গল্প ও প্রবাদের গল্প:
কাঁকড়া ও কচ্ছপের গল্প
প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের কালজয়ী গল্পের পসরা গল্প ও প্রবাদের গল্পের আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি প্রাচীন গল্প। গল্পটি এরকম:
একটি কচ্ছপ তার মাথা গুটিয়ে নিয়ে ঝিম মেরে পড়ে ছিল। মনটা তার ভীষণ রকম খারাপ। বুঝতে পারছিলো না এই বিপদাপদের মধ্যে কী করবে সে। কীভাবে সে সাপের সাথে লড়বে তার ডিম খেয়ে ফেলার প্রতিশোধ নেবে! কচ্ছপের এক প্রতিবেশি ছিল-কাঁকড়া। সে তো নিকটেই, পানির ভেতর গর্তে বসবাস করতো। কচ্ছপের কান্না আর আর্তচীৎকার শুনে মাথাটা পানির ভেতর থেকে বের করে ধীরে ধীরে কচ্ছপের কাছে গেল।
কাছে গিয়ে কচ্ছপের পিঠে টোকা মেরে বললো: প্রিয় প্রতিবেশি আমার! সালাম! জেগে আছো তো! কচ্ছপ তার খোলসের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে এনে সালামের জবাব দিয়ে বললো: হুমম! জেগেই আছি। তবে যদি ঘুমে থাকতাম এবং এসব বিপদাপদ স্বপ্নের ভেতর দেখতাম তাহলে ভালোই হতো। কাঁকড়া বললো: কেন কী হয়েছে তোমার! কেন এরকম বিরক্ত তুমি? কান্নার আওয়াজও শুনতে পেলাম! কচ্ছপ বললো: তোমাকে বলে আর কী হবে। কী-ইবা করতে পারবে তুমি। কাঁকড়া বললো: হতেও তো পারে তোমাকে সাহায্য করতে পারবো! তাছাড়া পারি আর না পারি প্রতিবেশি যেহেতু চেষ্টা তো করতে পারি। নৈলে প্রতিবেশি হয়ে লাভ কী? কচ্ছপ এবার মুখ খুললো।
কচ্ছপ বললো: ওই অভিশপ্ত সাপের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে গেছি। আমি পাগল হয়ে যাবো। ওই সাপ আবারও আমার সব ডিম খেয়ে ফেলেছে। আমি তো তার সঙ্গে পেরে উঠি না। সহ্যও করতে পারছি না। কীভাবে যে কী করবো বুঝতে পারছি না। আমার চোখের সামনে আমার সবগুলো ডিম একটা একটা করে খেয়ে গেল-কিছুই করতে পারলাম না। কান্নারত কচ্ছপের কথাগুলো শুনে কাঁকড়ার খুব খারাপ লাগলো। তোমার কষ্টটা আমি বুঝি। অনেক কষ্টের ব্যাপার। কান্না কিংবা চীৎকার করার অধিকার তোমার আছে। তবে আমার মনে হয় কান্নাকাটি আর চীৎকার করে কোনো লাভ হবে না। তোমার বাচ্চাদের তো আর ফিরে পাবে না কিংবা তোমার কষ্টও লাঘব হবে না। আমি এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার একটা বুদ্ধি তোমাকে দেবো।
আমার বুদ্ধিটা কাজে লাগালে চিরদিনের জন্য তুমি সাপের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। নিশ্চিন্তে, উদ্বেগহীনভাবে তুমি তোমার জীবন কাটাতে পারবে বলে আশা করি। কচ্ছপ কাঁকড়ার কথা শুনেই ভীষণ খুশি হয়ে গেল। বললো: কীভাবে? কাঁকড়া বললো: আমাদের পাশেই একটা বেজি একাকি বাস করে। আমি তাকে চিনি। জানোই তো বেজি হলো সাপের শত্রু এবং মাছ খেতে ভালোবাসে। আলহামদুলিল্লাহ! এখানে মাছও আছে প্রচুর। তোমার শুধু যে কাজটি করতে হবে তা হলো বড় বড় কয়েকটা মাছ ধরবে। তারপর বেজির বাসার সামনে থেকে সেগুলোকে একটু দূরত্বে একটা একটা করে রেখে দেবে একেবারে সাপের গর্ত পর্যন্ত।
কাঁকড়ার বুদ্ধিটা শেষ হয় নি। সে বলছিল: বেজি যখনই মাছের ঘ্রাণ পাবে তখনই গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে মাছ খেতে খেতে সাপের গর্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। সাপের সঙ্গে মুখোমুখি হলেই কাজ সারা হয়ে যাবে। একদিকে বেজি পেট পুরে মাছ খেয়ে সাপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। অপরদিকে তুমিও সাপের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে। কচ্ছপ খুশি হয়ে গেল। হেসে দিলো সে এবং কাঁকড়ার জন্য দোয়া করলো। কাঁকড়া বিদায় নেওয়ার সময় বললো: এক্ষুণি কাজ শুরু করে দাও! সাপ ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার কাছে আসার আগেই সাপটির কাজ সারা করে ফেলো। কচ্ছপ দ্রুত চলে গেল পানির দিকে। পানিতে নামবার আগ-মুর্হর্তে কাঁকড়াকে জিজ্ঞেস করলো: বললে না তো বেজির বাসাটা কোথায়!
কাঁকড়া ঘাড় ফিরিয়ে বললো: ওই বড় টিলাটির পেছনে। সেখানে সহজেই তাকে খুঁজে পাবে। কচ্ছপ তার কাজে লেগে গেল। প্রচুর মাছ ধরলো এবং সহজেই বেজির বাসা খুঁজে পেলো। কাঁকড়ার কথামতো বেজির বাসা পর্যন্ত মাছগুলো বিছিয়ে দিলো। তারপর এক কোণে চুপ করে লুকিয়ে রইলো। বেজি মাছের গন্ধ পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো গর্ত থেকে। বেরিয়ে বাসার মুখে বিরাট মাছ দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেল। শুরু করে দিলো আহার। প্রথমটি খাওয়ার পর তার নজরে পড়লো দ্বিতীয়টি। দ্বিতীয়টি খাওয়ার পর তৃতীয়টি। এভাবে একের পর এক মাছ খেতে খেতে পৌঁছে গেল সাপের গর্ত পর্যন্ত। শেষ মাছটি খাওয়ার জন্য গেলে সাপ বেরিয়ে এলো গর্ত থেকে।
সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে এলে বেজির চোখে পড়লো এবং শুরু হয়ে গেল সাপ-নেউলের যুদ্ধ। কচ্ছপ লুকিয়ে লুকিয়ে সেই যুদ্ধ দেখতে লাগলো আর দোয়া করতে লাগলো যেন বেজি সাপটাকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। অবশেষে তাই হলো। সাপ মারা গেল। বেজি শেষ মাছটিও খেলো এবং তার বাসায় ফিরে গেল। বেজি চলে যাবার পর কচ্ছপ সাপের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হলো এবং নিজের ডেমের কাছে ফিরে গেল। মাটির ভেতর থেকে ডিমগুলোকে বের করে আনলো। নিশ্চিন্তমনে বসবাস করতে লাগলো।
বেজি পরদিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো মাছের আশায়। কিন্তু মাছ পেল না। আগের দিনের মতো সাপের গর্ত পর্যন্ত গিয়েও কিছুই দেখতে পেল না-না মাছ, না সাপ। ব্যর্থ মনে ফিরতে গিয়ে কচ্ছপ আর তার ডিম দেখতে পেল। কচ্ছপ দ্রুত দৌড়ে গেল ঠিকই কিন্তু বেজির আগে পৌঁছতে পারলো না। বেজি সবগুলো ডিম খেয়ে ফেললো। কচ্ছপ কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হলো না। বেজি প্রতিদিনই সেখানে ডিমের সন্ধানে আসতে লাগলো। বেচারা গর্ত থেকে কোনোমতে বেঁচে গিয়ে পুকুরে পড়ে গেল।#
পার্সটুডে/এনএম/১৬/৬২
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ