এপ্রিল ১৭, ২০২৩ ১৪:৩৭ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের কালজয়ী গল্পের পসরা গল্প ও প্রবাদের গল্পের আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি প্রাচীন প্রবাদের গল্প। গল্পটি এরকম: 

এক লোকের খুব ইচ্ছে করতো খান বা অভিজাতদের মতো জীবনযাপন করবে। কিন্তু খানদের তো অনেক টাকা-পয়সা, শরিফদেরও। তার তো কোনো টাকা-পয়সা নাই। না অন্য কোনো সহায় সম্পদ, বিত্ত-বৈভব। এমনকি গরু-ছাগল, ভেড়া আর চাকর-বাকর কিছুই ছিল না তার। লোকটা পয়সা বাঁচিয়ে চলতো যেন কিছু জমাতে পারে। কিন্তু বেচারা সবসময়ই ঋণী থাকতো মানুষের কাছে। এভাবেই একদিন এই গেঁয়ো লোকটি শহরে গেল কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করার জন্য। বিক্রি করে কিছু পয়সা হাতে পেলো। 

আবার গ্রামের দিকে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়ে গেল তার সামনে চমৎকার একটি ফলের দোকান। বিশেষ করে টসটসে রসালো একটি খরবুজা তার জিহ্বায় রস নিয়ে এলো। চোখ ফেরাতে পারছিলো না সে। মনে মনে বললো: ইসসসস যদি একটু বেশি টাকা থাকতো তাহলে একটা খরবুজা কিনে মনের আশ পূরণ করতাম। কিন্তু কী আর করা। ক্ষুধা মেটানোর জন্য সামান্য দুপুরের খাবার কেনা ছাড়া আর উপায় কী! সেটাই যথেষ্ট। খামোখা টাকা খরচ করে কাজ কী। গ্রামের কয়েকজন লোক ওই ফলের দোকানের সামনে দিয়ে চলে গেল। কয়েক কদম মাত্র পার হলো তারা। কিন্তু খরবুজা খাওয়ার ইচ্ছে এই লোকটিকে আর সামনে এগুতে দিলো না। মনে মনে বললো: দুপুরের খাবার না কিনে একটা খরবুজা কিনলেই তো হয়। খেয়ে পেটও ভরবে, দুপুরের খাবারও আর কিনতে হবে না। 

লোকটি শেষ পর্যন্ত খরবুজা কিনলো এবং বাড়ির পথে পা বাড়ালো। যেতে যেতে শহরের বাইরে চলে গেল। একটা গাছের নীচে ছায়ায় বসে পড়লো। খরবুজাটা কেটে খেতে শুরু করলো। খরবুজা খেতে খেতে বললো চামড়াটা বেশি কামড়ে খাবো না যাতে এদিক দিয়ে কেউ যাবার সময় খরবুজার চামড়া দেখে বলে: এখান দিয়ে কোনো এক খান গেছে। ওই খান খরবুজাও খেয়েছে কিন্তু চামড়া ফেলে রেখে গেছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো খানের মতো মাথা উঁচু করে হাঁটবে। কিন্তু খিদে তাকে সেই সুযোগ দিলো না। পুরো খরবুজা খাবার পরও খিদে রয়ে গেল। তাই ভাবলো চামড়াও ভালো করে খুঁটে খুঁটে খাবে। কেবল বিচি আর শক্ত চামড়াটা ফেলে রেখে যাবে। 

তখন যে-কেউ এদিক দিয়ে যাবে, বলবে: কোনো এক খান এদিকে গেছে, খরবুজাও খেয়েছে আবার চামড়াটাও দিয়েছে তার চাকরকে খাবার জন্য, এটাই ভালো হবে। এভাবে ভাবতে ভাবতে গ্রামীণ লোকটি খরবুজার চামড়ায় লেগে থাকা অংশটুকুও ভালোভাবে খেয়ে ফেললো। শুধু বীচিগুলো নীচে ফেললো। বীচির দিকে তাকিয়ে বললো: এগুলোই যথেষ্ট। যে-ই এগুলো দেখবে, বলবে: কোনো এক ধনী খান এদিক দিয়ে গেছে। খরবুজাও খেয়েছে আর চামড়াটা তার চাকরকে দিয়েছে। চাকর চুষেবুষে খাবার পর গাধাকে খেতে দিয়েছে। বাহ! কী ধনি খান! চাকরও আছে, গাধাও আছে তার! মনে মনে হামবড়া একটা ভাব নিয়ে তৃপ্তি সহকারে পুরো খরবুজাটাই একাকি খেলো গ্রামীণ ভদ্রলোক। পুরো খরবুজাটি চামড়ায় লেগে থাকা অংশসহ পেট ভরে খেলো আর মনে মনে গল্প ফাঁদলো যে কেউ এদিক দিয়ে যাবার সময় খরবুজার বীচি দেখে ভাববে: কোনো এক ধনী খান এদিক দিয়ে গেছে। খরবুজাও খেয়েছে আর চামড়াটা তার চাকরকে দিয়েছে। চাকর চুষেবুষে চামড়ায় লেগে থাকা অংশটুকু খাবার পর বাকিটা গাধাকে খেতে দিয়েছে। বাহ! কী ধনি খান! চাকরও আছে, গাধাও আছে তার! ভাবতে ভাবতে খরবুজার চামড়া খাওয়াও শেষ হলো তার। এখন বাকি রইলো সে আর খরবুজার বীচি। বীচিগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বেচারা। সেগুলো ফেলে যেতে মন মানছিল না। কিন্তু বীচি খাওয়ার কোনো বাহানাও খুঁজে পাচ্ছিলো না।

অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে উঠে দাঁড়াতে হলো এবং পথে পা বাড়াতে হলো। কয়েক কদম মাত্র গিয়েই আবার ফিরে এলো। বললো: নাহ, খরবুজার বীচিগুলোও ফেলে রেখে যেতে পারবো না। কিন্তু বীচি তো খেতেও পারবো না! মানুষ কী ভাববে? তারা কি বলবে না-এটা কীরকম খান যে খরবুজার বীচিগুলোর লোভও সামলাতে পারলো না! এসব ভেবে লোকটা আবারও পথে পা বাড়ালো। সামান্য পথ গিয়েই ভাবতে লাগলো: খরবুজার বীচিগুলো রেখে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হয়েছে। খানের মতো ভাবসাব নিয়ে পা বাড়ালো সামনে। মনে মনে অনুভব করলো: হেঁটে যাচ্ছে না সে। যে গাধার পিঠে চড়ে খরবুজার চামড়া চেটে খেয়েছে সেই গাধার পিঠে চড়েই যাচ্ছে। আর তার চাকর যে-কিনা খরবুজার চামড়ায় লেগে থাকা অংশটুকু চেটেপুটে খেয়েছে তার হাতে গাধার রশি। কিন্তু ওই চিন্তা তার বেশিক্ষণ ছিল না। হঠাৎ করেই গ্রামীণ ভদ্রলোক দৌড়ে ফিরে গেল গাছের নীচের খরবুজার বীচির কাছে। তাড়াতাড়ি খরবুজার বীচিগুলো কুড়িয়ে নিলো এবং মজা করে বীচি খেতে শুরু করে দিলো। বীচিগুলো খেয়েদেয়ে বললো: যাক বাবা, শান্তি পেলাম! এখানে 'কোনো খান আসেও নি, যায়ও নি'। এদিক দিয়ে কোনো খানই যাওয়া-আসা করে নি, খরবুজা খাওয়া তো দূরেরই কথা। এই ঘটনার পর থেকে যখনই কেউ কোনো কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে অনুতপ্ত হয়, তখনই বলে: 'কোনো খান আসেও নি, যায়ও নি'।#

পার্সটুডে/এনএম/১৭/৬৩

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ