মে ০৮, ২০২৩ ১৭:২৬ Asia/Dhaka

সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা! (গিরিশ চন্দ্র ঘোষ)

ইতিবাচক ও  যৌক্তিক আশাবাদী মনোভাব জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই আসুন জীবনকে দুঃখবাদী মনোভাব নিয়ে না দেখে আশাবাদ ও আত্মবিশ্বাসের চশমা দিয়ে দেখি। মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে ঘরগুলোকে করুন আলোকিত, আনন্দিত ও হিরণ্ময়। 

মানুষের ব্যক্তিত্বের উন্নয়নের বা মানবীয় পূর্ণতার তিনটি চাবিকাঠি রয়েছে: প্রথমত ব্যক্তিগত চাবিকাঠি, দ্বিতীয়ত পারিবারিক চাবিকাঠি ও তৃতীয়ত সামাজিক চাবিকাঠি। তবে এই তিন চাবিকাঠি বা প্রভাবকের মধ্যে পারিবারিক প্রভাবকের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বা ফলদায়ক। শিশুর আত্মপরিচিতি ও উন্নতি নির্ভর করে পারিবারিক সুসম্পর্ক এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর। পারিবারিক পরিবেশ যদি সুস্থ ও উন্নত হয় তাহলে শিশু আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল, দয়ালু, ত্যাগী, সহনশীল তথা সুস্থ ব্যক্তিত্ব নিয়ে বড় হবে। অন্যথায় শিশু হবে অনগ্রসর ও অস্বাভাবিক চরিত্রের অধিকারী। তাই উপযুক্ত বা সুস্থ ব্যক্তিত্বের ভিত্তি গড়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল শৈশব। 

মহানবীর আহলে বাইতের সদস্য ইমাম সাজ্জাদ (আ) বলেছেন, 'শিশুর যত্ন বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বড়দের দায়িত্ব হল আচার-আচরণে তাকে সুশীলভাবে গড়ে তোলা, তাকে তার প্রভুর দিকে গাইড করা যাতে সে আল্লাহর অনুগত হয় এবং আপনার প্রতি ও তার নিজের প্রতি নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে তাকে গাইড করা বা সহায়তা দেয়া।' 

মানুষের সব প্রাথমিক ও মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর কেন্দ্র হল পরিবার। পরিবার হল শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশিক্ষণ ও মানবীয় উন্নয়ন বা মানুষের নানা প্রতিভা বিকাশের কেন্দ্রস্থল। উন্নত পরিবার হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের মানসিক প্রশান্তির আশ্রয়। আর পরিবার গঠনের জন্য নারী ও পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থাও জরুরি বা অপরিহার্য। উন্নত পরিবার ও উন্নত প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে বিয়ের জন্য বাছাই করতে হবে যোগ্য স্বামী বা স্ত্রী। মহানবী (সা) বলেছেন, উপযুক্ত বা যোগ্য স্ত্রী থাকার ওপর নির্ভর করে পুরুষের সৌভাগ্য।  

উপযুক্ত বা সুস্থ ব্যক্তিত্বের ভিত্তি গড়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল শৈশব

গত পর্বের আলোচনায় আমরা পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত চার ধরনের পরিবারের কথা জেনেছি।  যেমন, ভালো স্বামী ও ভালো স্ত্রী, মন্দ স্বামী ও ভালো স্ত্রী, মন্দ স্ত্রী ও ভালো স্বামী এবং স্বামী ও স্ত্রীর দু'জনেরই মন্দ হওয়া।  পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে পরিবার বিষয়ে মানুষের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। যেমন সুরা তুরের ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ধার্মিক বা খোদাভীরু পুরুষেরা তাদের পরিবারের বিষয়ে সচেতন, উদাসীন নন।  মুমিন ব্যক্তিরা পারিবারিক পরিবেশকে সব ধরনের নোংরা বিষয় ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখেন। পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে তারা সতর্ক। সুরা তাহরিমের ষষ্ঠ আয়াতের একাংশে বলা হয়েছে: তোমরা নিজেকে ও নিজ পরিবারকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর। 

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত আবু লাহাবের পরিবার ছিল পথভ্রষ্ট পরিবার। এ পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী দু'জনই ছিল নোংরা স্বভাব ও চিন্তায় পরস্পরের সহযোগী। আবু লাহাব মহানবীর নয়জন চাচার অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও সে ছিল রাসুল, ইসলাম ও মুসলমানদের অন্যতম প্রধান শত্রু।  মক্কার দুর্নীতিবাজ ও মুশরিক কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে থেকে সে তাদেরই স্বভাব ও নীতির অনুসারী হয়। ভাতিজা মহানবীর প্রতি তার হিংসা, বেয়াদবি, উপদ্রব, হিংস্রতা ও দাম্ভিকতা ছিল মক্কার অন্য যে কোনো মুশরিকের চেয়েও বেশি। তার স্ত্রী উম্মে জামিলও ছিল একই ধরনের। তাদের ঘর ছিল মহানবীর ঘরের পাশেই। মহানবীর ব্যাপারে স্বামীর কাছ থেকে শোনা নানা তথ্য সে পাচার করত মুশরিকদের কাছে। উম্মে জামিল মহানবীর ওপর উপদ্রব বাড়িয়ে দিতে নিজ স্বামীকে বাধ্য করতেন। মহানবীকে দেখলে সে সরাসরি গালিগালাজ করতেও কুণ্ঠিত হত না। মহানবী ও মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য এই নারী পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। জ্বালানী কাঠ আনার জন্য সে খেজুর গাছের রশি দিয়ে কাঠের আঁটি বেঁধে তা কাঁধে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখত। আবু লাহাবও মহানবীকে দেখলে তাঁর পিছু নিয়ে তাঁর দিকে মাটি ও পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করত।

আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর মন্দ কাজ তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে নাজিল হয়েছে ছোট্ট একটি সুরা। এ সুরার নাম সুরা লাহাব বা সুরা আলমাসাদ।  এ সুরায় বলা হয়েছে: আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে, কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে। শিগগিরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বা জ্বালানী বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।–

হযরত আলী (আ) বলতেন: আমি যখনই ফাতিমার দিকে তাকাতাম তখনই আমার সব দুঃখ-বেদনা দূর হয়ে যেত

স্বামী ও স্ত্রীর দু'জনেরই ভালো হওয়া পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত চতুর্থ ধরনের পরিবার। যেমন, হযরত ফাতিমা জাহরা (সা) ও হযরত আলীর পরিবার। যুব দম্পতিরা এই পরিবার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ পরিবারের বুনিয়াদকে শক্ত করতে পারেন। একজন ভালো স্বামী ও স্ত্রীর উচিত পরস্পরের সঙ্গে খুব আন্তরিকতা ও অনুরাগ নিয়ে কথা বলা। হযরত ফাতিমা (সা.আ) স্বামী আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীকে উদ্দেশ করে বলতেন: আমার আত্মা আপনার আত্মার জন্য কুরবানি হোক এবং আমার প্রাণ আপনার প্রাণের জন্য বর্ম হোক।  অন্যদিকে হযরত আলী (আ) বলতেন: আমি যখনই ফাতিমার দিকে তাকাতাম তখনই আমার সব দুঃখ-বেদনা দূর হয়ে যেত।  তাঁদের সমধর্মী চিন্তা ও সহযোগিতার বিষয়টি সুরা দাহির-এর কয়েকটি আয়াতে এসেছে। 

নৈতিকতা যে কোনো পরিবারের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক মূল্যবোধগুলো পালন করা ছাড়া পরিবারের সদস্যরা পরস্পর থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন না!  

একজন গণিতবিদ স্বামী ও স্ত্রীর নৈতিক গুণ থাকার বিষয়ে বলেছেন,   স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই যদি নৈতিকতা মেনে চলেন তাহলে তাদের সমীকরণ হবে ১=১। এ ছাড়াও তারা যদি দেখতেও সুন্দর হন তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে দশ। একইসঙ্গে অর্থও থাকলে তাদের পয়েন্ট হবে একশত (১০০)। তারা যদি ভালো বংশেরও অধিকারী হন তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে মোট এক হাজার। কিন্তু তাদের যখন কোনো নৈতিক চরিত্র বা গুণ থাকবে না তখন তারা হবেন শূন্য পয়েন্টের অধিকারী। আর আমরা জানি যে কেবল শূন্য সংখ্যা একাকি কোনো গুরুত্ব রাখে না। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ