মার্চ ২৯, ২০২৩ ১৯:২৫ Asia/Dhaka

জীবন ও প্রেমকে উদ্দীপনা আর শিহরণময় আনন্দের মাধ্যমে মিষ্টি করা উচিত। একঘেয়েমিপূর্ণ ও ছকে-বাঁধা জীবন দাম্পত্য বা পারিবারিক জীবনকে সুখময় হতে দেয় না। তাই জীবনকে যান্ত্রিক করে তুলবেন না।

মনে রাখবেন সবচেয়ে ভালো স্বামী-স্ত্রীও দাম্পত্য জীবনে অপ্রত্যাশিত অনেক সমস্যার শিকার হন। সমস্যাগুলো জীবনেরই অংশ যা কেউই এড়াতে পারে না। তাই এটা ভাববেন না যে জীবনসঙ্গী অন্য কেউ হলে হয়তো কোনো সমস্যার শিকার আপনি হতেন না! বরং আপনার জীবনসঙ্গী আপনার ওপর সন্তুষ্ট কিনা- সব সময় নিজেকে সেই প্রশ্ন করুন। আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন এবং তার সন্তুষ্টির জন্য উদ্দীপনা আর শিহরণময় আনন্দের ব্যবস্থা করুন।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে আমরা ইরানি তুর্কম্যানদের পরিবার নিয়ে কথা বলব। ইরানের তুর্কম্যানরা সাধারণত বসবাস করেন গোলেস্তান প্রদেশে। নানা জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত এ অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। তাদের পোশাক, ধর্মীয় প্রথা, বিয়ে ও পরিবার গঠন ও ঐতিহ্যবাহী নানা আচার-অনুষ্ঠানে রয়েছে বৈচিত্র্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এই প্রদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হল তুর্কম্যান। এই প্রদেশের তুর্কম্যান অধ্যুষিত প্রধান জেলা বা অঞ্চলগুলো হল আকগালা, গমিশান, গোম্বাদকাউস, মারাভে তাপ্পেহ ও বন্দরে তুর্কম্যান।

ইরানি তুর্কম্যান নারীর ঐতিহ্যবাহী বিয়ের অনুষ্ঠান

 

ইরানি তুর্কম্যানদের পরিবারগুলো অতীতে ছিল বেশ বড়। পিতা ছিলেন এইসব পরিবারের প্রধান ও একক নেতৃত্বের অধিকারী। বর্তমান শতাব্দিতে তাদের মধ্যে  ক্ষুদ্র পরিবারের প্রচলনও দেখা যায়।  তুর্কম্যান পুরুষরা কৃষি ও পশুপালনের কাজ এবং তুর্কম্যান নারীরা গম ভাঙ্গানো, ফল পাড়া ও ফল শুকানো, গৃহপালিত পশুর দুগ্ধ দোহন, পনির, ঘি ও মাখনের মত নানা দুগ্ধজাত খাবার তৈরি, কার্পেট বুনন ও রান্না-বান্নার মত গৃহস্থালি নানা কাজ করে থাকেন।তুর্কম্যানদের বিয়ে তাদের অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আনায় এ দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ববহ। তাদের বিয়ে মানে কনের পরিবার থেকে একজন সক্রিয় নারী কর্মী কমে যাওয়া ও বরের পরিবারে একজন সক্রিয় কর্মী যুক্ত হওয়া। তাই যে পরিবার তাদের ঘরে বউ আনে তারা ওই বউ বা কনের মাকে ওই কন্যাকে স্তন্যদানের সম্মানী-বাবদ অর্থ দেন। তুর্কম্যানদের বিয়ের প্রথা অনুযায়ী কনের কাফেলায় থাকা প্রত্যেক নারীকে একটি করে ওড়না বা শাল জাতীয় কাপড় উপহার দেয়া হয় বিয়ের উৎসব অনুষ্ঠানের পর। এই কাফেলায় বরের কাফেলার নারী ও শিশুসহ নানা বয়সের লোকেরাও থাকেন।

অতীত যুগে তুর্কম্যানরা কনেকে বিশেষ এক ধরনের কনে-বাহক কক্ষ বা হাওদায় চড়িয়ে বিয়ের ভ্রমণে বের হত। এ কক্ষ তৈরিতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় নানা রংয়ের চল্লিশটি কাপড়  যা গরু বা ঘোড়ার গাড়ি বা উটের ওপর বসানো হয়। এর ভেতর ও বাইর নানা সাজে সুসজ্জিত থাকে। তুর্কম্যানরা এই কক্ষকে বলে কোযাওয়ে। এই কক্ষের ছাদে থাকতো গির্জার ঘণ্টার মত একটি বড় ঘণ্টা। ফলে উট, গরু বা ঘোড়া চলতে থাকলে ঘণ্টার আওয়াজ শোনা যেত। ঘণ্টার শব্দ উৎসব আনন্দের বেশ  প্রাচীন মাধ্যম।  আজকাল এ জাতীয় কনে-বাহনের ব্যবহার অনেক কমে গেছে ফুল ও নানা সাজে সজ্জিত মটর-কার ব্যবহারের ফলে। বর ও তার সঙ্গীরা একটি মটর গাড়িতে এবং কনে ও তার সঙ্গীরা আরেকটি মটরগাড়িতে চড়েন।

ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরা কয়েকজন তুর্কম্যান পুরুষ

 

বয়স্ক ব্যক্তিদের কাফেলা কনের বাবার বাড়িতে পৌঁছলে তাদের একজন নির্ধারিত মোহরানা একটি ব্যাগে রেখে তা কনের পরিবারকে দেন। কনের পরিবারের বয়স্করা এই কাফেলাকে সম্বর্ধনা জানান। তাদেরকে এমন এক দস্তরখানে বসানো হয় যেখানে সাজিয়ে রাখা হয় অনেক ফল ও মিষ্টি।  এরপর বরের কাফেলা হৈ-চৈ করে তাদের আগমনের বার্তা জানায়। এই কাফেলাও কনের পরিবারের জন্য অনেক উপহার বয়ে আনে। তুর্কম্যানদের বিয়ের উৎসবের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হল নৌকা-বাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা বয়স্কদের কাছ থেকে পুরস্কার নেন। তুর্কম্যানদের বিয়ের উৎসব উপলক্ষে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাও হত অতীতে। আজকাল এ অনুষ্ঠানও খুব কমই দেখা যায়।  

এবারে আমরা সফল পরিবারের বিষয়ে কয়েকটি কথা বলব। একটি সফল পরিবারের কেন্দ্রস্থল হল মা ও বাবা। অবশ্য ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ভালো ও সফল পরিবারে বিশেষ কোনো ব্যক্তি তথা বিশেষ কোনো পুরুষ ও নারীর একচেটিয়া কর্তৃত্ব থাকে না বরং তাতে থাকে সবার মধ্যে সমঝোতা, সংহতি ও সৌহার্দ। পরিবার হচ্ছে সুস্থতা, সততা, একনিষ্ঠতা, ন্যায়বিচার ও সৌভাগ্যের শিক্ষাগুলো অনুশীলনের কেন্দ্র। এখানে প্রত্যেক সদস্যের আত্মিক শূন্যতা পূরণ করেন অন্যরা। আর এ বিষয়টি নারী ও পুরুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য।একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেবল ঝগড়া না হওয়া বা তালাকের কথা উচ্চারিত না হওয়াটাই তাদের সাফল্য বা সুখের নির্দেশক– এ কথা বলা যায় না। হয়তো স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে একজন খুব ভালো স্বভাবের হওয়ায় অন্যের অনেক জুলুম নীরবে সয়ে যান। বরং সফল ও সুখী পরিবারের লক্ষণ হল এটা যে এমন পরিবারের সদস্যরা মানসিক ও আত্মিক চাহিদাসহ পরস্পরের সব চাহিদাকে গুরুত্ব দেন এবং পরস্পরের প্রতি সহনশীল হন।

ইরানি তুর্কম্যানদের বিয়ের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা

 

 কেবল বিয়ের সময় সর্বোত্তম স্ত্রী বা স্বামী বাছাই করে সুখী হওয়ার নীতি বাস্তবসম্মত নয়।  পর্যায়ক্রমে সাধনার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করার মধ্যেই রয়েছে বেশি আনন্দ। হযরত আলী ঘরে ঢুকেই ফাতিমা-সা.আ-কে দেখামাত্রই সব কষ্ট ও ক্লান্তি ভুলে যেতেন ও বিশেষ প্রশান্তি লাভ করতেন। ফলে তিনি নিশ্চিন্তে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হতে পারতেন। হযরত আলীর ভাষায় ফাতিমা ছিলেন আল্লাহর ইবাদতের পথে তাঁর প্রতি সর্বোত্তম সাহায্যকারী। -আসলে আদর্শ ইসলামী পরিবারের মূল বৈশিষ্ট্য হল প্রশান্তি, পারস্পরিক অনুরাগ ও দয়া। একটি সফল পরিবারে উন্নত পর্যায়ের পরবর্তী প্রজন্ম প্রশিক্ষিত হয়। একজন ভালো মা উপহার দেন ভালো সন্তান। পরিবারে ইসলামী শিক্ষার পরিবেশ থাকলে সে পরিবার গড়ে তোলে সুস্থ সমাজ গড়ার সুসন্তান।  পরিবারকে সুরক্ষার নানা নীতি মেনে চলা উচিত।  যেমন, রিজিক হালাল না হলে সন্তানদের মধ্যেও নীতি নৈতিকতার প্রভাব থাকে না। ইমান ও পারস্পরিক দয়ার পাশাপাশি এ দিকটিও বেশ জরুরি। #


পার্সটুডে/এমএএইচ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
 

ট্যাগ