'মহানবীর আহলে বাইত আল্লাহর চেহারা যা চিরকাল টিকে থাকবে'
রমজান: খোদাপ্রেমের অনন্য উৎসব (পর্ব-৯)
রোজার উদ্দেশ্য হল খোদা সম্পর্কে সদা-সচেতন থাকা। মহান আল্লাহকে সব সময় স্মরণে রাখলে ও আল্লাহ'র ক্ষমতা আর বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা মাথায় রাখলে মানুষ কখনও পাপ বা অন্যায় করতে পারে না।
মহান আল্লাহর পরিচিতি সংক্রান্ত নামগুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করা এ জন্যই জরুরি। আল্লাহকে ভালোভাবে জানার পর ও চেনার পরের ইবাদতগুলো আল্লাহকে না জেনে করা ইবাদতগুলোর চেয়ে বহু গুণ উত্তম এবং বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, যারা জানে ও যারা জানে না তারা কখনও সমান নয়।
মহান আল্লাহ সুরা হাশরের ২৪ নম্বর আয়াতে নিজ পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন: তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।-
মহান আল্লাহর এইসব নামের রঙ্গে রঙ্গিন করতে হবে আমাদের জীবন।

আমরা কখনও আল্লাহর দয়া ও নেয়ামত গুণে শেষ করতে পারব না। আমাদের সব সময় মনে রাখা দরকার আমরা তাঁরই দাস। তিনি আমাদের প্রভু, মালিক ও মনিব। এমনকি আমরা যখন আল্লাহর অবাধ্য হই তিনি তখনও আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন। কবি নজরুলের ভাষায়: তোমার হুকুম তরক করি প্রতি পায়ে পায় তবু আলো দিয়ে বাতাস দিয়ে বাঁচাও এ বান্দায়! ইউসুফ নবী মিশরের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একদিন তার প্রাসাদের বাইরে খুব দরিদ্র এক ব্যক্তিকে দেখলেন। জিবরাইল ফেরেশতা বললেন, এই ব্যক্তি হলেন সেই নবজাতক যিনি জোলায়খার সতীত্ব হরণের মিথ্যা অভিযোগ সম্পর্কে মহান আল্লাহর হুকুমে বলেছিলেন, ইউসুফের জামা যদি সামনে ছেঁড়া থাকে তাহলে জোলায়খা সত্যবাদী আর যদি পেছনে ছেঁড়া থাকে তাহলে জোলায়খা মিথ্যাবাদী। হযরত ইউসুফ তাকে অত্যন্ত সম্মান দেখিয়ে সব ধরনের জীবন-উপকরণ,ভাতা ও সম্পদ দান করেন। জিবরাইল হেসে বললেন, এই ব্যক্তির সাক্ষ্য ও পরামর্শ আপনার জীবন রক্ষা করেছিল বলে আপনি আজ তাকে এত কিছু দিলেন! তাহলে ভেবে দেখুন মহান আল্লাহ'র একত্বের সাক্ষ্য দিলে আল্লাহ তাকে কত বেশি প্রতিদান দিতে প্রস্তুত রয়েছেন?
মহান আল্লাহকে কত গভীরভাবে ভালবাসলে একজন ইমাম হুসাইন হওয়া যায় ও হওয়া যায় একজন যাইনাব! ইমাম হুসাইনের বোন হযরত যাইনাব কারবালার মরুতে শহীদ হওয়া সৌভাগ্যবানদের লাশ দেখতে আসতেন। কিন্তু যখন তার দুই তরুণ পুত্রের লাশ তাবুতে ফেরত আসলো তখন তিনি এলেন না, বরং বললেন: হে আল্লাহ তুমি এই ছোট্ট দুটি উপহার আমার পক্ষ হতে তোমার জন্য কবুল কর!
মহান আল্লাহর ৯৯ বিখ্যাত নামের অন্যতম নাম আবক্বা। সুরা আররাহমানে মহান আল্লাহ এই নাম উল্লেখ করে বলেছেন, সব কিছুই ধ্বংসশীল একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা বা সত্তাই টিকে থাকবে। - অন্য কথায় মহান আল্লাহ চিরঞ্জীব। যখন কিছুই ছিল না তখনও তিনি ছিলেন। যখন কিছুই থাকবেনা মহাপ্রলয় বা কিয়ামতের ফলে তখনও তিনি থাকবেন। তিনি সব সময়ই আছেন ও থাকবেন এবং তিনি অমর ও অক্ষয়। তাই মহান আল্লাহর সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষা জরুরি অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষও পরকালে টিকে থাকবে চিরকাল। কেউ জান্নাতে আবার কেউবা জাহান্নামে অমর হয়ে থাকবে। তাহলে কি মানুষও আবক্বা বা চিরঞ্জীব? এর উত্তর হল মানুষকে অমরত্ব দেয়া হলেও তা তার নিজ ক্ষমতায় নয় বরং মহান আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে। কিন্তু মহান আল্লাহ নিজ শক্তিতেই চিরঞ্জীব। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা ছাড়া আমরা কেউই অমর হতে পারব না। বলা হয় কেউ যদি সন্ধ্যার সময় ১০০ বার ইয়া আবক্বা বলে জিকির করেন তাহলে তাকে কোনো বিপদ স্পর্শ করবে না।
যা কিছু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় তা-ই টিকে থাকে এবং তা সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্রে পরিণত হয়। সুরা নাহ্ল্-এর ৯৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না।
সুরা কাহাফে মহান আল্লাহ বলছেন, ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি এসব কেবলই পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। - অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে করা সৎকাজ যেমন সদকা দেয়া ও মসজিদে দান করা এসবই চিরকাল টিকে থাকবে এবং এসবের সাওয়াব বা প্রতিদানও অব্যাহত থাকবে। মৃত্যুর পরও এসবের সাওয়াব লেখা হতে থাকে দাতার নামে। কেউ যদি কোনো সুপ্রথা চালু করে তাহলে তা যতদিন চালু থাকবে ততদিন তার সাওয়াব ওই প্রথার প্রতিষ্ঠাতা পেতে থাকবেন। কুপ্রথা চালু করলে অবস্থাটা হবে ঠিক বিপরীত। একটি ভালো বই লিখে গেলেও সেটার সাওয়াবও যতকাল বইটি টিকে থাকবে ততকাল লেখক পেতে থাকবেন। মহানবীর আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসাও স্থায়ী সম্পদ যার প্রতিদান চিরকাল টিকে থাকবে। যারা আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি তারাও চিরস্থায়িত্ব লাভ করেন।
সুরা আররাহমানের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহর যে চেহারার চিরকাল টিকে থাকার কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন, আমরা অর্থাৎ মহানবীর আহলে বাইতই হচ্ছি আল্লাহর চেহারা যা চিরকাল টিকে থাকবে। -তাই যারা মহানবীর আহলে বাইতের অনুসারী হবে তারাও চিরকাল টিকে থাকবে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।