এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১৭:১৬ Asia/Dhaka

পাপ বর্জনের নানা উপায় নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা গত পর্বগুলোতে। কারণ পাপ বর্জন রমজানের সবচেয়ে সেরা আমল বা কাজ।

পাপ বর্জন করা ছাড়া আমরা খোদা-সচেতন হতে সক্ষম হব না। খোদা-সচেতনতা অর্জন করতে না পারলে আমাদের রোজা রাখার উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে। পাপের পরিণতি সম্পর্কে ভাবনা পাপ থেকে দূরে থাকে। মনে রাখা দরকার যে পাপের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু পাপের মন্দ প্রভাব অনেক সময় পর্যন্ত থেকে যায়। মহান আল্লাহ যদি পাপ বর্জনের বিষয়ে কুরআনে আমাদের সতর্ক নাও করতেন তবুও বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে আমাদের পাপ বর্জন করার দরকার হত।  মহানবীর হাদিসের আলোকে আমাদের প্রতিদিনই উচিত নিজের হিসেবে নিজেই নেয়া। আর এ জন্য রাতে ঘুমানোর আগে আমরা কিছু সময় সারা দিনের কাজ নিয়ে ভেবে দেখতে পারি যে আজ কয়টা খারাপ কথা বললাম ও কয়টা খারাপ কাজ করলাম এবং কোন্ কোন্ ভালো কাজ করেছি। মন্দ কথা ও কাজের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করতে হবে এবং ভালো কাজ করতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।

দেশ-বিদেশের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শন ও প্রাচীন জনবসতিগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে শিক্ষা নিয়ে পাপ বর্জন করতে হবে। আর এ জন্যই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ অতীতের খোদাদ্রোহি অনেক জাতির ইতিহাস তুলে ধরছেন এবং এইসব নিদর্শন দেখতেই সফরের পরামর্শ দিয়েছেন।

যেসব কাজ বা পাপ অন্য অনেক বড় পাপের পরিবেশ সৃষ্টি করে সেসব কাজ থেকে দূরে থাকাও পাপ বর্জনের অন্যতম উপায়। যেমন, মিথ্যা কথা বর্জন অনেক পাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। একবার এক ব্যক্তি মহানবীর (সা) কাছে এসে জানান যে তিনি পাপাচার বর্জন করতে চান, কিন্তু তা করতে পারছেন না। মহানবী (সা) তাকে বললেন, সারা দিনে যা যা করেছেন সে বিষয়ে আমার কাছে এসে সত্য কথা বলবেন। ওই ব্যক্তি সব পাপ অব্যাহত রাখতে গিয়ে ভাবল: মহানবীর কাছে তো সত্য কথা বলার ওয়াদা করেছি! এখন কোন্ মুখে লজ্জার মাথা খেয়ে বলব যে এই এই পাপগুলো করেছি?! তাই এখন থেকে আর কোনো পাপ করব না! এভাবে ওই ব্যক্তি পাপ বর্জনে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হয়ে তাতে সফল হন সত্য কথা বলার কারণে। বলা হয় মিথ্যা সকল পাপের মূল। তাই কেউ মিথ্যা কথা বর্জন করলে পাপও বর্জন করতে পারবে।

পর্দা বা হিজাব না করা বা আংশিক হিজাব করার কারণে অনেক সময় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মতভেদ এবং বিচ্ছেদ তথা তালাকের ঘটনা ঘটে। হিজাব না করার কারণে ব্যভিচারের পথও খুলে যেতে পারে।

পুরোপুরি বেকার থাকা বা অলসভাবে সময় কাটানোও পাপের পথ খুলে দিতে পারে। এ জন্যই বলা হয় অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই পুরোপুরি বেকার না থেকে ইবাদত বন্দেগি করা ও কোনো ভালো বই-পুস্তক পড়া বা জ্ঞান-চর্চায় কিংবা ব্যায়াম এবং খেলাধুলায় অথবা শিল্প-সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত থাকা উচিত পাপ বর্জন করার স্বার্থে।   নামাজ মানুষকে নানা ধরনের পাপ ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করে বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই মনোযোগ দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে সময় মত এবং সুযোগ থাকলে নফল নামাজও আদায় করা উচিত। কেউ যদি নামাজ পড়ার পরও পাপ করে তাহলে বুঝতে হবে তার নামাজ কবুল হয়নি এবং নামাজে তার মনোযোগ ছিল না।

মহান আল্লাহর স্মরণ ও শাস্তির ভয় মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। এক ব্যক্তি বাহ্যিক আচার-আচরণে বেশ ধার্মিকতা দেখালেও রাতের বেলায় সুযোগ পেলে চুরি করত। একরাতে এক ঘরে চুরি করতে গিয়ে দেখে বেশ দামি জিনিষ-পত্র রয়েছে ঘরটিতে এবং সেই ঘরের মালিক এক যুবতী তখন সেখানে ঘুমাচ্ছে। ওই চোর বেশ খুশি মনে ভাবল: এইসব দামী সম্পদ ছাড়াও আজ এক যুবতী নারীকেও নাগালে পেলাম! কি সৌভাগ্য আমার! কিন্তু হঠাৎ তার মনে হল: আচ্ছা আমি যে জীবনে এত চুরি করলাম মৃত্যুর পর তো অবশ্যই শাস্তি পাব! আমি কি খোদায়ি শাস্তি এড়াতে পারব? –এই ভেবে সে অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়ে চুরি ও পাপের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজ ঘরে ফিরে এল। পরের দিন মহানবীর কাছে হাজির হয়ে দেখে ওই যুবতীও সেখানে উপস্থিত। ওই নারী মহানবীকে বলল: আমি অনেক সম্পদের মালিক, কিন্তু অবিবাহিত। গতকাল সম্ভবত এক চোর এসেছিল! যদিও সে চুরি করেনি তবুও আমি খুব ভয় পেয়েছি। আর ভাবছি অবিবাহিত থাকব না! আমার জন্য স্বামী দেখুন। এ অবস্থায় মহানবী তাকে এই ব্যক্তির স্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলে ওই নারী রাজি হয়। মহানবী (সা) তখনই বিয়ে পড়িয়ে দেন।

এভাবে ওই ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে ও স্মরণ করে চুরির জন্য অনুতপ্ত হওয়ায় বিয়ে করার সুযোগ পেল। সে তার স্ত্রীকে জানায় যে গতরাতের চোর ছিলাম আমিই। আল্লাহকে ভয় না করে যদি চুরি করতাম ও তোমার সম্ভ্রমহানি করে ক্ষণিকের সুখ পেতাম তাহলে আজকের এই স্থায়ী ও বৈধ পুরস্কার আমার ভাগ্যে জুটত না। এখন তোমাকে পেয়ে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমি সুখী থাকব। 

অনেক সময় কুরআনের বাণী ও স্মরণীয় উপদেশ পাপী মানুষেরও বিবেক খুলে দেয়। এক জুয়েলারির দোকানে লেখা ছিল পবিত্র কুরআনের এ আয়াত: মানুষ কি মনে করছে আমি তাকে দেখছি না? – এক চোর দামী আংটি চুরি করতে গিয়ে  দোকানের দেয়ালে এ আয়াত দেখে সতর্ক হয়ে আংটিগুলো গোপনেই দোকানের শো-কেসে রেখে দেয়। কুরআনের এ আয়াত যেন সিসিটিভির-ক্যামেরার মতই কার্যকর! মানুষ যখন খোদা-সচেতন বা খোদাভীরু হয় তখন তার বিবেকও পুলিশ বা সিসি ক্যামেরার কাজ করে!

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ