী করে এই ডাকাত চক্রের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এভাবেই যাচ্ছিলো দিন। সমস্যা নিয়ে বৃদ্ধদের মাঝেও গুঞ্জন উঠলো। অবশেষে বৃদ্ধরা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বৈঠকে বসলো। কীভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তার উপায় নিয়ে ভাবতে বসলো। বৃদ্ধদের একজন বললো: চোর-ডাকাতের দল দিনের পর দিন ধনী হচ্ছে। ওদের যদি এখনই প্রতিহত করা না হয় কিংবা তাদের এইসব অপকর্মের শাস্তির ব্যবস্থা যদি করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাদেরকে কাটিয়ে ওঠা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নাও হতে পারে। এভাবে বিচিত্র পরামর্শ এলো মুরব্বিদের কাছ থেকে। অবশেষে একটা উপায় বেরিয়ে এলো। 

জি, মুরব্বিরা পার্বত্য গূহাবাসী চোর-ডাকাতের দলকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটা দূরদর্শি সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন। সিদ্ধান্তটা এরকম: বীরত্বপূর্ণ ক'জন যুবক চোরদের বাসস্থান পার্বত্য গূহার উপরে গিয়ে অবস্থান নেবে। রাতে যখন তারা গূহা থেকে বের হয় তার আগেভাগে চোরের দলের বেরুবার পথের দু'পাশে লুকিয়ে থাকবে। যখন গূহা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকবে শক্তিশালী যুবক পালোয়ানরা তখন সুযোগ বুঝে চোরদের ওপর হামলা চালাবে এবং তাদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেবে। ডাকাতের দল সেদিন এক কাফেলার ওপর হামলা চালায় এবং তাদের সকল মালামাল লুট করে নেয়। 

চুরির মালামাল ভাগাভাগি করার জন্য এবং খানিক বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ডাকাতের গোষ্ঠি ফিরে যায় গূহায়। ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তারা। সে কারণে দ্রুত তাদের ঘুম এসে গিয়েছিল। ঘুমিয়ে পড়লো পরবর্তী হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সুবিধার্থে। রাতের ঠিক মধ্যভাগে যুবক পালোয়ানরা যেখানে যেখানে লুকিয়েছিল সেইসব স্থান থেকে বেরিয়ে এলো এবং চোরদের ওপর হামলা করলো। চোরদের হাত-পা বেঁধে ফেললো। পরদিন সকালে চোরের দলকে নিয়ে গেল শহরের শাসকের দরবারে। শাসক সব কথা শুনে সকল ডাকাতকেই হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। চোরদের মাঝে এক তরুণও ছিল। তার সামনে তো জীবনের বহু পথ তখনও পাড়ি দেওয়া বাকি ছিল। সেই তরুণ ছিল ডাকাত দলের সর্দারের ছেলে। এক মন্ত্রীর মনে ওই তরুণের জন্য খারাপ লাগলো।

মন্ত্রী শাসকের দিকে তাকিয়ে বললো: হে ন্যায়পরায়ণ শাসক! আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। শাসক বললেন: অনুরোধটা কী? মন্ত্রী বললো: অনুরোধটা হলো ওই তরুণকে হত্যা না করে আমাকে দিয়ে দিন। সে অনেক ছোট এখনও। ওকে যদি নৈতিক প্রশিক্ষণ দেই, আমার বিশ্বাস সে সত্য ও সুন্দরের পথে ফিরে আসবে। শাসক মন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন। বললেন: আমার মনে হয় না তুমি যেরকম ভাবছো সেরকম কিছু ঘটবে,তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। ও সঠিক পথে আসবে না। কেননা সে তার ছোটবেলা থেকে চুরি-ডাকাতি করেই জীবন কাটিয়ে এসেছে। চুরির মালামাল খেয়েই বড় হয়েছে। ওই কিশোর সাপের বাচ্চার মতো। এখন হয়তো কাউকে সে দংশন করবে না কিন্তু যখন বড় হবে তখন ঠিকই দংশন করতে শুরু করবে। মন্ত্রী বললো: আপনি যা বলছেন সম্পূর্ণ সত্য। এই তরুণ তো ডাকাতদের সঙ্গে থেকে বড় হয়েছে। লুটতরাজের মালামাল খেয়েছে। সে কারণে ডাকাতির পথই বেছে নিয়েছে।
তারপরও ওকে যদি ভালোভাবে নীতি-নৈতিকতার প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় কিংবা সৎ মানুষদের সংস্পর্শে রাখা যায় তাহলে পরিবর্তন আসতেও পারে। ও এখনও একেবারে শিশু। তাকে যে প্রশিক্ষণই দেওয়া হবে সেরকমই হয়ে উঠবে সে। সে তো এখনও কাদামাটির মতো কিংবা আস্ত কাঠের মতো যেরকম খুশি সেরকমই তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ আছে। শাসকের দরবারে উপস্থিত অপরাপর সভাসদ মন্ত্রীর কথার পক্ষে সায় দিলেন। সেইসঙ্গে হাকেমের প্রতি অনুরোধ জানালেন তরুণকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। শাসক শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে বললেন: ঠিক আছে। আপনাদের অনুরোধে ওই শিশুটিকে ক্ষমা করে দিলাম যদিও তাতে কোনো লাভ আছে বলে আমি মনে করি না।

শাসক তরুণকে ক্ষমা করে দেওয়ার পর মন্ত্রী ওই তরুণকে তার সঙ্গে বাসায় নিয়ে গেল এবং ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিলো। তরুণ তার মেধা এবং প্রতিভা অনুসারে সৎকর্মশীলদের কাজকর্ম ও আদর্শ শেখার চেষ্টা করলো। একসময় সে বেশ শিষ্টাচারী এবং জ্ঞানী এক যুবকে পরিবর্তিত হয়ে গেল। মন্ত্রী সুযোগ পেলেই যুবকের উন্নতির কথা শাসকের কানে তোলার চেষ্টা করতো। তার বিচিত্র গুণাবলির প্রশংসা করারও চেষ্টা করতো। যতবারই মন্ত্রী ওই তরুণের প্রশংসা করতো ততবারই শাসক মৃদু হেসে বলতো: নেকড়ের বাচ্চা নেকড়েই হয় যতোই সে মহৎ মানুষের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠুক। এরপর বছর দুয়েক পার হয়ে গেল। লুটেরাদের একটি দল ওই যুবকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার চেষ্টা করলো এবং তার সঙ্গে প্রতারণা করলো।

এতো বেশি প্ররোচিত করলো যে তরুণ লুটেরাদের দলে ভিড়ে গেল। মন্ত্রী কিছুই জানলো না। সে তো ওই তরুণকে আপন সন্তানের মতোই স্নেহ করতো। একদিন ওই তরুণ সুযোগের অপব্যবহার করে বসলো। তরুণ মন্ত্রীকে এবং তার দুই সন্তানকে হত্যা করলো। মন্ত্রীর যা মালামাল ছিল সব লুট করে নিয়ে পার্বত্য গূহায় ফিরে গেল। সে তার বাবার স্থানে বসলো এবং লুটেরাদের সর্দার হয়ে গেল।#

পার্সটুডে/এনএম/৩

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ