হাদিসে কিসায় উল্লেখিত পাঁচ ব্যক্তি ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি
সুখের নীড় -৪০( হাদিসে কিসার কাহিনী এবং হযরত আলী ও ফাতিমা)
মহামানবদের পারিবারিক জীবনে রয়েছে পারিবারিক বিষয়ে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম অনুকরণীয় আদর্শ।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) ও হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহ আলাইহা) ছিলেন এমনই এক আদর্শ পরিবার যার প্রশংসা এসেছে পবিত্র কুরআনে। তাঁদের পারিবারিক আচরণে রয়েছে নম্রতা ও শিষ্ঠার অনন্য শিক্ষা। মহানবীর (সা) সঙ্গে হযরত ফাতিমার ছিল আন্তরিক স্নেহ ও গভীর অনুরাগের সম্পর্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিনম্রতার কোনো ঘাটতি কখনও হযরত ফাতিমার মধ্যে দেখা যায়নি। যখন পবিত্র কুরআনে এ আয়াত নাজিল হয় যে মহানবীকে তাঁর নাম ধরে ডাকা যাবে না তখন হযরত ফাতিমাও মহানবীর অনন্য সুউচ্চ মর্যাদার কথা ভেবে তাঁকে হে পিতা বলে সম্বোধন না করে 'হে আল্লাহর রাসুল' বলে সম্বোধন করতে থাকেন। কিন্তু কয়েকবার এভাবে ডাকার পরও হযরত ফাতিমা বাবার কাছে কোনো জবাব পেলেন না! মহানবী (সা) নিজেই এ বিষয়ে বলেন, হে আমার কন্যা! এই আয়াত তোমার ও তোমার বংশধরদের জন্য নাজিল হয়নি। তুমি আমা থেকে ও আমি তোমা থেকে! ... তুমি আমাকে 'হে পিতা' বলেই ডাকো! কারণ তোমার এই ডাক আমার হৃদয়ের জন্য বেশি প্রিয় ও আল্লাহর কাছেও বেশি সন্তোষজনক!
মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের অনুরাগী ও অনুসারীদের মধ্যে হাদিসে কিসা নামে একটি হাদিস বহুল প্রচলিত। এ হাদিসে মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। কিসা বা চাদরের ঘটনাটি ঘটেছিল মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমার ঘরে। সংক্ষেপে উক্ত ঘটনাটি হল: মহানবী (সা.) হযরত ফাতিমাকে ডেকে তাঁর মাধ্যমে একটি চাদর আনিয়ে প্রথমে নিজেকে তাতে আবৃত করেন এরপর একে একে হযরত হাসান ও হুসাইনকে এবং হযরত আলীকে ও সবশেষে হযরত ফাতিমাকেও তাঁদের পৃথক পৃথক আবেদনের প্রেক্ষাপটে ওই একই চাদরের নিচে ঢেকে নেন। এরপর মহানবী (সা) বলেন : হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। অতএব, তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর। তখন উম্মে সালামা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেন, তুমি স্বস্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ সুরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াত নাজিল করে বলেছেন: হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ণ পবিত্রকরণের মাধ্যমে।
হাদিসে কিসায় উল্লেখিত পাঁচ ব্যক্তি ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কারণ ইসলামের ভাগ্য নির্ধারণে তাঁদের ভূমিকা অন্য সবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তাঁরা একই পরিবারের সদস্য। এই হাদিস পারিবারিক সদস্যদের পারস্পরিক আদব-কায়দা ও নম্রতাও তুলে ধরে। এখানে হযরত ফাতিমা (সা.আ) দুই প্রজন্মের সেতু-বন্ধন। তিনি একদিকে স্ত্রী, বাবারও মাতৃ-সদৃশ ও অন্যদিকে নিজ সন্তানদেরও মাতা। এখানে মহানবী –সা. এই পাঁচজনের মধ্যে একজন নানা, শশুর এবং ভ্রাতা ও পিতা হিসেবে স্নেহ ও অনুরাগের জন্যই বিশেষভাবে প্রশংসিত, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মর্যাদাসহ অন্যান্য মহা-মর্যাদাগুলোর জন্য নন! হাদিসে কিসায় ব্যবহৃত সম্বোধনগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুরাগ ও মমতার গভীর প্রকাশ! যেমন, হযরত ফাতিমা সন্তানকে বলছেন: হে পুত্র আমার! বা চোখের আলো! হৃদয়ের ফল। আর মহানবী নিজ নাতিকে বলছেন, পুত্র আমার, উম্মতের শাফায়াতকারী এবং জামাতা আলীকে বলছেন, আমার ভাই, আমার প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত এবং আমার পতাকাধারী ইত্যাদি অভিধায়! কন্যাকে বলছেন, কন্যা আমার! আমার দেহের অংশ! এ ছাড়াও তিনি মহান আল্লাহকে বলছেন: এদের শরীরের গোশত হচ্ছে আমার গোশত ও এদের রক্ত হচ্ছে আমার রক্ত!
মহানবীর পবিত্র পরিবারে পুরুষের একক কর্তৃত্ব বা কর্তৃত্বকামিতা নেই। গৃহকর্তা গৃহকর্তৃীকে আগে সালাম দিচ্ছেন ও পরে ঘরে ঢুকছেন! পিতামহ কন্যাকে নিজের দেহের অংশ বলে উল্লেখ করছেন! এটা ঘটলো এমন সমাজে যেখানে তখনও নির্দয় পিতারা কন্যাদের জীবন্ত কবর দিত! এই মহান পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিনম্রতা প্রকাশও লক্ষ্যণীয়। নানার কাছে যেতে শিশু হাসান ও হুসাইন অনুমতি নিচ্ছেন। কন্যা ও জামাতা গৃহিণী ও গৃহকর্তা হওয়া সত্ত্বেও মহানবীর কাছে আসতে অনুমতি নিয়ে শ্রদ্ধা ও ভদ্রতার বিশেষ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যে পরিবারে এমন শ্রদ্ধা ও নম্র আচরণের চর্চা থাকবে সেখানে কোনো কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত বা হুমকিগ্রস্ত হয় না! এসব বিষয় পরিবারকে করে মজবুত এবং সমাজও এমন সুস্থ ও নৈতিকতার গুণে সজ্জিত ব্যক্তিদের মাধ্যম হয় সমৃদ্ধ ।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী –আ. বলেছেন, দুনিয়া হচ্ছে দুই দিনের। একদিন তা তোমার পক্ষে ও অন্যদিন তা তোমার বিপক্ষে! যে দিনটি তোমার পক্ষে সেদিনের জন্য অহংকারী হয়ো না, আর যেদিনটি তোমার বিপক্ষে সেদিনের জন্য হতাশ হয়ো না! কারণ এ দুই দিনেরই অবসান ঘটবে।
আপনি সন্তানকে নিয়ে যখন পথে হাঁটছেন তখন মাঝে মধ্যে পথের দিকে নিজেকে ঝুঁকিয়ে পাথর বা বিপজ্জনক জিনিষগুলো সরিয়ে দিন। শিশু যদি এ বিষয়ে প্রশ্ন করে তাহলে তাকে ব্যাখ্যা দিন যে কেউ যাতে হোঁচট না খায় সে জন্যই এটা করছি! আপনি এটাও বলুন যে পথিকেরা কখনও হয়তো জানবে না যে পথ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ইট বা পাথর ও তাই কেউ ধন্যবাদও জানাবে না! কিন্তু ধন্যবাদ পাওয়ার জন্যই তো সব কাজ করতে হয় না! কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই দয়া প্রদর্শনের অভ্যাস গড়ুন ও সন্তানদেরকেও তা শেখান। তা না হলে দেখা যাবে অন্যদের ভালো কাজের প্রত্যাশায় বসে থেকে আপনার দিন চলে যাবে বছরের পর বছর, কিন্তু আপনি নিজে ভালো কাজে শরিক হচ্ছেন না।
মাঝে মধ্যে বয়স্ক বা বৃদ্ধ আত্মীয়ের কার্পেটের নিচে গোপনে কিছু টাকা রেখে আসুন যাতে তিনি কখনও জানতে না পারেন যে আপনিই ওখানে টাকা রেখেছেন! অবশ্য ব্যাপারটি আপনার সন্তানকে জানান যাতে তারা শিখতে পারে যে কিভাবে গোপনেও দান করা যায় ধন্যবাদ লাভের কোনো প্রত্যাশা না রেখেই! কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কেবল আমার সন্তুষ্টির জন্যই দান কর! আসলে মানুষের হৃদয়গুলো এ ধরনের উদার ভালোবাসারই মুখাপেক্ষী!#
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।