এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ২০:৫৪ Asia/Dhaka

গত কয়েক পর্বের আলোচনায় আমরা নারীর প্রতি ইসলামের সর্বোচ্চ ও যথাযোগ্য সম্মানের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। মানবীয় মর্যাদার দিক থেকে ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি।

মহানবী (সা) নারীকে সুগন্ধি ফুল বা লতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি নারীকে কর্মচারী বা প্রধান কর্মী হিসেবে ভাবতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত!

 মা হচ্ছেন সন্তানের প্রথম শিক্ষক। তার স্কুল হচ্ছে সেরা স্কুল। একজন ভালো ও সুশিক্ষিত মা-ই সমাজকে উপহার দিতে পারে যোগ্যতম নাগরিক।  আজ আমরা পরিবার, সমাজ ও আল্লাহর প্রতি নারীর দায়িত্ব বা সম্পর্ক বিষয়ে পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু কথা বলব।
ইসলামী মূল্যবোধের দৃষ্টিতে নারীর বাহ্যিক রূপ বা সৌন্দর্য কিংবা গয়না-অলঙ্কার নয় বরং তাঁর খোদাভীতি ও চারিত্রিক সুষমাই তাঁকে দেয় ঐশী মর্যাদা।  পবিত্র কুরআনের সুরা আহযাবের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: 

নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ,  যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা-পুরষ্কার।

মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত!

 

সুরা বাকারার ২২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বিশ্বাসী দাসীকে মুক্ত বা স্বাধীন মুশরিক নারীর চেয়েও মর্যাদাশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন: 

আর তোমরা মুশরিক  নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরিক  নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও মুশরিক নারীকে তোমাদের কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য বেশি ভালো লাগতেও পারে। এবং তোমরা নারীরা কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা বাহ্যিক রূপের কারণে মুশরিকদের দেখে মোহিত হতেও পার।

যে নারী ধর্মীয় জ্ঞান ও যোগ্যতায় যত বেশি অগ্রসর হবেন তার সন্তানও হবে তত বেশি যোগ্য ও সুশিক্ষিত। সুরা তাহরিমের ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ।-

নারী জাতির মধ্যে রয়েছেন এমন মহীয়সী ব্যক্তিত্ব যারা কেবল নারী জাতির জন্য নন, বরং পুরো বিশ্বাসী বা ঈমানদার মানব সমাজের জন্য নেতৃস্থানীয় আদর্শ। পবিত্র কুরআনে 'নারী' বা নিসা নামের একটি বিশাল সুরা রয়েছে। অথচ পুরুষ নামের কোনো সুরা নেই।   এ ছাড়াও মহীয়সী নারী হযরত মারিয়ামের নামে নামকরণ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনের একটি সুরার।  ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আসিয়া ও ইমরানের কন্যা মারিয়াম- এ দুইজনের মাঝে গোটা মুমিন সমাজের জন্য আদর্শ রয়েছে বলে পবিত্র কুরআন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। 

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে আদর্শ মা বা যোগ্য নারী তারা যারা পারিবারিক দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তারা স্বামীদের অনুপস্থিতিতে তাদের সম্পদ ও অধিকার রক্ষা করেন। 

মহীয়সী নারী হযরত মারিয়ামের নামে নামকরণ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনের একটি সুরার

 

মানব-ইতিহাসে এমন অনেক নারী দেখা যায় যারা স্বামীর জুলুম ও খোদাদ্রোহিতার মোকাবেলায় ঈমান আর সত্য ও ন্যায়ের পথ বেছে নিয়ে তাতে অবিচল থেকেছেন এবং স্বামীকে সুপথে আনার জন্য শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরেছেন। এমনই একজন মহীয়সী নারী হলেন ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া-আ.। সুরা তাহরিমের ১১ নম্বর আয়াতে আসিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে:

আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বলল: হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন। 

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে লজ্জা হচ্ছে নারীর প্রধান ভূষণ। পুরুষের মত নারীর চারিত্রিক পবিত্রতাও সমাজের জন্য খুবই জরুরি। কোনো জাতির নারী ও পুরুষ যদি নীতি-নৈতিকতাবিহীন বা চরিত্রহীন হয়ে পড়ে তাহলে সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য। পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাস-এর ২৫ নম্বর আয়াতে হযরত মুসা নবীর হবু স্ত্রী তথা হযরত শোয়াইব (আ)'র দুই কন্যার একজন সম্পর্কে বলা হয়েছে: অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন সর্বোচ্চ লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করল।

পবিত্র কুরআন নারীদেরকে তাদের আকর্ষণ, রূপ বা সাজ-সজ্জা পরপুরুষের কাছে তুলে ধরতে নিষেধ করে। এ ধরনের রূপ প্রদর্শন নারীর ব্যক্তিত্ব ও সম্মানের জন্য ক্ষতিকর। নারীকে সম্মান করতে হবে তার মানবীয় গুণ, যোগ্যতা ও খোদাভীতির জন্য। কিন্তু নারীর অধিকার ও সম্মানের সঙ্গে তার বাহ্যিক রূপ বা চাকচিক্যময় বেশভূষার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সুরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- জাহেলি বা মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।